অন্ধকার ফুঁড়ে আলো দেখানোর প্রত্যয় সানজিদাদের
খেলা

অন্ধকার ফুঁড়ে আলো দেখানোর প্রত্যয় সানজিদাদের

২০১৬ সালে অল্পের জন্য স্বপ্নভঙ্গ। সেবার সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠেও ৩-১ গোলে হার ভারতের কাছে। আজ সাবিনা-সানজিদাদের সামনে আরো একটি ফাইনাল। এবার প্রতিপক্ষ ‘হিমালয় কণ্যা’ নেপাল। আবারও রঙ্গিন স্বপ্নে বিভোর লাল সবুজের সোনার মেয়েরা। অধরা সাফের ট্রফি জিতেই দেশে ফিরতে চায় বাংলার বাঘিনীরা। 

আজ বিকেল সোয়া পাঁচটায় কাঠমুন্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়মা সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নেপালের মুখোমুখি মাঠে নামছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যেই বিক্রি হয়ে গেছে স্টেডিয়ামের সব টিকিট। সাবিনাদের জন্য আজ স্বাগতিক দর্শকরা বাঁধার দেয়াল তুলেই দাড়াতে চাইবে। তবে তাতে দমে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না লাল সবুজের জার্সিধারীদের। বাংলার এই মেয়েরা যে শত সহস্র বাঁধা পেরিয়েই যে আজকের জায়গায় দাড়িয়ে সাবিনারা।



রঙ্গশালার ফাইনালের আগে দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে যে পোস্টটি করেছে মিডফিল্ডার সানজিদা আখতার তাতেই যেন স্পষ্ট তাদের জীবন সংগ্রামের গল্পটা। 

সানজিদা লেখেন ‘যারা আমাদের এই স্বপ্নকে আলিঙ্গন করতে উৎসুক হয়ে আছেন, সেই সকল স্বপ্নসারথিদের জন্য এটি আমরা জিততে চাই। নিরঙ্কুশ সমর্থণের প্রতিদান আমরা দিতে চাই। ছাদখোলা চ্যাম্পিয়ন বাসে ট্রফি নিয়ে না দাঁড়ালেও চলবে, সমাজের টিপ্পনী কে একপাশে রেখে যে মানুষগুলো আমাদের সবুজ ঘাস ছোঁয়াতে সাহায্য করেছে, তাদের জন্য এটি জিততে চাই। আমাদের এই সাফল্য হয়তো আরো নতুন কিছু সাবিনা, কৃষ্ণা, মারিয়া পেতে সাহায্য করবে। অনুজদের বন্ধুর এই রাস্তাটুকু কিছু হলেও সহজ করে দিয়ে যেতে চাই।।


অদম্য গতির পায়ের জাদুতেই সবুজ ক্যানভাসে বাংলাদশের স্বপ্ন আঁকেন সানজিদারা। ছবি- বাফুফে

শেষের লাইনটাই স্পষ্ট বুঝিয়ে দেয় বিশ্বমঞ্চে লাল সবুজের প্রতিনিধিত্ব করেতে কতখানি বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে আজকের জায়গায় আসতে হয়েছে তাদের। পেছনে ফেলে আসা নিজেদের সেই সংগ্রামের দিনগুলোর ভয়াবহতার কথা মনে করেই যেন অনুজদের জন্য সামনের পথটা সহজ করে দেওয়ার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা সানজিদার কন্ঠে।

যারা জীবনের মঞ্চে অন্ধকারের পথ পেরিয়ে বাংলাদেশের নারী ফুটবলকে দেখিয়েছেন আলোর রেখা, তাদের কাছে নেপালের কিছু সংখ্যক দর্শকের চাপ তো নস্যি। মাঠের লরাইটা হবে ১১ বনাম ১১তে। দ্বাদশ খেলোয়াড় হিসেব নেপাল সুবিধা পাবে স্বাগতিক দর্শকদের, তবে তাতে ভয় না পেয়ে গর্জন তুলতে চায় লাল-সবুজের মেয়েরাও। তাদের মনোকল্পে যে দেশটাকে কিছু দেওয়ার তাড়না, অন্ধকার ফুড়ে আলো আনার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা।

২০০৩ সালের সাফে বাংলাদেশকে শিরোপা জিতিয়েছিলো আলফাজ-রজনীরা। তারপর থেকে বাংলার ফুটবলে যেন বড় কোনো শিরোপাই আসেনি। ফুটবল হারিয়েছে আগের সেই জৌলুস। ছেলেদের ফুটবলে একের পর এক ব্যর্থতা ভাবিয়েছে এদেশে ফুটবলের ভবিষ্যত নিয়েই। সেখান থেকে ফুটবলে যেন নতুন আলোর রেখা এনেছে বাঙ্গাল মেয়েরাই। দেশকে এবার কিছু উপহার দিতে চায় তারাও।


একেকজনের কাঁধে কাঁধ রেখেই বাংলার ফুটবলকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় অদম্য মেয়েদের কন্ঠে। ছবি- বাফুফে

আজকের ফাইনালে মাঠে নামার আগে ২০০৩ সালের সেই স্মৃতি মনে করে আবারও লাল সবুজের জার্সিটাকে বড় আনন্দের উপলক্ষ্য এনে দেওয়ার সংকল্প যেন সানজিদার কন্ঠে স্পষ্ট,  ‘বাংলাদেশ পুরুষ জাতীয় ফুটবল দলের হাত ধরে ২০০৩ সালে দক্ষিন এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব পেয়েছিলো বাংলাদেশ। এখনো আমরা সেই গল্প শুনি। বাংলাদেশ ফুটবলের বড় সাফল্যের মহাকাব্যে সেটি উজ্জ্বলতম অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। এবার আমাদের জেতার সময় এসেছে। আমাদের দলের প্রতিটি সদস্য এটি জিততে মুখিয়ে আছে।’

ময়মনসিংহের কলসিন্দুর থেকে হাটি হাটি পা পা করে উঠে আসা সানজিদার জীবনের ফেলে আসা দিনগুলোর কথা স্মরণ করতেই যেন রক্তের শিরায় শিরায় কাপুনি দিয়ে যায় অন্ধকারের চোরা স্রোত। দিনগুলোর কথা মনে করেই যেন এই মিডফিল্ড কারিগর বলে ওঠেন, ‘পাহাড়ের কাছাকাছি স্থানে বাড়ি আমার। পাহাড়ি ভাইবোনদের লড়াকু মানসিকতা, গ্রাম বাংলার দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষদের হার না মানা জীবনের প্রতি পরত খুব কাছাকাছি থেকে দেখা আমার। ফাইনালে আমরা একজন ফুটবলারের চরিত্রে মাঠে লড়বো এমন নয়, এগারোজনের যোদ্ধাদল মাঠে থাকবে, যে দলের অনেকে এই পর্যন্ত এসেছে বাবাকে হারিয়ে, মায়ের শেষ সম্বল নিয়ে, বোনের অলংকার বিক্রি করে, অনেকে পরিবারের একমাত্র আয়ের অবলম্বন হয়ে।’


সানজিদার এই মিষ্টি হাসির পেছনেই রয়েছে বাংলার ফুটবলকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। ছবি- বাফুফে


 
শুধু সানজিদা নয়, বাংলার ফুটবলকে যারা নতুন করে স্বপন দেখিয়েছেন তাদের প্রত্যেকের জীবনের কড়িকাঠে তোলা গল্পটাই যেন উঠে এসেছে একজনের কথায়।

আজ রঙ্গশালায় যখন মাঠে নামবে সানজিদারা, তাদের সামনে স্বাগতিক দর্শকদের বাঁধা থাকলেও পেছনে থাকবে নিজেদের হারতে না দেওয়ার আত্মপ্রত্যয় আর লাল সবুজের গৌরবের এক অধ্যায় লেখার প্রতিজ্ঞা। আর বাদবাকিটা মাঠের খেলায় তো প্রতিপক্ষের সঙ্গে মুখোমুখি টক্কর। 


অদম্য এই মেয়েদের ইস্পাত কঠিন মনোবলেই নতুন আলোর পথে বাংলার ফুটবল। ছবি- বাফুফে

ইতিহাস সৃষ্টি হবে কিনা আজ সেটা জানা যাবে সবুজের ক্যানভাসের লড়াই শেষেই। তবে বাংলার এই দামাল মেয়েরা নিজেদের যে পর্যায়ে নিয়ে গেছে তাতেই যেন অনেকখানি প্রাপ্তি এই দেশটার। জীবন সংগ্রাম পেরিয়ে নিজেদের চেষ্টার সবটুকু ঢেলে দিয়েছেন বাংলার অদম্য মেয়েরা। বাকিটা ফলাফল যাই আসুক তাতে প্রাপ্তির খাতায় একটুও ভাটা পড়বে না বোধহয়। সানজিদাও বললেন সে কথায়, ‘আমরা জীবনযুদ্ধেই লড়ে অভ্যস্ত। দক্ষিন এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের জন্য শেষ মিনিট পর্যন্ত লড়ে যাবো। জয় – পরাজয় আল্লাহর হাতে। তবে বিশ্বাস রাখুন, আমরা আমাদের চেষ্ঠায় কোনো ত্রুটি রাখবো না ইনশাআল্লাহ। দোয়া করবেন আমাদের জন্য।’ 

বাংলার ফুটবলে নতুন আশার আলো দেখানো সানজিদাদের জন্য কোনো বাক্য ব্যয়ই যেন যথেষ্ট নয়। অদম্যকে পেরিয়ে তারা ফুলের সৌরভ ছড়াক ফুটবলের সবুজ গালিচায়, প্রার্থনা করা যেতে পারে এটুকুই।

Source link

Related posts

Harrison Butker's faith-driven commencement address at Benedictine College: Read the speech here

News Desk

টিফানি স্ট্র্যাটন রেসলম্যানিয়া 41 এ পরিষ্কার করে দিয়েছে: এখন সময় এসেছে

News Desk

ক্যালিফোর্নিয়ার স্কুল এবং পরিবারগুলি নিউজের মাধ্যমে অ্যাথলিটদের অংশগ্রহণে আহত হয়

News Desk

Leave a Comment