কাতার বিশ্বকাপে প্রথম হ্যাটট্রিক করে সব আলো নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়েছেন পর্তুগালের গনসালো রামোস। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর জায়গায় দলের শুরুর একাদশে নেমেই তিনি হ্যাটট্রিক করে ফেলেন। তারপর থেকেই আলোচনা, কে এই রামোস? আজ রাত ৯টায় পর্তুগাল-মরক্কো ম্যাচের আগেও রামোসকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বেশ।
শেষ ষোলোয় রোনালদোকে বেঞ্চে বসে রাখিয়ে কোচ ফার্নান্দো সান্তোষ তরুণ রামোসকে নিয়ে বাজি ধরেছিলেন। কোচের আস্থার প্রতিদান দিয়ে হ্যাটট্রিক করে ফেলেন ২১ বছরের তরুণ। অথচ কাতার বিশ্বকাপে রামোসের খেলারই কথা ছিল না। ডিয়েগো জোতার চোটের কারণে সুযোগ পেয়ে যান তিনি। আর প্রথম ম্যাচে সুযোগ পেয়েই রেকর্ড গড়েছেন। বিশ্বকাপ ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ হ্যাটট্রিককারী রামোস। হ্যাটট্রিকের দিনে তার বয়স ছিল ২১ বছর ১৬৯ দিন।

এখনো অবধি পর্তুগাল সেরা খেলাটা খেলেছে সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে, সেটা ঐ রামোসের কল্যাণে। রেকর্ড তার হয়েছে আরো একটি। প্রথম বিশ্বকাপে প্রথম বার শুরুর একাদশে সুযোগ পেয়ে হ্যাটট্রিক করা দ্বিতীয় ফুটবলার তিনি। এরআগে এই কাজটি প্রথম করেছিলেন জার্মানির মিরোস্লাভ ক্লোসা ২০০২ বিশ্বকাপে।

যার বদলি হয়ে নেমেছিলেন রামোস সেই রোনালদো ২০০৬ বিশ্বকাপে সর্বকনিষ্ঠ পর্তুগিজ ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপে গোল করার রেকর্ড গড়েন। দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ এখন রামোস। সুইজারল্যান্ডকে ৬-১ গোলে বিধ্বস্ত করায় পর্তুগিজদের প্রত্যাশা দ্বিগুণ হয়েছে। মরক্কো ম্যাচে রোনালদোকে ছাপিয়ে হাজার ওয়াটের আলো যে রামোসের দিকে থাকবে সেটিই স্বাভাবিক! তিনি কি পারবেন প্রথম ম্যাচের পারফরম্যান্স কোয়ার্টার ফাইনালেও টেনে নিয়ে যেতে?

অন্যদিকে কাতার বিশ্বকাপে মরক্কোর পারফরম্যান্স ছিল চমকে ভরপুর। গ্রুপ পর্বে বেলজিয়ামের সোনালি প্রজন্মকে বিদায় করার পর ক্রোয়েশিয়াকেও রুখে দিয়েছে আফ্রিকার এ দেশটি। শেষ ম্যাচে কানাডাকে হারিয়ে ১৯৮৬ বিশ্বকাপের পর গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ ষোলোয় জায়গা করে নেয় মরক্কো। আর এখানে স্পেনকে হারিয়ে গোটা ফুটবল দুনিয়ায় হইচই ফেলে দেয় মরক্কো। কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগালকে হারাতে পারলে দেশটিতে যে আনন্দের বন্যা বয়ে যাবে সেটি সহজেই অনুমেয়। এই কাজটি করতে হলে যাকে আবার জ্বলতে হবে, তিনি হলেন হাকিম জিয়েচ। মরক্কোর তিন যুগের আক্ষেপের অবসান ঘটাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। টানা দুই ম্যাচে অসাধারণ পারফর্ম করা জিয়েচকে নিয়ে তাই আলোচনাটা ঘুরেফিরে আসছে। তিনি অনেকটা অলরাউন্ডার ফুটবলার। রাইট উইংগার আবার অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবেও খেলতে জানেন। নানা পজিশনে খেলতে পারেন বলেই তিনি মরক্কোর সবচেয়ে বড় তারকা। পর্তুগাল ম্যাচেও মরক্কোনরা জিয়েচের দিকেই তাকিয়ে থাকবে।

তবে জিয়েচ মরক্কোর হয়ে খেললেও তার জন্ম আবার নেদারল্যান্ডসে। ডাচ ক্লাব হীরেনভিনের হয়ে পেশাদার ফুটবল শুরু করেছিলেন। এরপর আয়াক্সের জার্সিও গায়ে চাপিয়েছেন। ২০১৫ সালে জিয়েচ পাড়ি জমান মায়ের জন্মভূমি মরক্কোতে। তারপর মায়ের জন্মভূমি অর্থাৎ মরক্কোর হয়েই খেলার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। ২০২০ সালে আয়াক্স ছেড়ে নাম লেখান চেলসিতে। খেলার কৌশল এবং ফ্রি-কিকের সক্ষমতা তার অসাধারণ। পর্তুগালের বিরুদ্ধে জিয়েচ আরেক বার অসাধারণ নৈপুণ্য প্রদর্শন করতে চাইবেন সেটি কি আর বলতে! এখন দেখাই যাক, মরক্কোর হয়ে তিনি আরেকটি নতুন ইতিহাসের জন্ম দিতে পারেন কি না।

