Image default
স্বাস্থ্য

কোভিডে আক্রান্তদের প্রয়োজন হার্ট অ্যাটাক নিয়ে সতর্ক থাকা ‘

বর্তমান কোভিড-১৯ মহামারী বিশ্বব্যাপী এক কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এই দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের পাশাপাশি আমাদের শারীরিক নানা সমস্যারও সৃষ্টি করছে। করোনার পর মানব শরীরে রক্ত জমাট বাঁধা ও ক্ষতিকারক ইমিউন প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে যা শরীরের সামান্য থেকে গুরুতর সমস্যার কারণ হতে পারে। আর এই সমস্যা কোভিড আক্রান্ত হওয়ার প্রাথমিক পর্যায় থেকেই অনেকের শরীরে পরিলক্ষিত হয়। আক্রান্ত রোগীদের ইনট্রাভেনাস লাইন, ক্যাথেটার, ধমনী ও পায়ের আঙ্গুলের মোঁ শরীরের নানা অংশে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে।

Sars-CoV-2 ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্ত জমাট বাঁধা ও ক্ষতিকারক ইমিউন প্রতিক্রিয়া বেশি হওয়ার কারণ ভাইরাসে আক্রান্তের ফলে শরীরের ভেতর একই সময়ে বিভিন্ন ক্ষতিসাধন শুরু হয়ে যায়। এই সমস্যাগুলো ফুসফুসে রক্ত প্রবাহকে সীমাবদ্ধ করে ফেলে যা কোভিড রোগীদের শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি সৃষ্টি করে। রক্তে পাওয়া ছোট কোষ হলো প্লেটলেট যা শরীরে সৃষ্ট রক্তপাত বন্ধ করতে বা প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। কিন্তু যখন এই প্লেটলেট সঠিকভাবে কাজ করে না, তখন তা স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাকের মতো গুরুতর কারণের উৎস
হয়ে দাঁড়ায়।

গবেষণা থেকে জানা যায় যে গুরুতরভাবে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে এই রক্ত জমাট বাঁধা সমস্যাটি বিপজ্জনক হয়ে যেতে পারে। এসময় আমাদের শরীরে অ্যান্টিবডি উৎপন্ন হয়। তবে উৎপাদিত অটো-ইমিউন অ্যান্টিবডিগুলো আমাদের দেহের প্রতিরক্ষার কার্যকারিতাকে ধ্বংস করে এবং রক্তে সঞ্চালিত হওয়ার
সাথে সাথে তারা ধমনী, এবং শিরায় জমাট বাঁধতে শুরু করে। এই সমস্যাটি মানুষকে আরো অসুস্থ করে ফেলে।

একটি বিশেষ গবেষণা থেকে জানা যায়, কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে সৃষ্ট যে অ্যান্টিবডি ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম, তার সুগার লেভেল সুস্থ মানুষের অ্যান্টিবডিগুলোর চেয়ে ভিন্ন। এই অ্যান্টিবডিগুলি যখন সুস্থ কোষগুলিতে সঞ্চালিত হয় তখন প্লেটলেটের কার্যকলাপে উন্নতি ঘটে। তবে এসকল অ্যান্টিবডি যেগুলো কোভিড-১৯ সংক্রমণ বন্ধ করার জন্য তৈরি হচ্ছে, তা আসলে মানুষের শরীরে রক্ত জমাট বাঁধা সমস্যারও কারণ। এই অ্যান্টিবডিগুলো মানুষের শরীরে কোনো ক্ষত না থাকা সত্ত্বেও অভ্যন্তরীণ রক্ত জমাট সৃষ্টি করছে। যার ফলে অনেক রোগীর স্ট্রোক কিংবা হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে।

ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হসপিটালে ভর্তি হওয়া বেশির ভাগ রোগীর শরীরে এই অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। ফলে এসকল রোগী থ্রম্বোসিস বা পালমোনারি এমবোলিজমের মতো গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জানা গেছে, ক্লিনিকাল প্যারামিটারের মধ্যে এই হাই ফ্যাক্টর ভি এবং কোভিড-১৯ এর মধ্যকার সম্পর্ক ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী। এ ফ্যাক্টরটি শুধুমাত্র রক্ত জমাট বাঁধার হিসেবে চিহ্নিত তা নয়, বরং এটি ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের সনাক্ত করার পন্থা হিসেবেও কাজ করে। আরো জানা গেছে, এটি অ্যান্টি-ফসফোলিপিড সিন্ড্রোম নামক একটি অটোইমিউন ক্লোটিং অবস্থার ওপর ফোকাস করে যেখানে অ্যান্টিবডিগুলি জমাট বাঁধার কারণ কোষের পৃষ্ঠকে আক্রমণ করে। এমনকি কোভিড-১৯ সহ অন্যান্য ভাইরাল সংক্রমণগুলোও ক্ষণস্থায়ী এপিএল অ্যান্টিবডির বৃদ্ধি ঘটায়।

কোভিড-১৯-এ সাধারণত ক্ষণস্থায়ী এপিএল অ্যান্টিবডিগুলো অ্যান্টি-ফসফোলিপিড সিন্ড্রোমের মতো অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে কিনা এ নিয়ে গবেষণা হয়েছে। এই গবেষণা সম্পর্কিত ল্যাব স্টাডিতে, কোভিড আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে যাওয়া রোগীর অ্যান্টিবডির সাথে এপিএল রোগীদের অ্যান্টিবডিগুলোর নিউট্রোফিলের মিল পাওয়া গেছে। এই সমস্যাটি বর্তমানে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য যে ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছে তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও হতে পারে। রোগীকে যথাযথ অ্যান্টি-কোয়াগুলেটরি থেরাপিসহ বিভিন্ন চিকিৎসা করে এই সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞান এ বিষয়ে আরো বিস্তর গবেষণা করছে যার ফলে ধারণা করা হচ্ছে, অচিরেই এসকল সমস্যা থেকে সাধারণ মানুষকে উত্তরণ করা সম্ভব হবে।

দীর্ঘ তিন দশক ধরে জনগণকে উন্নতমানের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত ভারতের ইয়াশোদা গ্রুপ। বাংলাদেশ থেকে অনেক রোগী প্রতি বছর সুচিকিৎসার জন্য ভারতীয় হাসপাতালগুলোতে পাড়ি জমান। যাদের অনেকেরই প্রথম পছন্দ ইয়াশোদা হসপিটালস। রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে চিন্তার রোগ হলো হৃদরোগ। শুধুমাত্র কার্ডিওলজি নয় বরং স্বাস্থ্যসেবার প্রায় সকল ক্ষেত্রেই অত্যাধুনিক সরঞ্জাম এবং প্রশিক্ষিত কর্মীদের প্রবর্তনের সাথে মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে ইয়াশোদা হসপিটালস সর্বদাই নিয়োজিত।

লেখক : কনসালটেন্ট ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট, ইয়াশোদা হসপিটালস, হায়দ্রাবাদ

Related posts

এআই প্রযুক্তির লক্ষ্য রোগীদের তাড়াতাড়ি রোগ ধরতে সাহায্য করা, এমনকি ‘তাদের জৈবিক বয়সের বিপরীতে’

News Desk

শত শত গ্রামীণ হাসপাতাল বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে, গবেষণায় দেখা গেছে: ‘বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে’

News Desk

প্রথম এপিনেফ্রিন অনুনাসিক স্প্রে মূল FDA বাধা দূর করে

News Desk

Leave a Comment