Image default
খেলা

রূপকথার জয়ে অশ্রুসিক্ত সন

জীবন কত বিচিত্র! জীবন খাতায় কখন কোথায় কার ভাগ্যে কী লেখা থাকে, তা ভাবনারও ঊর্ধ্বে। ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচে পরাশক্তি পর্তুগালের বিপক্ষে ২-১ গোলের জয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার নকআউটে জায়গা করে নেয়া রূপকথার এই গল্পে সন হিউং-মিনের থাকারই কথা ছিল না। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে টটেনহ্যামের হয়ে খেলার সময় প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারের ট্যাকলে বাঁ চোখে এতটাই আঘাত পান যে অস্ত্রোপচার করাতে হয়। অথচ দিন বিশেক পর বিশ্বকাপ।

শঙ্কা ছিল তার কাতার যাত্রা নিয়ে। কিন্তু অধিনায়ক ফিরলেন। হুয়াং হি চানের অন্তিম মুহূর্তের গোলে এশিয়ান জায়ান্টরা নকআউটের টিকেট পাওয়ার পর তাই আবেগ ধরে রাখতে পারেননি সন। আল রাইয়ানের এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে সতীর্থরা যখন উৎসবে মতোয়ারা মাঠে ক্ষণে ক্ষণেই কাঁদছিলেন অধিনায়ক। উরুগুয়ের সঙ্গে গোলশূন্য ড্রয়ে আসর শুরুর পর ঘানার কাছে ৩-২ ব্যবধানে হার।

শেষ ষোলোর টিকিট পেতে নিজেদের শেষ ম্যাচে পর্তুগালের বিপক্ষে জিততেই হবে, তাকিয়ে থাকতে হবে অপর ম্যাচের ফলের দিকেও। ৯০ মিনিট পর্যন্ত ১-১ সমতায় থাকা ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে (৯১ মিনিট) পরমকাক্সিক্ষত সেই গোলটি করেন হুয়াং। প্রি-কোয়ার্টারে সোমবার রেকর্ড পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের মুখোমুখি হবে সন- হুয়াংদের দক্ষিণ কোরিয়া।
কাতারে এখনো পর্যন্ত গোল না পেলেও এদিন হুয়াংকে বলের জোগান দিয়েছিলেন সন। ম্যাচ শেষে হুহু করে কান্নার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে অধিনায়ক বলছিলেন, ‘আমি বিশ^াস করি এই কান্না আনন্দের। আমরা এই মুহূর্তটির জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেছি। আমাদের নিজেদের ওপর আস্থা ছিল, আমরা জানতাম একদিন সবাই মিলে এই লক্ষ্য ঠিকই অর্জন করতে পারব।

আমি যখন নিজের সেরাটা দিতে পারছিলাম না তখন হতাশা কাজ করছিল। সেই পরিস্থিতিকে কাটিয়ে উঠতে সহযোগিতা করার জন্য সতীর্থদের তাছে কৃতজ্ঞ। আমি সত্যিই তাদের জন্য গর্বিত।’ এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো বিশ^কাপে নকআউট পর্বে খেলতে পারছে দক্ষিণ কোরিয়া। পরের রাউন্ডে তাদের প্রতিপক্ষ ব্রাজিল। সন বলেন, ‘শেষ ষোলোতে যাওয়া আমাদের প্রথম লক্ষ্য ছিল। এখন সেই লক্ষ্য আরও অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তারিত হয়েছে।

নিজেদের সেরাটা দিয়েই আমরা তা অর্জন করতে চাই। বিশ^ ফুটবলে অনেক কিছুই সম্ভব, বিশেষ করে এখন আমাদের সামনে ব্রাজিলকে হারানোর সুযোগ রয়েছে। এজন্য আমরা যা করার প্রয়োজন সবই করব।’ ২০১৪ ও ২০১৮ আগের দুটি বিশ্বকাপেই দক্ষিণ কোরিয়াকে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সেই সৌভাগ্য হলো অধিনায়ক ও দেশটির ফুটবলের সময়ের বড় তারকার। ৩০ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড তাই অশ্রু ধরে রাখতে পারেননি।

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটনার নেপথ্যে ছিলেন সন। শুরুতেই গোল হজম করে সে স্বপ্ন এক মুহূর্তের জন্য দমকা হাওয়ার মতো নিঃশেষ হতে বসেছিল। তবে স্বপ্ন জিইয়ে রাখতে দক্ষিণ কোরিয়া ঘুরে ফিরতে খুব বেশি সময় নেয়নি। ইয়ং কিমের গোলে সমতায় ফেরে কোরিয়ানরা। শুধু সমতায় ফিরলে তো আর চলবে না। পর্তুগিজ দুর্গ ভেঙে আরেকটি গোল করে ম্যাচ জিততে হবে। সময় তর তর করে এগিয়ে যাচ্ছিল।

দক্ষিণ কোরিয়া স্বপ্নিল আশাও আস্তে আস্তে নিভে যাচ্ছিল। নিভতে থাকা আশায় আলোকিত এক প্রদীপ হয়ে আবির্ভূত হলেন সন। ম্যাচের যোগ করা অতিরিক্ত সময়ে ৭০ গজ দৌড়ে এলেন একাই, ক্ষীপ্র গতিতে। আলতো টোকায় ডি-বক্সে এক পাস বাড়ালেন। আর ওই পাসেই হি-চান-হোয়াং ম্যাচজয়ী গোল করেন। আর তাতেই ২-১ গোলে এগিয়ে যায় দক্ষিণ কোরিয়া। এর কিছুক্ষণ বাদে রেফারি শেষ বাঁশি বাজালে সেকেন্ড রাউন্ডে ওঠার উচ্ছ্বাসে ভেসে যান সন, হোয়াংরা।

সন যে পুরোপুরি ফিট হয়ে বিশ্বকাপ খেলতে নেমেছিলেন তা নয়। প্রত্যেক ম্যাচেই প্রতিরক্ষার জন্য তাকে মাস্ক পরে খেলতে দেখা গেছে। তবে সনে মাস্কের আড়ালে যেন ছিল দুচোখ ভরা স্বপ্ন। ফলত যে ভালোবাসা তাকে কোরিয়ানরা দিয়েছিল, তার প্রতিদান স্বরূপ দক্ষিণ কোরিয়াকে নিয়ে গেলেন বিশ্বকাপের পরের পর্বে।
এই সনের ওপর ভর করেই এবার কাতারের টিকিট পেয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়া। এশিয়ান বাছাই পর্বে দিয়েছিলেন ১৩ ম্যাচে ৭ গোল। এবার সেই ছন্দের ধারাবাহিকতায় সন দ্যুতিতে সেকেন্ড রাউন্ডে উঠল এশিয়ার এ দেশটি। বিশ্বকাপে দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে সেরা সাফল্য ২০০২ সালে। সেবার চতুর্থ হয়েছিল তারা।

এরপর অবশ্য ৪ বার অংশগ্রহণ করলেও তিনবারই তাদের ফিরে যেতে হয়েছিল প্রথম রাউন্ড থেকে। ১২ বছর বাদে, আবারও বিশ্বকাপের প্রথম পর্ব পার করল দক্ষিণ কোরিয়া। এশিয়ান জায়ান্টরা এবার আরেক পরাশক্তি ব্রাজিলের সঙ্গে কেমন করে, সেটিই দেখার অপেক্ষা।

Related posts

NASCAR ভবিষ্যদ্বাণী, বাছাই, এবং মতভেদ: Enjoy Illinois 300-এ কীভাবে বাজি ধরবেন

News Desk

ডেভ পোর্টনয় প্রকাশ করেছেন যে তার বিচ্ছিন্ন স্ত্রীর এখনও তার $150 মিলিয়নের সমস্ত “সম্পূর্ণ অ্যাক্সেস” রয়েছে

News Desk

এক ম্যাচে ১১ গোল সাবিনার

News Desk

Leave a Comment