হংকংয়ের বিপক্ষে ম্যাচ ড্র হওয়ার পর ১৫ অক্টোবর সকালে ঢাকা বিমানবন্দরে পৌঁছান বাংলাদেশি ফুটবলাররা। সবাই সুন্দর চোখে তাদের প্রত্যাবর্তন দেখল। আফগানিস্তানের বিপক্ষে বিধ্বস্ত হওয়া মেহেদি হাসান মিরাজ, নাঈম শেখ ও জাকির আলী একই সন্ধ্যায় ঢাকায় ফিরেছেন। ঢাকা বিমানবন্দরে ক্রিকেট ভক্তদের হামলার শিকার হন তিনি। গাড়ির জানালা খুলে কোনোরকমে দ্রুতই স্থান ত্যাগ করেন ক্রিকেটাররা। পেছন থেকে উল্লাসকারী ভক্তরা দ্রুতগামী গাড়িগুলোকে লক্ষ্য করেছে এমনটা ছিল না।
ক্রিকেটারদের মতো ফুটবলারদের সুযোগ-সুবিধা খুবই কম। সবকিছু পেয়েও দেশকে কিছুই দিতে পারছেন না ক্রিকেটাররা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সাম্প্রতিক হোয়াইটওয়াশ, সিরিজ জুড়ে ব্যাটিং ব্যর্থতা, মিডল অর্ডারের ভঙ্গুরতা, উদ্বোধনী জুটিতে অনিশ্চয়তা—বাংলাদেশের সমস্যা অন্তহীন মনে হচ্ছে। আসলে, কোচ ফিল সিমন্সের বক্তব্য দলের দিকনির্দেশনার অভাবের প্রতিফলন। সমালোচনার পরিবর্তে, আমি বারবার আত্মরক্ষা, ভুল ব্যাখ্যা এবং মানসিক দৃঢ়তার অভাবের ইঙ্গিত শুনেছি। অজুহাত দিচ্ছেন কোচ ফিল সিমন্স।
<\/span>“}”>
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের পর আজ থেকে শুরু হচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ। ঘরের মাঠে এই সিরিজ শুরু হওয়ার আগে টাইগারদের কোচ সিমন্স বলেছিলেন: “আমাদের যা করতে হবে তা হল আগের সিরিজটি ভুলে যাওয়া।” কিন্তু প্রশ্ন হল: বাংলাদেশের কি ভুলে যাওয়ার বিলাসিতা আছে? আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা বা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও একই চিত্র। প্রতিপক্ষের সামান্য চাপে ব্যাটিং ভেঙে পড়ে, স্পিনের বিরুদ্ধে হাল ছেড়ে দেয় এবং মানসিক কাঠামো ভেঙে পড়ে। কোচ নিজে যেমন স্বীকার করেছেন, সমস্যাটি মূলত মনস্তাত্ত্বিক, কিন্তু সমাধানের জন্য এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট নীলনকশা নেই।
দলের মিডল অর্ডার অনেকদিন ধরেই হিমশিম খাচ্ছে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সিমন্স বলেন: “পরিস্থিতির কারণে হিটারদের সেভাবেই খেলতে হয়।” কিন্তু প্রতিটি সিরিজ একই ধীর, অপরিকল্পিত মারধর দেখায়। অধিনায়ক মেহেদি হাসান মেরাজ থেকে অভিজ্ঞরা কেউই মাঝমাঠে গতি বাড়াতে পারছেন না। সুযোগ দিলেও নতুনরা টিকতে পারছে না। এই বাস্তবতায় পরিস্থিতিকে দোষারোপ করা দায় এড়ানোর অপর নাম।
<\/span>“}”>
বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপ সম্প্রতি লেগ-স্পিনারদের বিরুদ্ধে অস্বাভাবিক দুর্বলতা দেখিয়েছে। হাসরাঙ্গা, রশিদ খান, এমনকি স্বল্প পরিচিত স্পিনাররাও বাংলাদেশকে জর্জরিত করেছে। এখানে সিমন্সের ব্যাখ্যা: “আমি শেষ সিরিজটিকে একটি ব্যতিক্রম বলব।” কিন্তু সত্য এই ব্যতিক্রম এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়কে দেখে বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডারে ভয় ঢুকে যায়- আর মাঠের পারফরম্যান্সও তাই বলে।
কোচের বক্তৃতায় আরেকটি বড় উদাহরণ নেতৃত্বের সাথে সম্পর্কিত। পন্ডিতরা বলছেন মিরাজের রক্ষণাত্মক অধিনায়ক সিমন্স তাকে সমর্থন করেছেন। তবে 198 এবং 200 রানের লক্ষ্য তাড়া করতে না পারার জন্য শুধু ব্যাটসম্যানরাই দায়ী নন, দলের পরিকল্পনাও কৌশলগত দিক থেকে দুর্বল ছিল। কোচও উইকেটটিকে “সাধারণ মিরপুরের উইকেট” বলে বর্ণনা করে দোষ এড়িয়ে গেছেন, যেন খেলোয়াড়দের ব্যর্থতার সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত দায়।
দলের অভ্যন্তরে চাপ ও সমালোচনা নিয়ে সাইমন্সের অবস্থানও বিতর্কিত। বাজে পারফরম্যান্সের পর ক্রিকেটাররা বিমানবন্দরে উচ্ছ্বসিত, ভিড়ের তোড়জোড়। জবাবে মোহাম্মদ নাঈম শেখ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হতাশা প্রকাশ করেন। সিমন্স বলেন, “আমি চাই না আমার খেলোয়াড়রা সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাক।” কিন্তু জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা যখন ভেতর থেকে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে, তখন বাইরের সমালোচনা বন্ধ করে আসল সমস্যা এড়িয়ে যাওয়া পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে।
<\/span>“}”>
উদ্বোধনী স্লটে ক্রমাগত পরিবর্তন, নির্ভরযোগ্য জুটির অভাব এবং সাব-পার সিনিয়র খেলোয়াড়দের উপর নির্ভরতা দলটিকে অচলাবস্থায় আটকে রেখেছে। “আমরা এখনও সঠিক জুটি খুঁজছি, কারণ এটি 2027 বিশ্বকাপের প্রস্তুতি,” সিমন্স বলেছেন। কিন্তু বর্তমানের ধারাবাহিকতা না থাকলে এখন থেকে চার বছর পর স্বপ্ন কতটা বাস্তবসম্মত হবে, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।
বোলিং বিভাগ মোটামুটি স্থিতিশীল থাকলেও ব্যাটিং সংকট এখন বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় সমস্যা। “আমাদের মাঝখানে একটি অংশীদারিত্বের প্রয়োজন,” কোচ বলেছেন, তবে এটি কেবল কথায় নয়, কৌশলগত সম্পাদনেও এর অভাব রয়েছে। ফিল সিমন্সের নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন আত্মরক্ষার পর্যায়ে যাচ্ছে, পুনর্গঠন পর্যায়ে নয়। ভুলে যাওয়ার কথা বারবার বলা হয়, কিন্তু শেখার জায়গা নেই। এই মুহূর্তে দলের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হল ব্যর্থতাকে মুছে ফেলার আগে মেনে নেওয়ার সাহস।