Image default
লাইফ স্টাইল

সেন্টমার্টিনে কিভাবে যাবেন ও খরচ কত পড়বে

সেন্টমার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। সেন্টমার্টিন দ্বীপের অপর নাম ‘নারিকেল জিঞ্জিরা‘। সাগরের মাঝে হওয়ায় নাবিকরা বা সেখানকার জেলেরা পানির তৃষ্ণা দূর করতে প্রচুর নারিকেল গাছ রোপণ করেন। সম্ভবত সেখান থেকেই নারিকেল জিঞ্জিরা নামকরণ করা হয়।
তবে দ্বীপটির নামকরণ নিয়ে অনেক মতবিরোধ রয়েছে। এটি বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের জেলা কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত। সেন্টমার্টিন দ্বীপের আয়তন মাত্র ৩৬ বর্গকিলোমিটার। হুমায়ুন আহমেদের দারুচিনি দ্বীপ সিনেমার মাধ্যমে এই দ্বীপের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। জেনেনিন সেন্টমার্টিন কিভাবে যাবেন ও তার খরচ কত:
১. কক্সবাজার হয়ে সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন শীপ দিয়ে। এখান থেকে দুইভাবে যেতে পারবেন। সেগুলো হলো-সরাসরি কক্সবাজার টু সেন্টমার্টিন। আরেকটা উপায় হলো-কক্সবাজার থেকে টেকনাফ। সেখান থেকে সেন্টমার্টিন। এইভাবে একটু কষ্টসাধ্য এবং খরচও একটু বেশি হবে।

২. সবচেয়ে পারফেক্ট উপায় হচ্ছে সরাসরি টেকনাফ থেকে যাওয়াটা। চট্টগ্রাম টু টেকনাফ বাস পাবেন। টেকনাফের জেটি ঘাটে নেমে শীপে উঠে যাবেন। শীপের ভাড়া ৬৫০ থেকে ১৮০০ টাকার আশেপাশে হয়।

৩. আর যারা একটু এডভেঞ্চার প্রিয় মানুষ তারা টেকনাফে যেয়ে ট্রলারে করে যেতে পারেন। ট্রলার ভাড়া ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকা হয়ে থাকে।

৪. চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফ বাস ভাড়া ৪০০ টাকা। সৌদিয়া বাস পপুলার।
৫. টেকনাফে নেমে নাস্তা করতে ৫০/৬০ টাকা খরচ হবে ডিম-পরোটা বা এরকম কিছু নাস্তা করলে।

৬. সেন্টমার্টিনে নেমে রিকশা নিতে পারেন। তবে শীপ যখন জেটিতে পৌছায় তখন ৫০-৮০ টাকার রিকশা ভাড়া ২০০/২৫০ হয়ে যায়! তাই আমি বলবো একটু হেটে দূরে গিয়ে রিকশা নিন। কমে পাবেন। তবে রিসোর্টের দূরত্ব বুঝে ভাড়া ফুরাবেন। কারণ এই দ্বীপে দূর বলতে কোনো শব্দ নাই। হেটেই সব জায়গায় যেতে পারবেন। বাইসাইকেল ভাড়া ৩০-৬০ টাকা।

৭. লাঞ্চ-ডিনার খরচ ১৫০-২০০ টাকা হবে। প্রতিটা মাছ ১০০-২০০ এরকম দামে পাবেন। দাম ফুরাবেন। যে দাম বলবে সেই দামে কিনবেন না। রেস্টুরেন্টগুলোতে মাছ সাজানো থাকে। ওখান থেকে পছন্দ করে অর্ডার দিবেন। ওরা রান্না করে আপনাদেরকে দিবে। আবার প্যাকেজ সিস্টেম পাবেন। প্যাকেজে ভর্তা,ডাল,মাছ সবই থাকবে। মাছও আপনার পছন্দমতো হবে।

৮. হোটেল ভাড়া উপরের লিংক থেকে দেখে নিবেন। বুকিং দিতে গেলে ভাড়া নিয়ে আপনার আইডিয়া হয়ে যাবে। তবে ১৫০০-২৫০০ টাকায় ভালো ভালো রুম পাবেন। ধরুন, ২০০০ টাকায় রুম নিয়েছেন ৪ বন্ধু মিলে। তাহলে একজনের ভাড়া পড়বে ৫০০ টাকা। ওখানে সব জিনিসের দাম একটু বেশি। তাই যে জিনিসগুলো ওখানে বারবার লাগবে সেগুলো কিনে নিয়ে যাবেন পর্যাপ্ত। নাহলে ১০ টাকার জিনিস ১৫ টাকা দিয়ে কিনতে হবে! দাম কতটা বেশি রাখতে পারে বুঝতেই পারছেন।

৯. নিজের ব্যক্তিগত খরচ আলাদা হিসাব করবেন। মোটামুটি খরচ নিয়ে একটা আইডিয়া হয়ে যাবে এভাবে হিসাব করলে। ৭-১০ জনের গ্রুপের জন্য চট্টগ্রাম থেকে সেন্টমার্টিন খরচ হিসাব করলে জনপ্রতি ৩৫০০ টাকার আশেপাশে খরচ হতে পারে। ঢাকা থেকে হলে ৪৫০০-৫০০০ টাকা লাগতে পারে । আনুমানিক একটা খরচের হিসাব দিলাম। তবে সবসময় এক্সট্রা টাকা নিয়ে যাবেন। বিপদের বন্ধু হিসেবে।

সেন্টমার্টিনে থাকার হোটেলের নাম ও রুম ভাড়া কত: সেন্টমার্টিনে কমদামি হোটেল পাবেন আবার বেশি দামি হোটেলও পাবেন। যদিও ওগুলো হোটেল না, রিসোর্ট।

ব্লু মেরিনরিসোর্ট (Blue marine Resort): সেন্টমার্টিন দ্বীপের ফেরি ঘাটের খুব কাছেই ব্লু মেরিন রিসোর্টের অবস্থান। ব্ল-মেরিন রিসোর্টের এসিযুক্ত ডাবল বেডরুমের ভাড়া ১৫০০০ টাকা এবং নন-এসি ৫০০০ টাকা, ট্রিপল রেডরুমের প্রতিটির ভাড়া ৩০০০ টাকা, ছয়জনের বেডরুমের ভাড়া ৪০০০ টাকা এবং দশজনের বেডরুমের ভাড়া ৫০০০ টাকা।

কোরাল ভিউ রিসোর্ট (Coral View Resort) : সেন্টমার্টিন জাহাজ ঘাটের বাম পাশে অর্থাৎ পূর্ব বীচ সংলগ্ন কোরাল ভিউরিসোর্টটি গড়ে তোলা হয়েছে। কোরাল ভিউ রিসোর্টে সি ভিউ রুমের ভাড়া ২৫০০ থেকে ৬০০০ টাকা।

প্রাসাদ প্যারাভাইস রিসোট (Praasad Paradise Resort) : সেন্টমার্টিন বাজারের ভেতর দিয়ে ব্লু মেরিন রিসোর্ট পার হয়ে আরো কিছুটা উত্তর দিকে এগিয়ে গেলে সুদৃশ্য প্রাসাদ প্যারাডাইস। বিভিন্ন ধরনের ১৬টি রুমের যেকোন একটি ভাড়া নিতে খরচ করতে হবে ২০০০-৫০০০ টাকা।

নীল দিগন্তে রিসোর্ট (Neel Digante Resort): সেন্টমাটিন দ্বীপের দক্ষিণ বীচের কোণাপাড়ায় অবস্থিত নীল দিগন্তে রিসোর্টটি জেটি থেকে বেশখানিকটা দুরে অবস্থিত। নীল দিগন্তে রিসোর্টের নানা ধরণের কটেজ টাইপ রুমে থাকতে খরচ হবে ১৫০০-৫০০০টাকা।

লাবিবা বিলাস রিসোট(Labiba Bilas Resort) : পশ্চিম বীচে অবস্থিত লাবিবা বিলাস বের্তমানে দ্যা আটলান্টিক নামে পরিচিত) রিসোর্টে রাত্রি যাপনের জন্য ৪৩ টি কক্ষ রয়েছে। আর এখানে থাকতে আপনাকে খরচ করতে হবে ৩৫০০ টাকা থেকে ১২০০০ টাকা পর্যন্ত।

প্রিন্স হেভেন রিসোর্ট (Prince Heaven Resort): উত্তর বিচে অবস্থিত প্রাসাদ প্যারাডাইস সংলগ্ন প্রিন্স হেভেন রিসোর্টে মোট ২৪ টি কক্ষ এবং একটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে।প্রিন্স হেভেন রিসোর্টের রুম ভাড়ার পরিমাণ ১,৫০০-৩,৫০০ টাকা।

ড্রিম নাইট রিসোর্ট (Dream Night Resort) : পশ্চিম বীচের শেষ প্রান্তে অবস্থিত ড্রিম নাইট রিসোর্টের প্রতি কক্ষে ২ থেকে ৪ জনের রাত্রিযাপনের সুঘোগ। এই রিসোর্টে থাকতে হলে আপনাকে খরচ করতে হবে ১৫০০ থেকে ৩৫০০ টাকা পর্যন্ত।

সায়রী ইকো রিসোর্ট (Sayari Eco Resort): দক্ষিণ বীচে নজরুল পাড়ায় অবস্থিত সায়রী ইকো রিসোর্ট নান্দ্যনিকতা অনন্য। সায়রী ইকো রিসোর্টের বিভিন্ন ক্যাটাগরির ১৮টি রুমে ১৫০০ থেকে ৩০০০ টাকায় রাত্রিষাপনের সুযোগ রয়েছে।

সমুদ্র কুটির রিসোর্ট (Sumudra Khtir Resort) : সেন্টমার্টিনের দক্ষিণ বীচের কোণাপাড়ায় সমুদ্র কুটির রিসোর্টটি অবস্থিত। এই রিসোর্টে রাত্রিষাপনের জন্য ২০০০ টাকা থেকে ৩৫০০ টাকা খরচ করতে হবে।

ব্লু লেগুন রিসোর্ট (Blue Lagoon Resort) : সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ পশ্চিম কোণে অবস্থিত বৃলু লেগুন রিসোর্টের প্রতিটি কক্ষে ২ থেকে ৪ জন থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। ব্লু লেগুন রিসোর্টের প্রতি দিনের জন্য ভাড়া গুনতে হবে ১৫০০ থেকে ৩৫০০ টাকা।

পান্না রিসোর্ট (Panna Resort) : পশ্চিম বীচে অবস্থিত পান্না রিসোর্টটি কম খরচে সাগর লাগোয়া পরিচ্ছন্ন রিসোর্টগুলোর মধ্যে অন্যতম। পান্না রিসোর্টে প্রতি রাতের জন্য রুম ভাড়া ১৫০০ টাকা থেকে ৩৫০০ টাকা।

সিটিবি রিসোর্ট (CTB Resort): পশ্চিম বীচে অবস্থিত সি টি বি রিসোর্টে রাব্রিষাপনের জন্য রুম ভাড়া লাগবে ১৫০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত।

সী প্রবাল রিসো্ট (Sea Probal Resort) : উত্তর-পশ্চিম বিচ।

লাইটহাউজ রিসোর্ট (Light House Resort) : দক্ষিণ পশ্চিম বিচ।

মিউজিক ইকো রিসোট (Music Eco): দক্ষিণ পশ্চিম বিচ।

সীমানা পেরিয়ে রিসোট (Shimana Periye Resort): পশ্চিম বীচ।

সেন্ট মাটিন রিসোর্ট : অবকাশ পর্যটন লিমিটেড এর রিসোর্ট। পশ্চিম বিচে অবস্থিত কয়েক ধরণের রুম প্রতি ভাড়া ১৫০০-৩৫০০ টাকা।

সী ভিউরিসোট : নিজন্ব রেস্টুরেন্টসহ ১৬টি রুম ও ৪টি তাবু রয়েছে। অধিকাংশ রুম থেকে সমুদ্র দেখা যায়। রুম ভাড়া ১২০০-৩,০০০ টাকা।

সী ইন: সেন্টমার্টিন বাজারের কাছে এর অবস্থান। ২৬টি কক্ষের এই হোটেলে প্রতি রুমের ভাড়া ২,০০০-৩,৫০০টাকা। এখান থেকে সমুদ্র দেখার কোনো উপায় নেই।

ডায়মন্ড সিরিসোট : পশ্চিম বীচ, ভাড়া ১২০০-২৫০০।

হোটেল স্যান্ড শোর : বাজার এলাকা, ভাড়া ১২০০-২৫০০।

হোটেল সী ফাইন্ড : পশ্চিম বীচ, ভাড়া ২০০০-৪০০০।

ফরহাদ রিসোট : পশ্চিম বীচ, ভাড়া ১২০০-২৫০০।

কিংসুক ইকো রিসোর্ট : গলাচিপা, ভাড়া ১৫০০-৩০০০।

লাইট হাউজ রিসোর্ট : পশ্চিম বীচ, ভাড়া ১৫০০-৩০০০।

সমুদ্র কানন: পশ্চিম বীচ, নেভী রোড়। ভাড়া ১২০০-২৫০০।

সেন্টমার্টিনে কোথায় ঘুরবেন: সেন্টমার্টিন এতো ছোট একটা দ্বীপ যে আপনি একদিন হাতে নিয়ে ঘুরতে বের হলে পুরো দ্বীপ ঘুরে ফেলতে পারবেন। এক্ষেত্রে বাইসাইকেল নিয়ে ঘুরাই ভালো।

১. ঘন্টাপ্রতি ৩০-৬০ টাকায় এসব বাইসাইকেল পেয়ে যাবেন। এগুলোর কোয়ালিটি বা বিভিন্ন কারণে দামের তারতম্য হয়। আপনার যেটা ভালো লাগবে সেটা নিয়ে বের হয়ে যাবেন। এর চারপাশেই সাগর।

২. দিনের বেলা ভাটার সময় বাইসাইকেল চালিয়ে চলে যাবেন ছেঁড়াদ্বীপ। যদিও ট্রলারে বা স্পিডবোটে করে যাওয়া যায়। কিন্তু বন্ধুবান্ধবের ট্যুর হলে অবশ্যই বাইসাইকেলে যাবেন। জোয়ারের সময়টা জেনে যাবেন যেন ওই সময়ের আগে মূল দ্বীপে ফিরে আসতে পারেন। নাহলে বিপদে পড়বেন। ভাটার সময় সেন্টমার্টিনের মূল দ্বীপ আর ছেঁড়াদ্বীপের মাঝে একটা চর জেগে উঠে যেটার নাম ‘গলাচিপা‘। বাইসাইকেল দিয়ে গেলে ভাটার সময় এই রাস্তা দিয়ে ছেঁড়াদ্বীপে প্রবেশ করতে পারবেন আবার ফেরত আসতে পারবেন। কিন্তু জোয়ারের সময় এটা ডুবে যাবে। তখন মূল দ্বীপে ফিরতে গিয়ে সমস্যায় পড়বেন। তাই জোয়ার ভাটা মাথায় রেখে বাইসাইকেল নিয়ে যাবেন। ভয়ের কিছু নেই। স্থানীয়দেরকে জিজ্ঞেস করে জোয়ার ভাটার সময়টা জেনে নিবেন। সেই অনুযায়ী সফর করবেন।

৩. ভোরবেলা জেটিঘাট থেকে সূর্যোদয় দেখবেন। সুন্দর দৃশ্য।

৪. বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পশ্চিম বিচে থাকবেন। সূর্যাস্ত দেখবেন। ভাগ্য ভালো থাকলে পুরো রক্তাক্ত লাল আকাশও দেখতে পারেন!

৫. রাতের বেলা জেটিঘাটে যাবেন। অসাধারণ একটা অনুভূতি পাবেন। সাগরের হালকা ঠান্ডা বাতাস, ঢেউয়ের গর্জন, রাতের তারা/চাদ,জাহাজের মৃদু আলো ইত্যাদি মিলিয়ে সত্যিকার অর্থেই স্বর্গীয় আনন্দ পাবেন।

Related posts

গোসলের আগে না পরে, গায়ে কখন তেল দেবেন

আরমান

টাক পড়ার কারণ কী, ঠেকাবেন যেভাবে

আরমান

শিশুর মানসিক বিকাশে পরিবারের ভূমিকা

News Desk

Leave a Comment