গ্রিক শব্দ হেমিক্রানিয়া থেকে মাইগ্রেন শব্দের উৎপত্তি। যার অর্থ মাথার একদিকে ব্যথা। মাথার একদিকে ব্যথা হয় বলে বিখ্যাত হলেও দুদিকেও ব্যথা হতে দেখা গেছে। যাদের মাইগ্রেন হবার প্রবণতা আছে, তাদের শব্দ, আলো, গন্ধ, বাতাসের চাপের তারতম্য ও কিছু খাবার যেমন চকলেট, আঙুরের রস, পনির ইত্যদির প্রভাবে পুনরায় নতুন করে ভয়ংকর মাথাব্যথা শুরু হতে পারে।

মাইগ্রেনের ব্যথা যাঁদের হয়, তাঁরাই কেবল বোঝেন এই ব্যথার যন্ত্রণা কেমন। এ ক্ষেত্রে মাথার দুই পাশে তীব্র ব্যথা হয়। সাধারণত নারীদের ক্ষেত্রে এই ব্যথা বেশি হতে দেখা যায়। কিছু ঘরোয়া উপায় মেনে চললে মাইগ্রেনের ব্যথা অনেকটাই কমানো যায়।
ভারতের জীবনধারা ও ফ্যাশনবিষয়ক বিখ্যাত সাময়িকী ফেমিনার এক প্রতিবেদনে মাইগ্রেনের ব্যথা কমতে সাহায্য করে এমন কিছু খাবারের কথা বলা হয়েছে। এসব খাবার হয়তো মাইগ্রেনের ব্যথা থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি দেবে না, তবে ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে। মাইগ্রেনের ব্যথা নিরাময়ে খাবার উত্তম ওষুধ। অনেক সময় এটা নির্ভর করে আপনি কী খাচ্ছেন আর কখন খাচ্ছেন, তার ওপর।
আসুন জেনে নিই মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে যে খাবার গুলো খাবেন-
বাদাম-বীজ

শরীরে ম্যাগনেশিয়ামের অভাব হলে দীর্ঘ মাথা ধরার প্রবণতা বেড়ে যায়। তাই রোজকার খাদ্যতালিকায় এমন খাবার রাখুন, যা থেকে এই অপুষ্টি কম করা সম্ভব। নানা রকম বাদাম খেতে পারেন ঘুম থেকে উঠে। সালাদের সঙ্গে ফ্ল্যাক্সসিড, চিয়া সিড, বা কুমড়ার বীজ মিশিয়ে দিতে পারেন। এতে ম্যাগনেশিয়ামের পাশাপাশি ফাইবারও রয়েছে প্রচুর।
ভেষজ চা

শরীর হাইড্রেটেড রাখতে ভেষজ চা খেতেই পারেন। তাতে মাথা ধরার সম্ভাবনা কমে। তা ছাড়াও ‘ইন্টারন্যাশন্যাল জার্নাল অফ প্রিভেন্টিভ মেডিসিন’ প্রকাশিত এক গবেষণাপত্র অনুযায়ী পিপারমিন্ট-টি খাওয়া সাইনাসের জন্য উপকারী। তাই মাথা ধরার প্রবণতা কমাতে পিপারমিন্ট-টি খাওয়া শুরু করতে পারেন।
সবুজ শাকসবজি

মাইগ্রেনের ব্যথা থাক বা না থাক, সুস্থতার জন্য সবুজ শাকসবজি গুরুত্বপূর্ণ। পালং শাক, ব্রকোলির মতো সবজিতে ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন বি-তে ভরপুর। দুটি উপাদানই মাইগ্রেনের ব্যথা দূর করতে সহায়ক। বিশেষ করে নারীর জন্য খুবই উপকারী।
মাশরুম

মাশরুমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে রিবোফ্লাবিন বা বি২, যা অন্ত্রের রোগের পাশাপাশি মাথাব্যথা দূর করতে সহায়ক। অন্ত্রের সমস্যার কারণেও মাথাব্যথা হতে পারে। উচ্চমাত্রায় রিবোফ্লাবিন সমৃদ্ধ খাবার, যেমন মাশরুম, বাদাম ও ডিম শরীরের জন্য খুবই দরকারি। কারণ, এসব খাবার মাথাব্যথা দূর করতে সাহায্য করে।
কলা

কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম, যা মাইগ্রেনের ব্যথার বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে। কলা দ্রুত মাথাব্যথা কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া হাইপোগ্লাইসেমিয়া থেকে উদ্ভূত মাথাব্যথা থেকেও সুরক্ষা দেয় কলা। কলায় রয়েছে ৭৪ শতাংশ পানি, যা শরীরকে আর্দ্র রাখে।
তরমুজ

পানি বেশি খেলে মাইগ্রেন অ্যাটাকের সম্ভাবনা কমে এটা অনেকেরই জানা। তবে শরীর হাইড্রেটেড রাখতে শুধু পানি খাওয়াই যথেষ্ট নয়। সঙ্গে এমন খাবার খেতে হবে যাতে পানির পরিমাণ বেশি। তরমুজের মতো ফলে ৯২ শতাংশ পানি থাকে। তাই খিদে পেলে প্যাকেটের স্ন্যাক্স বার না খেয়ে তরমুজ খান।
পানি
শরীরে প্রায় সমস্যা দূর করতে সহায়ক পানি। পানি আমাদের শরীরকে হাইড্রেট রাখে। মাথাব্যথার অন্যতম কারণ হলো ডিহাইড্রেশন। পানি শরীরকে আর্দ্র রেখে ব্যথার তীব্রতা কমায় এবং মাইগ্রেনের কারণে সৃষ্ট মাথাব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
মাইগ্রেনে যেসব খাবার এড়িয়ে চলবেন
চা, কফি ও কোমলপানীয়, চকলেট, আইসক্রিম, দই, দুধ, মাখন, টমেটো ও টক জাতীয় ফল খাবেন না। গম জাতীয় খাবার, যেমন রুটি, পাস্তা, ব্রেড ইত্যাদি।আপেল, কলা ও চিনাবাদাম, পেঁয়াজ এসব খাবার মাইগ্রেনের ব্যথা হলে না খাওয়াই ভালো। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।