২০২০ সালে আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে বাংলাদেশ। রাতারাতি তারকা বনে যান দলটির ক্রিকেটাররা। এরপর থেকেই যুবা টাইগারদের নিয়ে মানুষের আগ্রহ বেড়ে যায়। তাইতো সম্প্রতি শেষ হওয়া যুব বিশ্বকাপে সবার প্রত্যাশা ছিল আবারও শিরোপা জয়ের। কিন্তু এবার সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। তবে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে নজর কেড়েছেন পেস বোলিং অলরাউন্ডার রিপন মণ্ডল।
গাজিপুরের এই সন্তান টুর্নামেন্টে ৬ ম্যাচে নিয়েছেন ১৪ উইকেট। হয়েছেন চতুর্থ সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী বোলার। সেই সুবাদে জায়গা পেয়েছেন আইসিসির আসর সেরা একাদশেও। বর্তমানে নিজের বাড়িতে আছেন এই তরুণ। সেখান থেকে ফোনে ইত্তেফাক অনলাইনকে দিয়েছেন একান্ত সাক্ষাৎকার। কথা বলেছেন নিজের পারফরম্যান্স, ক্রিকেটে উঠে আসার গল্প ও ভবিষ্যতের পরিকল্পনা নিয়ে।
প্রশ্ন: কেমন আছেন? কোথায় আছেন এখন?
রিপন: আছি, আলহামদুলিল্লাহ ভালো। বাসাতেই আছি, গাজিপুর।
প্রশ্ন: ক্রিকেটের শুরুটা কীভাবে হয়েছে? অনূর্ধ্ব-১৯ দলে আসার গল্পটা যদি বলতেন
রিপন: ছোটবেলায় টেপ টেনিস দিয়েই শুরু। শরিফুল ইসলাম নামের এক বড় ভাই আমাকে একদিন বললো, তুই কোনো একাডেমিতে ভর্তি হয়ে যা। তোর জন্য ভালো হবে। ওইখান থেকে ২০১৫ সালে ঢাকার মহাখালীর গ্লোবাল ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি হই। সেখানে ভর্তি হওয়ার পর ওই বছর আমি তৃতীয় বিভাগ খেলি। তবে সেবার কোনো ম্যাচ খেলা হয়নি। সম্ভবত ২০১৬-২০১৭ সালে ঢাকা লিগ (তৃতীয় বিভাগ) হয়, সেখানে ৬ ম্যাচে ১৮ উইকেট পাই।
আমার কোচ মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু ও শাহিন স্যারদের ফাস্ট ডিভিশন টিম ছিল, সূর্যকরণ। পরের বছর ওইখানে খেলে আমি ১২ ম্যাচে ২৭ উইকেট শিকার করি। পরবর্তীতে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে সুযোগ পেতে নাদিফ চৌধুরী স্যার আমাকে অনেক সহায়তা করেন।
প্রশ্ন: ক্রিকেটে আসার ক্ষেত্রে পরিবারের সমর্থন কেমন ছিল? পড়াশোনা কতদূর?
রিপন: বাবা-মার একমাত্র সন্তান। পরিবার থেকে সবসময় সমর্থন পেয়েছি। আর পড়াশোনার কথা বলতে গেলে… এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলাম। কিন্তু খেলার জন্য পরীক্ষা দিতে পারিনি। আপাতত পড়াশোনা বন্ধ রয়েছে। ভাবছি আবারও ভর্তি হবো।
প্রশ্ন: জাতীয় দল ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিয়ে কোনো স্বপ্ন, কী ভাবছেন এখন?
রিপন: প্রতিটি খেলোয়াড়ের স্বপ্ন থাকে জাতীয় দলে হয়ে খেলার। সুযোগ পেলে আমি কাজে লাগাতে চেষ্টা করবো। তবে ধাপে ধাপে এগোতে চাই। সামনে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ আছে। সেটা নিয়েই আপাতত ভাবছি।
প্রশ্ন: আইসিসির যুব বিশ্বকাপের সেরা একাদশে সুযোগ পেয়েছেন। এটা নিয়ে আপনার অনুভূতি যদি একটু বলতেন
রিপন: আইসিসির যেকোনো ইভেন্টে সেরাদের মধ্যে জায়গা পেলে সবারই ভালো লাগে। আমি যখন দেশে ফেরার পথে বিমানবন্দরে নামছি, তখন অনেকে অভিনন্দন জানিয়েছে। জিনিসটা অনেক ভালো লাগছে। নিজের পারফরম্যান্সটা মোটামুটি করতে পেরেছি, তবে আইসিসির সেরা একাদশে সুযোগ পেয়ে অনেক ভালো লাগছে।
প্রশ্ন: বিশ্বকাপে সেরাদের মধ্যে থাকতে হবে। আগে থেকে এমন কোনো পরিকল্পনা ছিল?
রিপন: না, এমন কোনো পরিকল্পনা ছিল না। খেলার আগে পরিকল্পনা ছিল, যেন বিশ্বকাপে আমি নিজের সেরাটা দিতে পারি। শীর্ষ পাঁচে যে বোলার আছে, তাদের মধ্যে যেন আমি একজন হতে পারি, এমন পরিকল্পনা ছিল। সেভাবেই নিজেকে প্রস্তুত করেছিলাম।
প্রশ্ন: এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দলগত পারফরম্যান্সকে কীভাবে মূল্যায়ণ করবেন? কোথায় ঘাটতি ছিল বলে মনে করেন?
রিপন: প্রস্তুতি আমাদের ভালোই ছিল। প্রস্তুতিতে কোনো ঘাটতি ছিল না। আমরা আসলে চেষ্টা করেছি। কিন্তু ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটায় আমাদের ভাগ্য সঙ্গে ছিল না। উইকেট অনেক ভেজা ছিল। টসটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ওইরকম উইকেটে ব্যাটিং করা অনেক কঠিন। যদি টস আমরা জিততাম, তাহলে ম্যাচের ফল হয়তো অন্যরকম হতে পারতো।
প্রশ্ন: দল এবং নিজের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট কি না?
রিপন: সন্তুষ্ট বলতে ভালোর তো শেষ নেই। যদি সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী হতে পারতাম, তাহলে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগতো। নিজের পারফরম্যান্স যতটুকুই করছি, যদি দল হিসেবে আরও ভালো করতে পারতাম তাহলে আরও বেশি ভালো লাগতো।
প্রশ্ন: আগামী ১০ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
রিপন: বিশ্বের সেরা পাঁচজন বোলারের মধ্যে আমি নিজেকে দেখতে চাই।
শেষ প্রশ্ন: বাংলাদেশি ও বিদেশিদের মধ্যে কাকে নিজের আইডল হিসেবে মানেন?
রিপন: যেহেতু আমি পেসার, সেহেতেু দক্ষিণ আফ্রিকার ডেল স্টেইনকে ফলো করি। আর বাংলাদেশে সাকিব আল হাসান।
সাকিব তো স্পিনার বোলার? হ্যা, স্পিনার বোলার। তবে আমার ওনাকে অনেক ভালো লাগে। ওনার নেতৃত্বগুণ, মেন্টালিটি অনেক ভালো লাগে। চাপের মধ্যেও নিজেকে প্রস্তুত রাখেন, ভেঙে পড়েন না। এ জিনিসটা অনেক ভালো লাগে। ছোটবেলা থেকেই আমি ওনার অনেক বড় ভক্ত, অনেক খেলা দেখতাম। তবে আইডল বললে, ডেল স্টেইনের মতো হতে চাই। বাকিটা আল্লাহ ভরসা।