Image default
স্বাস্থ্য

ভয়ংকর ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’-এ আক্রান্তের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে মৃত্যুপুরীতে পরিণত ভারত এখন ধুঁকছে ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ আতঙ্কে। ভয়ংকর ছত্রাকজনিত এই রোগে ভারতে এখন পর্যন্ত ৮ হাজার ৮০০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। যার মধ্যে প্রাণহানি ঘটেছে ২১৯ জনের। যে কারণে তামিলনাড়ু, গুজরাট, ওডিশা, রাজস্থান ও তেলেঙ্গানা- এই পাঁচ রাজ্যে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসকে মহামারি ঘোষণা করা হয়েছে।

এদিকে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের পাশাপাশি নতুন আতঙ্ক ব্ল্যাক ফাঙ্গাসও চলে এসেছে বাংলাদেশে। এতে আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যুও ঘটেছে।

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস -এর লক্ষণ:
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় মিউকোরমাইকোসিস বলে। এটি একটি ছত্রাক কিন্তু ছোঁয়াচে নয়। যেসব করোনা রোগী অতিরিক্ত স্টেরয়েড ওষুধ নিয়ে রোধ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে ফেলেন তাদের এই ছত্রাকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের লক্ষ্মণ সম্পর্কে চিকিৎসরা বলেন, এটি চোখে সংক্রমণ ঘটালে আক্রান্তের নাক বন্ধ হয়ে যায়, নাকে ঘা হয়ে রক্তক্ষরণ হয়, রোগী চোখে ঝাপসা দেখে অর্থাৎ দৃষ্টি শক্তি কমে আসে, চোখের ভেতর থেকে রক্তক্ষরণ হয়, চোখ জ্বালা পোড়া করে, কারো কারো মুখের একদিকে ফুলে যায়, নাক অথবা দাঁতের মাড়ি কালো হয়ে যায়, এক পর্যায়ে কফের সঙ্গে রক্ত যায়, রক্ত বমি হয়, মাথা ব্যথা, দাঁতে ব্যথা ও ঘাড়ে ব্যথা শুরু হয়। ত্বকে কালো দাগ দেখা দেয়।

কীভাবে আক্রান্ত হয়?
ছোঁয়াচে না হলে মানুষ কীভাবে এতে সংক্রমিত হয় সে বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সুলতানা শাহানা বানু বলেন, এ ছত্রাক নাক দিয়ে প্রবেশ করে। নাকে ও চোখে সংক্রমণ বাড়ায়। এমনকি পেটেও আস্তানা গাড়তে পারে এই ফাঙ্গাস।

ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের বিষয়ে বারডেমের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বিবিসিকে জানান, এ ছত্রাক আমাদের পরিবেশে সবসময়েই থাকে। মানুষের শরীরেও সবসময়ে থাকে। কিন্তু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে তখন এটা রোগ হিসাবে দেখা দেয়। বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত, তাদের ঝুঁকি বেশি থাকে। আবার স্টেরয়েড গ্রহণ করা ব্যক্তিরাও এতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। করোনা চিকিৎসায় অতিরিক্ত স্টেরয়েড ব্যবহারকেই পরবর্তীতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ার কারণ বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মুশতাক হোসেন।

তিনি আরোও জানিয়েছেন, যে কারণে রোগীর অবস্থা বিবেচনা করে সতর্কতা নিয়ে চিকিৎসক প্রয়োজনীয় সব ওষুধ দিতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোন ওষুধে কী ধরণের নির্দেশনা দিয়েছে সেটিও দেখতে হবে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসক লেলিন চৌধুরী জানান, রক্ত, চামড়া, মুখ, নখসহ শরীরের নানা জায়গায় ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ইনফেকশন হতে পারে এবং সাধারণত রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এটি চিহ্নিত করা সম্ভব হয়।

এই ভয়ঙ্কর ছত্রাক থেকে কী করে দূরে থাকা যায়?
মাইক্রোবায়োলজিস্ট এবং ভাইরোলজিস্টরা বলছেন, এসব ছত্রাক পরিবেশে বিশেষ করে মাটি, পচে যাওয়া জৈব পদার্থে (যেমন: পচা ফলমূল, পাতা বা পশুর বিষ্ঠা) ছড়িয়ে থাকে। ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের জীবাণু প্রাকৃতিক ভাবে অরগানিক কিংবা ময়লার মধ্যে থাকেই। তাই এসব থেকে দূরে থেকে সর্বদা পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। একই মাস্ক বার বার ব্যবহার করা যাবে না। শরীরকে দুর্বল রাখা যাবে না। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে।

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস শনাক্ত করা হয় যেভাবে:
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে বলে জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।
কোনো ব্যক্তি এই ছত্রাকে আক্রান্ত কি না তা জানতে মাইক্রোস্কোপের স্লাইডে পরীক্ষা করে কিংবা কালচার করে নিশ্চিত হওয়া যায়। তাছাড়া প্রাথমিকভাবে সিটি স্ক্যান করেও নির্ণয় করা সম্ভব।

Related posts

জাহাজের বিস্ময়কর স্বাস্থ্য পরিদর্শন ব্যর্থ হওয়ার পরে ক্রুজ জাহাজের উদ্বেগজনক অবস্থার প্রকাশ

News Desk

The 9 most common questions women over 40 ask their doctors, according to a menopause expert

News Desk

গ্রামীণ হাসপাতালগুলি COVID তহবিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে অপারেশন বজায় রাখতে লড়াই করে

News Desk

Leave a Comment