মাহফুজা আক্তার কিরন। বাংলাদেশের প্রথম কোনো নারী, যিনি আন্তর্জাতিক ফুটবল সংস্থা ফিফার কাউন্সিল মেম্বার। ফিফার এত বড় ফোরামে আর কোনো বাংলাদেশি নারী এত ওপরের আসন পাননি। পরপর দুই বার ফিফার গুরুত্বপূর্ণ পদে বসার সুযোগ পেয়েছেন। দুই বারই নির্বাচিত হয়ে এসেছেন। ফিফায় বাংলাদেশি নারীর অবস্থান এটা শুধু ক্রীড়াঙ্গনই নয়, দেশের গৌরব। সব সমাজের জন্য প্রেরণার উৎস। দেশের জন্য ইতিহাস।
যেবার প্রথম ফিফার কাউন্সিল মেম্বার হয়ে দেশে ফিরে ছিলেন সেবার ভেবেছিলেন এত বড় অর্জন সরগরম হয়ে পড়বে। বাঘা বাঘা সব প্রার্থীকে টপকে বাংলাদেশের এক জন অখ্যাত নারী সংগঠক ফিফার সদস্য চেয়ারে বসে পড়বেন এটা যে কোনো মাপকাঠিতে নিজ দেশে উচ্চাসনে তুলে দেবে। কিন্তু তার ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি। অন্য কোনো দেশের নারীর এমন সাফল্য মাথায় দেশে ফিরলে বিমানবন্দরেই ফুলের বৃষ্টি ঝরত।
কিরন কারো বন্ধু হতে পারেন, কারো শত্রু হতে পারেন। কিন্তু তার যে অর্জন সেটি খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। তিনি যে অর্জন বাংলাদেশকে উপহার দিয়েছেন তাতে আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। দেশের সম্মান বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু নিজ ঘর, বাংলাদেশে যোগ্য সম্মান পাননি তিনি। কিরনের সাফল্যে বাফুফের কিছু লোকজনের বুকে রক্তক্ষরণ হয়। বসতে দেন অনুষ্ঠান মঞ্চের কোনার চেয়ারে। অবেহলার আসনে। অথচ ভিন দেশে তার স্থান মর্যাদার।
ভারতে এএফসি ওমেন্স এশিয়ান ফুটবল ফাইনালের মঞ্চে মাহফুজা আক্তার কিরন চ্যাম্পিয়ন চীনের হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েছেন। নিজ দেশে অবহেলিত কিরন ভিন দেশে সম্মানিত অতিথি। ফাইনালে চীন ৩-২ গোলে হারিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়াকে। ২০২৩ নারী বিশ্বকাপে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনাম খেলবে এশিয়া থেকে। চায়নিজ তাইপে এবং থাইল্যান্ডের মধ্যে প্লেঅফ ম্যাচ হবে ১৩ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি। একটি দেশ চূড়ান্ত পর্বে উঠবে।
গুরুত্বপূর্ণ একটি টুর্নামেন্টের পুরো দায়িত্ব পালন করেছেন বাংলাদেশের এই নারী সংগঠক অনন্যা শীর্ষ দশ নারী সম্মাননা পাওয়া মাহফুজা কিরন। নারী ফুটবলে পান থেকে চুন খসলে দায়ভার কিরনকে নিতে হয়। আর এত সাফল্য যখন আসে তখন তাকে দেওয়া হয় না প্রশংসার বাণী। ক্রীড়া সংবাদিকাদের পুরস্কার পেলেও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সুনজরের অভাবে পাননি জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার।