ছবি: সংগৃহীত
মধ্যপ্রাচ্যে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অবসান ঘটেছিল বেশ কয়েকটি গোপন লেনদেনের মধ্য দিয়ে। যেগুলো এতদিন অন্তরালেই ছিল। বিবিসি ফারসি ও বিবিসি আরবি বিভাগের যৌথভাবে নির্মিত এক তথ্যচিত্রে এসব গোপন লেনদেন সম্পর্কে জানা যাচ্ছে।
‘সিক্রেটস অ্যান্ড ডিলস: হাও ব্রিটেন লেফট দ্য গালফ’ শিরোনামে এক টিভি ডকুমেন্টারিতে দেখানো হয়েছে, কীভাবে যুক্তরাজ্য উপসাগরের বিরোধপূর্ণ দ্বীপের নিয়ন্ত্রণ ইরানের হাতে ছেড়ে দিয়েছে। সেই সঙ্গে যুক্তরাজ্যে সংগঠিত একটি অভ্যুত্থানের প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণও রয়েছে এ তথ্যচিত্রে। খবর বিবিসির।
আরব বিশ্বের নেতারা সবাই নিশ্চিত যে, ১৯৬৭ সালের জুনে সংঘটিত ছয়দিনের যুদ্ধে গোপনে ইসরায়েলকে সহায়তা করেছিল যুক্তরাজ্য। এ যুদ্ধে পূর্ব জেরুজালেম, পশ্চিম তীর, গাজা, সিনাই উপদ্বীপ ও গোলান মালভূমি দখল করে। এর প্রতিশোধ হিসেবে তেলসমৃদ্ধ উপসাগরীয় দেশগুলো তাদের হাতে থাকা ব্রিটিশ মুদ্রা বিক্রি করতে শুরু করে।
ছবি: সংগৃহীত
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাজ্যের প্রভাব
পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাজ্যের কখনোই আনুষ্ঠানিক কোন উপনিবেশ ছিল না। তবে ১৮ শতক থেকে সেখানে ব্রিটেনই ছিল সর্বময় ক্ষমতাধর বিদেশি শক্তি। বাহরাইন, কাতার ও যাকে বলে ‘ট্রুশিয়াল স্টেটস’ (আবুধাবি, দুবাই ও তাদের ছোট প্রতিবেশী), আরব আমিরাত বহিঃশত্রুর হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে ব্রিটেনের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি সই করেছিল। অর্থাৎ ব্রিটেন এসব রাজ্যের প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক নীতি নিয়ন্ত্রণ করবে। অন্যদিকে এসব রাজ্যের শাসকরা স্থানীয় বিষয়গুলির তত্ত্বাবধান করবে।
১৯৬৫ সালে এসব ট্রুশিয়াল স্টেটের শাসক আরব শেখদের মধ্যে রাজনৈতিক, সামাজিক ও শিক্ষাগতভাবে সবচেয়ে প্রগতিশীল শারজাহর শাসক সাকার বিন সুলতান আল-কাসিমি ব্রিটিশদের কুনজরে পড়েন। তার অপরাধ তিনি আরব জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মূল ভিত্তি মিশরের প্রেসিডেন্ট জামাল আবদেল নাসেরের ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলেন।
ফাইল ছবি
গোপন লেনদেন
১৯৭০ সালের জুন মাসে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো নতুন এক আবিষ্কৃত গোপন নোট থেবেলে দিচ্ছে, ইরানের শাহ যুক্তরাজ্যের সেই সময়ের পররাষ্ট্র সচিব স্যার অ্যালেক ডাগলাস-হোমকে বলেছিলেন: এই দ্বীপগুলি ইরানের এবং অবশ্যই এগুলো ইরানকে ফেরত দিতে হবে। ফলাফল যাই হোক না কেন, এই দ্বীপগুলো আমরা নেবোই। ব্রিটিশ কর্মকর্তারা অবশ্য প্রকাশ্যে জোর দিয়ে বলতেন যে ঐ তিনটি দ্বীপ ট্রুসিয়াল স্টেটেরই অংশ। কিন্তু কিছু ডি-ক্লাসিফাইড বার্তায় দেখা যায়, দীর্ঘমেয়াদী ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক প্রশাসক ও কূটনীতিক স্যার উইলিয়াম লুস ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে ব্রিটিশ বাহিনী প্রত্যাহারের আগে তিনটি দ্বীপের মধ্যে দুটি ইরানের কাছে হস্তান্তর করতে গোপনে ইরানের শাহ্’র সাথে একমত হন।
সম্প্রতি প্রকাশ করা কিছু গোপন দলিল থেকে দেখা যাচ্ছে, ১৯৭১ সালের ৩০শে নভেম্বর তিনটি দ্বীপের ওপর ‘ইরানের দখল’ নিয়ে পরবর্তীকালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিবাদ সত্ত্বেও সেখানে ইরানের নৌবাহিনী ঢুকে পড়ায় আবুধাবির শেখ জায়েদ ও দুবাইয়ের শেখ রশিদকে ব্রিটেনের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছিল। শেখ জায়েদ ও শেখ রশিদ ছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি ও উপ-রাষ্ট্রপতি।
দলিল থেকে আরও জানা যায় যে, ওই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত ছিলেন শেখ জায়েদ। অন্যদিকে শারজাহর আমির আবু মুসা দ্বীপের প্রশাসন ভাগাভাগি করার প্রশ্নে শেষ মুহূর্তে ইরানের সঙ্গে চুক্তিতে সম্মত হয়েছিলেন।
ওই চুক্তি ১৯৯২ সাল পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। এরপরই ইরান দ্বীপটির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হতে তুলে নিয়েছিল। মধ্যপ্রাচ্যে সাম্রাজ্যের শেষ পর্যায়ে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পারস্য উপসাগরে ব্রিটেনের উপস্থিতির অবসান ঘটেছিল। সংযুক্ত আরব আমিরাত আজ পর্যন্ত তিনটি দ্বীপের ওপর ইরানী সার্বভৌমত্বের দাবিকে প্রশ্ন করে আসছে। আর সে কারণেই এত বছর পরও এই ইস্যুটি ইরান ও আরব বিশ্বের মধ্যে উত্তেজনার কারণ হয়ে রয়েছে।

