ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয় জিতেছে মরক্কো
খেলা

ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয় জিতেছে মরক্কো

বিশ্বকাপে মরক্কোর স্বপ্নযাত্রা থেমে গেল ফ্রান্সের কাছে হেরে। কিন্তু তার আগে উত্তর আফ্রিকার দেশটি যা করে দেখাল সেটিও বা কম কিসে! বিশ্বকাপ শুরুর আগে কজন ভাবতে পেরেছিলেন মরক্কো সেমিফাইনাল খেলবে? আটলাসের সিংহরা অসাধ্য সাধন করেছেন। বিস্ময় জাগিয়ে আফ্রিকার প্রথম দেশ হিসেবে খেলেছে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল। তাদের অভূতপূর্ব এই অর্জনে আফ্রিকা তো বটেই, আরব বিশ্ব, এশিয়া, লাতিন আমেরিকা ও মুসলিম দেশগুলো উদযাপন করেছে।




মরক্কোর উত্থান ছিল এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে বড় চমক। ১৯৭০ বিশ্বকাপে অভিষেক হওয়া দেশটির সর্বোচ্চ সাফল্য ছিল দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলা, সেটিও ১৯৮৬ বিশ্বকাপে। তারপর ১৯৯৪ ও ১৯৯৮ বিশ্বকাপে খেলেছে মরক্কো। ২০১৮ বিশ্বকাপে দারুণ খেলেও গ্রুপ পর্বের বাধা পেরোতে পারেনি। সেই দলটি এবার সবাইকে অবাক করে সেমিফাইনাল খেলল।

সেমিফাইনালেই যখন এসেছে মরক্কো তখন আরেকটু বেশি চাইলে ক্ষতি কি! সেই চাওয়াটা যে ছিল ফ্রান্সের বিরুদ্ধে জয়! তাদের চাওয়ায় বাড়াবাড়ি ছিল না। সেমিফাইনালের আগে মরক্কো মাত্র একটি গোল হজম করেছিল। কিন্তু মরক্কোর ফ্রান্সের বিরুদ্ধে মাঠে নামার ৫ মিনিটের মাথায় গোল খেয়ে বসে! গোলের উত্স ছিলেন আঁতোয়া গ্রিজম্যান। বাঁ পায়ের ভলিতে গোল করতে ভুল করেননি ফরাসি ডিফেন্ডার থিও হার্নান্দেজ।



এক গোলে পিছিয়ে থাকার পরও ভেঙে পড়েনি মরক্কো। পুরো ম্যাচেই দলটি দুর্দান্ত লড়াই করে গিয়েছে। শুধু গোলটিই পায়নি মরক্কো। তবে বদলি নেমে ৪৪ সেকেন্ডের মাথায় গোলের দেখা পেয়ে যান ফ্রান্সের কোলো মুয়ানি। এরপরেও দ্বিতীয়ার্ধে বারবার ফরাসিদের দুর্গ কাঁপিয়ে দিয়েছে মরক্কো। দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম ১৫ মিনিট বল ঘোরাফেরা করেছে ফ্রান্সের সীমানাতেই। একাধিকবার গোলের সুযোগ পেয়েও সেগুলো কাজে লাগাতে পারেননি মরক্কোন খেলোয়াড়েরা। তাই গোটা ম্যাচে অসাধারণ খেলেও পরাজিতদের দলে থেকে গেলেন আশরাফ হাকিমি-হাকিম জিয়েশ-ইয়াসিন বুনুরা।



সেমিফাইনাল না জিতলেও মরক্কোর গৌরব এতটুকু কমছে না। তারা যা করেছেন সেটি যে বিশ্বকাপ জয়ের সমান! তার চেয়েও বড়, ফুটবল দুনিয়ার হৃদয় জিতে নিয়েছে মরক্কো। ফ্রান্সের বিরুদ্ধে হেরেও গোটা দল সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি অর্জনে মাঠেই সিজদা করেছে। আগের ম্যাচগুলোতেও মরক্কোর খেলোয়াড়েরা জয়ের পর সৃষ্টিকর্তাকে এভাবেই স্মরণ করেছেন।

ফ্রান্সের বিরুদ্ধে সেমির পরাজয় মরক্কোর পূর্বের জয়গুলোকে ম্লান করে দিচ্ছে না মনে করিয়ে দিয়ে দলটির কোচ ওয়ালিদ রেগুরাগুই জানিয়েছেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এটাই যে, আমরা সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করেছি। দলে কিছু চোট সমস্যা ছিল। অনুশীলনে আগের্দকে হারিয়েছি, সাইস, মাসাওয়ি…তবে কোনো অজুহাত দাঁড় করাচ্ছি না।’

শুরুর ৫ মিনিটের মাথায় মরক্কো গোল খেয়ে না বসলে ম্যাচের ফল অন্যরকম হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকত না। রেগুরাগুইও সেটা মানছেন, ‘আমাদের সামান্য ভুলের মাশুল দিতে হয়েছে। ভালো শুরু করতে পারিনি। প্রথমার্ধে কৌশলগত কিছু ভুল ছিল। দ্বিতীয় গোলটি আমাদের ছিটকে দিয়েছে। তবে এই পরাজয়ে আমরা আগে যা করেছি তা ম্লান করে দিচ্ছে না।’

মরক্কোকে ফুটবলবিশ্ব বহু দিন মনে রাখবে। গ্রুপ পর্বে দলটি হারিয়েছে শক্তিশালী বেলজিয়ামকে। কানাডার বিরুদ্ধে জয় এবং ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে ড্র করে শেষ ষোলোতে উঠে যায় মরক্কো। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে চলে যায় মরক্কো। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর্তুগালও বিদায় নিয়েছে মরক্কোনদের কাছে হেরে। শেষ অবধি মরক্কো হেরে গেল ফ্রান্সের কাছে। যাওয়ার একটা বার্তা দিয়ে গেল মরক্কো, ‘বিশ্বকাপমঞ্চে ছোট দল, বড় দল বলে কিছু নেই!’

Source link

Related posts

হাঁটুর চোট পুনর্বাসনের সময় অ্যাঞ্জেলস আউটফিল্ডার একটি উদ্ভট ধাক্কা খেয়েছেন

News Desk

ইয়েমেনের কাছে বিধ্বস্ত বাংলাদেশ

News Desk

কাইটলিন ক্লার্ক সম্পূর্ণভাবে আনন্দদায়ক ফাইনাল ফোর শোডাউনের আগে দখলে আছেন

News Desk

Leave a Comment