Image default
খেলা

ব্রাজিলের হলুদ জার্সির করুণ কাহিনী

ব্রাজিলের হলুদ জার্সির পেছনে লুকিয়ে আছে যে করুণ কাহিনী

বর্তমানে বিখ্যাত হলুদ জার্সি ছাড়া ব্রাজিল ফুটবল দলকে কল্পনাই করা যায় না। কিন্তু সবসময়ই ব্রাজিলের জার্সির রঙ এমন হলুদ ছিলো না। এই রঙের জার্সির পেছনে রয়েছে ব্রাজিলের এক চিরকালের দূঃখ। আজ আমরা সেই করুণ কাহিনীই শুনবো।

১৬ই জুলাই, ১৯৫০ সাল। হাজার হাজার মানুষ জড়ো হচ্ছে ব্রাজিলের মারাকানা স্টেডিয়ামে। সেদিন ফুটবল বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচ। মুখোমুখি হচ্ছে ব্রাজিল এবং উরুগুয়ে। সেবারের বিশ্বকাপের ফরম্যাট ছিলো অন্যরকম। ৮টি দলের টুর্ণামেন্টে দ্বিতীয় রাউন্ডে চারটি দল একে অপরের মুখোমুখি হয়। উরুগুয়ে স্পেনের সাথে ২-২ গোলে ড্র করে এবং সুইডেনকে হারায় ৩-২ গোলে।

আর ব্রাজিল সুইডেনকে ৭-১ গোলে এবং স্পেনকে ৬-১ গোলে পরাজিত করে। তাই শেষ ম্যাচটা ব্রাজিল ড্র করলেই প্রথবারের মতো বিশ্বকাপ জিতবে। ওদিকে উরুগুয়ের দরকার জয়। সেসময় ব্রাজিল দল ছিলো ভীষণ শক্তিশালী এবং দুর্দান্ত ফর্মে। উরুগুয়ের ম্যাচের আগে ৫ খেলায় তারা ২৩ গোল করেছিলো। তাই সেদিন যারা স্টেডিয়ামে জড়ো হচ্ছিলেন, তারা বিশ্বকাপ জয়ের প্রস্তুতি নিয়েই যাচ্ছিলেন।

প্রস্তুতি ছিলো স্টেডিয়ামের বাহিরেও। দলের খেলোয়াড়দের জন্য বাইশটি সোনার মেডেল তৈরি করা হয়েছিলো। তৈরি করা হয়েছিলো বিজয়ের গান যা ম্যাচ শেষ হওয়ার সাথে সাথে বাজানো হবে। সেদিন সকালে ব্রাজিলের পত্রিকায় দলের ছবি ছাপিয়ে শিরোনাম করা হয়, এরাই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। সব মিলিয়ে পুরা দেশেই চলছিলো উৎসবের আমেজ।

ব্রাজিল দল সেদিন মাঠে নামে সাদা এবং আকাশি রঙ এর জার্সি পরে। তখন সেটিই ছিলো তাদের জার্সির রঙ। ৪৭ মিনিটে ফ্রিয়াকার গোলে ব্রাজিল এগিয়ে যায়। ৬০ মিনিটে শাফিনো উরুগুয়ের পক্ষে সমতা আনেন। তখনও লক্ষাধিক দর্শকে হইচইয়ে ভরপুর মারাকানা স্টেডিয়াম। ৭৯ মিনিটে উরুগুয়ের ঘিঘিয়া গোল করলে মারাকানায় মুহুর্তে গোরস্থানের নিঃস্তব্ধতা নেমে আসে।

এরপরে ব্রাজিল আর গোল করতে না পারলে উরুগুয়েই বিশ্বকাপ জয় করে। ফলে ম্যাচশেষে বাজলো না কোনও বিজয় সংগীত। সেই তেইশটি সোনার মেডেল কখনোই দেখতে আর পায়নি কেউ। উরুগুয়ের খেলোয়াড়েরা পুলিশ প্রহরায় মাঠ ছাড়েন। তবুও তাদের উল্লাস কাটা হয়ে বিধে অনেকের বুকে। অনেকে স্টেডিয়াম থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেন। সারা দেশে নেমে আসে বিষাদের ছায়া।

এই ফাইনালের পরে ব্রাজিলের ফুটবল দল অমূল বদলে যায়। অনেক খেলোয়াড় আর কখনই জাতীয় দলে খেলেননি। সেই দলটি দুর্দান্ত হওয়া স্বত্ত্বেও পরের বিশ্বকাপে সে দলের কেউই ছিলেন না। এমনকি পুরানো সাদা জার্সিকে অপয়া ঘোষণা করে বদলে ফেলা হয় তাও। বিশেষ পতাকার রঙ এর সাথে ব্রাজিলের সাদা জার্সির মিল না থাকায় তা আরও সমালোচিত হয়। ব্রাজিলের একটি জাতীয় পত্রিকা জার্সির ডিজাইন নিয়ে প্রতিযোগিতা আয়োজন করে।

শর্ত ছিলো, জার্সিতে অবশ্যই জাতীয় পতাকার রঙ থাকতে হবে। আদির গার্সিয়া নামের একজন ডিজাইনারের জার্সি প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়। হলুদ-সবুজের জার্সি, নীল শর্টস এবং সাদা মোজা ছিলো তার ডিজাইন। এই জার্সি পরে ব্রাজিল ১৯৫৪ সালে প্রথম মাঠে নামে। এরপরে ১৯৫৮ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপ জিতলে সে জার্সি বদলের প্রয়োজনীয়তা আর কখনও দেখে দেয়নি।

আর এভাবেই মারকানা ট্রাজেডির পর, হলুদ জার্সি বিশ্বজুড়ে ব্রাজিল দলের প্রতীক হয়ে ওঠে।

Related posts

LSU অনুশীলন নাটকের সময় লেন কিফিনের মেয়ের ভিডিও “পোস্ট করার কথা ছিল না”

News Desk

জেরি জোন্স, অর্থাৎ মিকা পার্সনস, বাকরজ ভক্তদের মন্ত্রের পরে এখনও আফসোস করেছেন

News Desk

চিফ কালি তারকা নিক বোল্টন এক্সটেনশন 3 বছরের জন্য একটি নিখরচায় এজেন্সিতে পৌঁছানোর আগে: প্রতিবেদন করুন

News Desk

Leave a Comment