মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো জান্তাবিরোধী বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশের পরই দেশে গৃহযুদ্ধের শঙ্কা করা হচ্ছিল। সম্প্রতি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর একটির হামলায় মিয়ানমারের ১০ পুলিশ সদস্য নিহত হয়। এ ঘটনার বদলা নিতে গত শুক্রবার সারা রাত পুলিশ ও সেনাবাহিনী ইয়াঙ্গুন, নেপিদো এবং মান্দালয়ে হত্যাযজ্ঞ চালায়। বিদেশি মিডিয়াগুলোর মতে, শুক্রবার রাতে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে কমপক্ষে ৬০ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। উভয়পক্ষের এমন সাংঘর্ষিক অবস্থায় মিয়ানমার ছেড়ে পালাচ্ছেন অনেকে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি গণতান্ত্রিক সরকারকে সেনাবাহিনী উৎখাত করার পর থেকেই বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। আন্দোলনের প্রথম দিন থেকেই মিয়ানমারের জনগণ দেশ ছাড়তে শুরু করেন, যদিও সে সংখ্যা কম ছিল। প্রথম দিকে থাইল্যান্ডে সু চি’র দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা পালিয়ে যান। সেখান থেকে তারা জান্তাবিরোধী আন্দোলনের ডাক দিতে থাকেন। বিক্ষোভ বাড়তে থাকলে একপর্যায়ে মিয়ানমার পুলিশের কিছু সদস্য পালিয়ে ভারতে চলে যায়। জান্তা সরকার ভারতের কাছে ওই পুলিশদের ফেরত চায়। কিন্তু ভারত তাদের দিতে অস্বীকৃতি জানায়।
দেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায় দেশ ছেড়ে পালানোদের মধ্যে একজন মাখাই। তিনি তৃতীয়বারের প্রচেষ্টায় ভারতে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছেন। একটি ময়লার ট্রাকে চড়ে জঙ্গলের মধ্য দিয়ে সীমান্ত পাড়ি দেন তিনি। এর আগে দুইবার ভারতের সীমান্ত বাহিনী তাকে আটকে দিলেও এবার কোনো বাধার মুখোমুখি হননি মিয়ানমারের এ নাগরিক। চলতি মাসের শুরুতে সীমান্তবর্তী জেলা তামু থেকে বোন ও মেয়ে নিয়ে ভারতে পালান ৪২ বছর বয়সী মাখাই। তারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতীয় রাজ্য মণিপুরে প্রবেশ করেন। প্রাণ বাঁচাতে এটিই একমাত্র উপায় ছিল বলে মনে করেন মাখাই। তিনি বলেন, সেনাসদস্যরা ঘরের দরজা ভেঙে ঢুকে নারীদের ধর্ষণ করছে এবং সাধারণ মানুষকে হত্যা করছে।
আরও দুই নারী একইভাবে দেশ ছাড়েন। তারা বিবিসিকে বলেন, পরিস্থিতি ভালো হলে ঘরে ফিরে যেতে পারবেন বলে তারা মনে করছেন। তাদের স্বামী এবং পরিবারের অন্য পুরুষরা এখনো মিয়ানমারেই আছেন। উইনি নামে এক নারী বলেন, ‘পুরুষরা প্রয়োজনে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারবে। কিন্তু ঘরে আচমকা সেনাবাহিনী চলে এলে প্রাণ বাঁচাতে মেয়েদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে।’ ফলে মেয়ে নিয়ে ভারতে পালিয়েছেন তামু জেলার এ বাসিন্দাও।
অনেক বছর ধরে ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তে উভয় দেশের নাগরিকদের জন্য চলাচল সুবিধা চালু আছে। এক দেশের মানুষ চাইলে আরেক দেশের ১৬ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত ভ্রমণ করতে পারেন এবং সর্বোচ্চ ১৪ দিন পর্যন্ত অবস্থান করতে পারেন।
ভারতের মণিপুর রাজ্য সরকার তাদের সীমান্তরক্ষীদের নির্দেশনা দিয়েছে, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে ফিরিয়ে দিতে। তবে রাজ্য সরকারের এমন সিদ্ধান্তের মধ্যে একটু ফাঁক আছে। মানবিক দিক বিবেচনায় যা সঠিক বলে বিবেচিত হয়, এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশও দেওয়া আছে সীমান্তরক্ষীদের। একই অবস্থান মূলত থাই সরকারেরও। বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, আগামী দিনগুলোতে প্রতিবেশী দেশগুলোতে শরণার্থী হিসেবে মিয়ানমারের বাসিন্দাদের যাওয়ার সংখ্যা আরও বাড়বে। এমন পরিস্থিতি মিয়ানমারের প্রতিবেশীদের জন্য বাড়তি চাপ হিসেবে দেখা দিতে পারে বলেও তারা মনে করছেন।