করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে যে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার যে ঢেউ তৈরি হয়, তা আশ্চর্যজনক নয়। তবে সবাইকে অবাক করে করোনার ভয়াবহ প্রকোপের মধ্যেই চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে সেই অনিশ্চয়তা কমতে দেখা গেছে। অর্থাৎ, আত্মবিশ্বাস ফিরতে শুরু করেছে ব্যবসায়ীদের মনে। সম্প্রতি বিশ্ব অনিশ্চয়তা সূচকে এমনটাই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও সাম্প্রতিক ইস্যুভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, করোনাভাইরাস মহামারির শুরুর দিকে, অর্থাৎ ২০২০ সালের প্রথম প্রান্তিকে বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়েছিল। কিন্তু এরপর থেকে তা ক্রমাগত কমতে দেখা যায় এবং ২০২১ সালের মার্চ মাসে গত ১৪ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছায়।
ইকোনমিস্টের হিসাবে, বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা বৃদ্ধিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বের হয়ে যাওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলের বড় অবদান ছিল। কিন্তু গত বছরের নভেম্বরে হোয়াইট হাউস থেকে ট্রাম্পের বিদায় নিশ্চিত হওয়া এবং বছরের শেষভাগে ইইউ-যুক্তরাজ্যের মধ্যে বেক্সিট চুক্তি হয়ে যাওয়ায় অনিশ্চয়তার পরিমাণ আবারো কমতে শুরু করে।
এছাড়া গত ৯ নভেম্বর প্রথমবারের মতো ফাইজার-বায়োএনটেকের করোনাভাইরাসরোধী কার্যকর টিকা আবিষ্কারের ঘোষণাও মানুষের ভেতর আত্মবিশ্বাস ফেরাতে বড় অবদান রেখেছে বলে ধারণা করা হয়।
তবে অনিশ্চয়তা কমার আশ্চর্যজনক এই হিসাব করোনা মহামারির ভয়াবহ পরিস্থিতি সম্পর্কে ভুল ধারণা দিতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেই প্রায় ১০ লাখ মানুষ করোনায় মারা গেছে, যা মহামারি শুরুর পর থেকে ত্রৈমাসিক হিসাবে সর্বোচ্চ।
অবশ্য অনিশ্চয়তা সূচকের সবশেষ হালনাগাদ তথ্যে শুধু এ বছরের প্রথম তিন মাসের হিসাবই গোনায় ধরা হয়েছে। ফলে সেখানে ভারতে করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে সৃষ্টি হওয়া ভয়াবহ হুমকি বিবেচনা করা হয়নি।
যদিও বিশ্ব অনিশ্চয়তা সূচকের স্রষ্টারা মনে করছেন, ভারতে করোনা সংকটের কারণে তাদের হিসাবে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আসবে না। কারণ, বৈশ্বিক জিডিপিতে মহামারিতে সবচেয়ে অরক্ষিত দেশগুলোর অংশ যথেষ্ট কম। বিপরীতে, ধনী বিশ্বে শ্রমবাজার থেকে শুরু করে ভোগ্যপণ্যের দাম, সব ক্ষেত্রেই অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের লক্ষণ সুস্পষ্ট। সেক্ষেত্রে বিশ্ব অনিশ্চিয়তা সূচক দেখে ব্যবসায়ীরা আশাবাদী হতেই পারেন!