Image default
আন্তর্জাতিক

মধুচন্দ্রিমার বদলে তাঁরা যুদ্ধে

বিয়ের দিনটা সবাই স্মরণীয় করে রাখতে চান। এদিন ঘটা করে জানানো হবে সবাইকে। নিজ নিজ রীতি অনুযায়ী বাদ্য বাজবে। সেই তালে তালে গান ও নাচ হবে। আলোঝলমল কোনো স্থানে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবেরা আসবেন, বর-কনেকে ঘিরে আনন্দ করবেন। আর বিয়ের পর হবে মধুচন্দ্রিমা। অন্য সবার মতো এমন বিয়ের স্বপ্নই ছিল তাঁদের। কিন্তু বিয়েতে তাঁদের বাদ্য বাজেনি। বেজেছে বোমারু বিমানের বিষণ্ন সাইরেন। চারদিকে উৎকণ্ঠা নিয়ে বিয়ে সারতে হয়েছে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের সিভাতোস্লাভ ফুরসিন ও ইয়ারিনা অ্যারিয়েভা দম্পতিকে। স্বজনহীন বিয়েটা সেরেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে দেশের পক্ষে লড়তে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে হয়েছে এই নবদম্পতিকে।

সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে গত বৃহস্পতিবার রাশিয়ার হামলা শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তড়িঘড়ি করে বিয়ে করেছেন ফুরসিন ও অ্যারিয়েভা দম্পতি। বিয়ে সেরেই মধুচন্দ্রিমার বদলে তাঁরা দেশের জন্য যুদ্ধে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। তাঁরা স্থানীয় টেরিটরিয়াল ডিফেন্স সেন্টারে (সশস্ত্র বাহিনীর শাখা) যোদ্ধা হিসেবে যোগ দিয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৪ বছর বয়সী ফুরসিন একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। আর ২১ বছর বয়সী অ্যারিয়েভা কিয়েভ সিটি কাউন্সিলের ডেপুটি কর্মকর্তা। ২০১৯ সালে কিয়েভে একটি প্রতিবাদ সমাবেশে গিয়ে তাঁদের দুজনের পরিচয় হয়। পরিচয় পর্ব পেরিয়ে ওই প্রতিবাদ সমাবেশেই তাঁদের প্রেমের শুরু। পরিকল্পনা ছিল, আগামী ৬ মে দিনিপ্রো নদীর পাশে বড় কোনো রেস্টুরেন্টে বিশাল আয়োজন করে তাঁরা বিয়ে করবেন। কিন্তু যুদ্ধ পরিস্থিতি তাঁদের সেই পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছে। কারণ, দেশের জন্য যুদ্ধে তাঁদের যেতেই হবে। সেই যুদ্ধে গিয়ে যদি আর ফিরে আসা না হয়, তাহলে তো তাঁদের প্রেমের পরিণতি বিয়ে পর্যন্ত গড়াবে না। এই ভাবনা থেকেই চারদিকে বোমারু বিমানের সাইরেনের মধ্যেই কিয়েভের সেন্ট মাইকেলস মনাস্ট্রিতে গিয়ে গাঁটছড়া বেধে ফেলেছেন। বিয়ে সেরেই স্থানীয় টেরিটরিয়াল ডিফেন্স সেন্টারে যোগ দিয়ে একে-৪৭ অ্যাসাল্ট রাইফেল নিয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছেন।

বিয়ের পরপরই টেরিটরিয়াল ডিফেন্স সেন্টারে সরকার থেকে দেওয়া একে-৪৭ রাইফেল নিয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ফুরসিন ও অ্যারিয়েভা দম্পতি।
বিয়ের পরপরই টেরিটরিয়াল ডিফেন্স সেন্টারে সরকার থেকে দেওয়া একে-৪৭ রাইফেল নিয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ফুরসিন ও অ্যারিয়েভা দম্পতি।ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া
অ্যারিয়েভা বলেন, ‘আমাদের খুব সুন্দর একটা জায়গায় সবাইকে নিয়ে বিয়ের আয়োজন করার পরিকল্পনা ছিল। নদীর পাশে সুন্দর কোনো আলোঝলমলে জায়গায় বিয়ে করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি খুব ভয়ংকর।’

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদী-নিয়ন্ত্রিত দনবাসে সামরিক অভিযান চালানোর নির্দেশের পরই রাশিয়ার সীমান্তের দক্ষিণের খারকিভে স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে বিস্ফোরণ ঘটে। এরপরই শুরু হয় দুই পক্ষের যুদ্ধ। এই যুদ্ধের কারণেই ফুরসিন-অ্যারিয়েভার বিয়ের পরিকল্পনায় বদল আনতে হয়েছে।

অ্যারিয়েভা বলেন, ‘বিয়ের দিনটা জীবনের সবচেয়ে সুখকর সময়। কিন্তু পরিস্থিতি কঠিন হয়ে গেছে। দেশের জন্য আমাদের যুদ্ধ করতেই হবে। আমরা জানি না, আমাদের ভবিষ্যৎ কী। যুদ্ধে মরেও যেতে পারি। মরি-বাঁচি, আমরা দুজন একসঙ্গেই থাকতে চাই। এ কারণে যুদ্ধের মধ্যেই পরিকল্পনা বদলে তড়িঘড়ি বিয়ে সেরে ফেলেছি।’
অ্যারিয়েভা আরও বলেন, আমরা দেশকে ভালোবাসি। দেশ ও দেশের জনগণকে রক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে আমাদের। দেশকে রক্ষা করতে যা করা দরকার, আমরা তা–ই করব।’

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টেরিটরিয়াল ডিফেন্স সেন্টারে যোগ দিলেও তাঁদের মূল কাজ কী, তা জানেন না অ্যারিয়েভা। সম্মুখযুদ্ধে যেতে হবে নাকি অন্য কোনোভাবে সাহায্য করতে হবে, তা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে সিদ্ধান্ত যেটাই হোক, দেশের জন্য কাজ করে যাবেন তাঁরা।

‘স্বামী ফুরসিন হচ্ছে পৃথিবীতে সবচেয়ে কাছের বন্ধু। এই যুদ্ধ একদিন থেমে যাবে। আমাদের আবার দেখা হবে। যুদ্ধহীন নিজ দেশে আমরা একদিন আমাদের বিয়ে ঠিকই উদ্‌যাপন করব’—এমনটাই আশা নববধূ অ্যারিয়েভার।

Related posts

৬৭ লাখের ঘড়ি নিয়ে চম্পট চোর, ধাওয়া করলেন লেওয়ান

News Desk

করোনার কারণে কমে যেতে পারে ওজন!

News Desk

ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে যা বললেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী

News Desk

Leave a Comment