Image default
খেলা

চেলসি নয়, গার্দিওলাই সিটির বড় প্রতিপক্ষ

সেমিফাইনালে চেলসির নায়ক ছিলেন মেসন মাউন্ট। মাঝ মৌসুমে এসে দলকে বদলে দেওয়ার নায়ক থমাস টুখেলও আছেন, তার দল চেলসিও আছে বহাল তবিয়তে। তবে তারা নয়, আজ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে সম্ভবত সিটির সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ দলের কোচ পেপ গার্দিওলা নিজেই!

কোচ হিসেবে প্রথম চার বছরেই জিতেছিলেন বার্সেলোনার হয়ে ১৪টা শিরোপা। এরপর বায়ার্ন মিউনিখ হয়ে এসেছেন ম্যানচেস্টার সিটিতে, সব মিলিয়ে তার ঝুলিতে দলীয় শিরোপা জমা পড়েছে ৩১টি। এরপরও? কারণ এই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ইউরোপীয় শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চই।

নিজের সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপাটা জিতেছিলেন সেই ২০১০-১১ মৌসুমে। এরপর থেকেই যেন ট্রফিটা দূর আকাশের তারাই হয়ে আছে তার জন্য। তার দোষও কি কম? ‘প্রায়’ সর্বজয়ী বায়ার্ন মিউনিখকে পেয়েছিলেন, তাকে পারেননি। ম্যানচেস্টার সিটিকে প্রায় নিজ হাতে গড়ে তুলেছেন, তাকেও জেতাতে পারলেন কই! আজ জেতাতে পারলে অবশ্য ভিন্ন কথা, কিন্তু এখন পর্যন্ত সিটির হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তার খেরোখাতা কিন্তু শূন্যই!

গার্দিওলা যেখানেই গিয়েছেন, হয় দারুণ এক স্কোয়াড গড়েছেন, কিংবা পেয়ে গেছেন। বার্সেলোনায় গড়েছিলেন জাভি ইনিয়েস্তা মেসিদের দুর্দমনীয় এক দল। বায়ার্ন মিউনিখে যখন যোগ দিয়েছেন ২০১৩-১৪ মৌসুমে, তার আগেই দলটা হয়ে গিয়েছিল ইউরোপসেরা। আর আজকের সিটিকে গড়েছেন একেবারে নিজ হাতে। তার ফলও পেয়েছেন। দলের গুণমান আর নিজের মুন্সিয়ানায় ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় তার প্রত্যেকটা দল হয়ে ওঠে লিগের সেরা। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এলেই যেন কি যেন হয়ে যায় তার দলগুলোর।

সেই তার বায়ার্ন মিউনিখের প্রথম মৌসুম থেকে শুরু। রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ২০১৩-১৪ মৌসুমের সেমিফাইনালে প্রথম লেগে সহজাত খেলাটা খেলেই হেরেছিল তার দল। সেটা পুষিয়ে নিতে দ্বিতীয় লেগে দলকে খেলালেন অতি আক্রমণাত্মক ফর্মেশনে। ফলে ট্র্যানজিশনে, প্রতি আক্রমণে বেল, বেনজেমা, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর ক্ষুরধার আক্রমণের ধারটা আর সহ্য করতে পারেনি তার দল। হারে ৪-০ ব্যবধানে। বিদায় নেয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে।

এক বছর পর, আবারও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনাল। এবার তার সাবেক দল বার্সেলোনার মুখোমুখি বায়ার্ন। সেবার অবশ্য প্রথম লেগে লিওনেল মেসির শেষ ১৩ মিনিটেই ঝড়েই বিদায় নিশ্চিত হয়েছিল তার দলের। তবে যদি ম্যান মার্ক করার সিদ্ধান্তটা না নিতেন তিনি, তাহলে কি দ্বিতীয় গোলে এত বেশি স্পেস পেতেন মেসি? প্রশ্নটা থেকেই যায়।

সিটির হয়ে দ্বিতীয় মৌসুমের কথাও আনা যায় আলোচনায়। লিগে ইয়ুর্গেন ক্লপের লিভারপুল দারুণ হেভিমেটাল, ‘গেগেনপ্রেসিং’-এর পসরা সাজিয়ে দলটাকে হারিয়েছিল ৪-৩ ব্যবধানে। ক্লপের লিভারপুলের সামনে কোয়ার্টার ফাইনালে দেখা হতেই যেন সে ম্যাচের প্যারানয়া ফিরে এল তার কাছে। লিভারপুলের হাইপ্রেসকে টেক্কা দিতে মাঝমাঠে আনলেন বাড়তি খেলোয়াড়, ইলকায় গুন্দোয়ানকে। ফলে রাহিম স্টার্লিংয়ের গতিকে বলি দিতে হল দলকে। তাতেও লাভ হয়নি, দল হারে ৩-০ ব্যবধানে। ফিরতি লেগে মার্সেলো বিয়েলসার ৩-৩-১-৩ ছকে দলকে নামিয়েছিলেন, কিছুটা ভালো খেললেও আর চূড়ান্ত লক্ষ্যটা ধরা দেয়নি তার হাতে। আরও একটা ব্যর্থতাই সঙ্গী হয় তার।

২০১৮-১৯ মৌসুমে তার দল খেলছিল দারুণ ফুটবল, জানুয়ারি থেকেই উঠেছিল ‘কোয়াড্রুপল’ রব। তবে ‘অ্যাকিলিস হিল’ চ্যাম্পিয়ন্স লিগেই পাকালেন ভজকট। টটেনহ্যামের বিপক্ষে প্রথম লেগের কথাই ধরুন। দলকে খেলালেন রক্ষণাত্মক ছকে। তাতে গুন্দোয়ান, ফার্নান্দিনিও আর ডেভিড সিলভাকে নিয়ে গড়া মাঝমাঠ গেল থমকে। দলও হারল ১-০ ব্যবধানে, যদিও সার্জিও আগুয়েরোর পেনাল্টি মিসেরও দোষ আছে বেশ। ফিরতি লেগেও গার্দিওলার কারিকুরি ছিল বৈকি! বের্নার্দো সিলভা আর কেভিন ডি ব্রুইনার মতো দুই ওয়াইড মিডফিল্ডারকে এনেছিলেন মিডফিল্ডে, হাইভোল্টেজ ম্যাচের ঝাঁঝটা একারণেই সামলানো সম্ভব হয়নি সিটির, যার ফল ৪-৩ ব্যবধানে জিতেও অ্যাওয়ে গোল নিয়মে বিদায়।

এরপর গেল মৌসুমের কথাই ধরুন, লিওঁর বিপক্ষে যে ম্যাচে হেরে বিদায় নিয়েছিল সিটি, সেদিন দলকে খেলিয়েছিলেন ৩-৪-৩ ছকে। পুরো মৌসুমে যেখানে দল খেলেছে ৪-৩-৩ ছকে। বদলে যাওয়া কৌশলে মানিয়ে নিতে সমস্যাই হয়েছে দলের, ফলটাও অবধারিত ৩-১ ব্যবধানে হেরে বিদায়।

ওপরের সব আলোচনাতেই একটা বিষয় উপস্থিত। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে গার্দিওলা যেন ভেবে ফেলেন একটু বেশিই। সে মঞ্চটা অবশ্য আজও প্রস্তুত গার্দিওলার জন্য। হয় আগের সব অতিচিন্তনের প্রায়শ্চিত্ত করতে পারেন, পারেন আগের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাতেও।

গতিপ্রকৃতি অবশ্য শেষটার কথাই বলছে বেশি। শেষ এক মাসে দুই দেখায় দল হেরেছে চেলসির কাছে। হারিয়েছে এফএ কাপ জেতার সুযোগ, যেটা না হলে হয়তো আজও ‘কোয়াড্রুপল’ জেতার সুযোগ।

সে দুই হার গার্দিওলাকে ভাবাচ্ছেও বেশ। এই যেমন দিনদুয়েক আগে বিটি স্পোর্টসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি কথা বলছিলেন চেলসির ট্যাকটিকাল দিক নিয়ে। জানাচ্ছিলেন চেলসির তিন জনের ডিফেন্স, সামনে ডাবল পিভোট, দুই ওয়াইড উইংব্যাক আর সামনে টিমো ভের্নারকে নিয়ে গড়া খুবই ‘ওয়াইড’ আর খুবই ‘ডিপ’ দলটার বিপক্ষে খেলা কেন কঠিন। এর উত্তরই খুঁজতেই তো অতীতে সব ভুলের জন্ম। সে উপলক্ষটাই ফিরে আসছে আজও।

তবে সেটা যদি ফাইনালের আগের মাইন্ড গেম হয়, তাহলে বর্তে যায় সিটি। তবে সেটা গার্দিওলার প্রমাদ গোণা নাকি মাইন্ড গেম, সে প্রশ্নের উত্তরের জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও কয়েক ঘণ্টা।

Related posts

শ্রীলঙ্কা সিরিজ মাথায় রেখেই প্রিমিয়ার লিগ খেলার সিদ্ধান্ত সাকিবের

News Desk

How an L.A. humanitarian group is using soccer to help children stuck at Mexico border

News Desk

গণিত: রেঞ্জার্স মরসুমের বাইরে চলে যায়

News Desk

Leave a Comment