Image default
খেলা

পাকিস্তানের নেটে কোহলির ব্যাটিং অনুশীলন

রাজনৈতিক বৈরিতায় ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্ক যতই শীতল হোক, বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মা আর বাবর আজম-মোহাম্মদ রিজওয়ানরা নিজেদের মধ্যে সম্পর্কের উষ্ণতার পরশ ছড়িয়ে যাচ্ছেন। মাঠের বাইরে তো বটেই, লড়াইয়ের মঞ্চেও ভারত ও পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের একসঙ্গে হাসি-ঠাট্টা করতে দেখা যায়।

এটুকু স্বাভাবিক ঘটনা বলেই ধরে নেওয়া যায়। কিন্তু শত্রুশিবিরের নেটে গিয়ে ৪০ মিনিট ধরে ব্যাটিং অনুশীলন করাটাকে কী বলবেন? চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে ‘বন্ধুত্ব’ আরেক ধাপ এগিয়ে নিয়ে কোহলি সে কাজটাই করেছেন!

গতিময় ও বাউন্সি উইকেটে এশিয়ান ব্যাটসম্যানদের দুর্বলতা-অস্বস্তি নতুন কিছু নয়। তা কোহলি যতই সময়ের অন্যতম সেরা হন, বাউন্সারে ‘অ্যালার্জি’ আছে তাঁরও। ব্রিসবেনে গতকাল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচে মিচেল স্টার্কের এমনই এক শর্ট ডেলিভারিতে কাবু হয়েছেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক।

আসল লড়াইয়ে নামার আগে যত দ্রুত সম্ভব দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা চাই। প্রতিনিয়ত ভালো করার তাড়নায় নিজের শতভাগ নিংড়ে দেওয়া কোহলি তাই সময় নষ্ট করেননি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ শেষ হতেই ছুটে গেছেন অনুশীলন করতে। নিজেদের নেটে নয়, একেবারে শাহিন আফ্রিদি-নাসিম শাহ-হারিস রউফদের ডেরায়! সেখানে ৪০ মিনিট ব্যাটে শাণ দিয়েছেন। পাশের দুই নেটে অনুশীলন করতে দেখা গেছে বাবর ও রিজওয়ানকেও।

কোহলি যে বলগুলোর মুখোমুখি হয়েছেন, বেশির ভাগই ছিল শর্ট লেংথের। মানে, রোগ সারিয়ে তুলতে সবচেয়ে কার্যকর মলমটাই লাগাতে চেয়েছেন ২০১৪ ও ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়। অনুশীলন শেষ করেই হোটেলে ফেরেননি। টেকনিক্যাল বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছেন ভারতের কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের সঙ্গে। গুরু-শিষ্যের কথোপকথনের বড় অংশজুড়ে যে ওই বাউন্সার ছিল, সেটা না বললেও চলছে।

একটি করে চার-ছক্কায় গতকাল ১৩ বলে ১৯ রান করেছেন কোহলি। স্টার্কের ওই শর্ট বলে আউট হওয়ার আগে বেশ সাবলীল মনে হয়েছে তাঁকে। সে কারণে ঘাতক ডেলিভারি নিয়েই নেটে কাজ করেছেন। কোহলি প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারলেও মোহাম্মদ শামির শেষ ওভারের রোমাঞ্চে ভারতই শেষ হাসি হেসেছে।

খেলার প্রতি নিবেদনে কখনোই ঘাটতি ছিল না কোহলির। ম্যাচের ভুলত্রুটি নিয়ে হরহামেশা এভাবেই কাজ করেন। তবে সবার ক্যারিয়ারেই খারাপ সময় আসে। কোহলির ক্ষেত্রে সেটা একটু দীর্ঘই ছিল। কী জাতীয় দল, কী আইপিএল—দুঃসময় যেন পিছু ছাড়ছিল না। ‘রান মেশিন’ থেকে ‘সেঞ্চুরি মেশিনে’ রূপান্তরিত হওয়া মানুষটাই আইপিএলে গোল্ডেন ডাকের হ্যাটট্রিক করেছিলেন। আকাশ পানে চেয়ে বিধাতার কাছে রান প্রাপ্তির আকুতি জানিয়েও মেলেনি সমাধান। এত বাজে ফর্ম দেখে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকেও তাঁর নামটা ছেঁটে ফেলার দাবি উঠেছিল। বেছে বেছে ম্যাচ ও সিরিজ খেলায় ভারতীয় দলের প্রতি তাঁর দায়িত্ববোধ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন সাবেকেরা।

তবে ‘লাইফ লাইন’ হিসেবে পাওয়া এশিয়া কাপ কোহলিকে কক্ষপথে ফিরিয়েছে। আরব আমিরাতে এশিয়ান শ্রেষ্ঠত্বের টুর্নামেন্টে করেছেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৭৬ রান; গড়টাও ঈর্ষণীয়—৯২! টি-টোয়েন্টিতে পেয়েছেন প্রথম সেঞ্চুরির দেখা। ঘুচিয়েছেন ১০২০ দিনের আক্ষেপ। এর পর থেকেই দারুণ ছন্দে আছেন। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ জয়ে উপহার দিয়েছেন কার্যকর দুটি ইনিংস (৬৩ ও ৪৯*)।

ক্যারিয়ারের শেষ ভাগে এসে সোনালি দিন ফেরানোর রহস্যটাও জানিয়েছেন কোহলি। এত অনুশীলন-ঘাম ঝরিয়েও যখন কাজ হচ্ছিল না, তখন ক্রিকেটের সঙ্গে পাট চুকিয়ে ফেলেছিলেন ৩৩ বছর বয়সী তারকা। অভিনেত্রী স্ত্রী আনুশকা শর্মার পরামর্শে এক মাস ব্যাট ছুঁয়েও দেখেননি। তবে বিশ্বকাপের আগে আর সে পথে হাঁটছেন না কোহলি। ব্যাটের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে নয়; ব্যাট চালিয়েই সবকিছুর জবাব দিতে চাইবেন।

Related posts

ইতিহাসের ইতিহাসে সম্ভবত সর্বশ্রেষ্ঠ বাস্কেটবল দল পিছনে ফিরে তাকান

News Desk

১০ বছর পর ফ্রেঞ্চ লিগ শিরোপা জিতল লিলে

News Desk

এই প্রভুর কাছে চ্যাম্পিয়ন্স চ্যাম্পিয়নশিপের আরও ভাল উদযাপন

News Desk

Leave a Comment