Image default
আন্তর্জাতিক

পানি ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতার দায় ভারতের ওপর চাপাতে চায় পাকিস্তান

পাকিস্তান সৃষ্টির পর বিশ্ব ব্যাংকের মতো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দাতাদের সহায়তায় অনেক বাঁধ, ব্যারেজ এবং সেচ চ্যানেল নির্মাণ করেছে ইসলামাবাদ। এসব অতিরঞ্জিত পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্প দেশটির সিন্ধু নদের পানি প্রবাহকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আর এতে মিঠা পানির উৎসসহ প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে দেশটির উদাসীন মনোভাব ফুটে উঠেছ।

পাকিস্তান বন্যা এবং খরা মোকাবিলা করে অভ্যস্ত। কিন্তু সাম্প্রতিক বিপর্যয়কর বন্যা দেশটির প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধিপ্রবণ দিকটি সামনে নিয়ে এসেছে। চলতি বছর পুরো দেশ ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি হয়েছে। এমনকি জাতিসংঘের মহাসচিবও মন্তব্য করেছিলেন, পাকিস্তান ভয়াবন বন্যা মোকাবিলা করছে। খবর জাস্ট আর্থ নিউজ।

অকার্যকর শাসন, দেরিতে পদক্ষেপ গ্রহণ এবং অকার্যকর দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার কারণে কীভাবে বন্যা সর্বগ্রাসী হয়ে উঠতে পারে তাও প্রত্যক্ষ করেছে পাকিস্তান। উল্লেখ্য যে, পাকিস্তানে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অ্যাকুইফার (মাটির নিচে পানি বহনকারী স্তর) রয়েছে। আর দেশটির তিনটি মেগা-বাঁধে যে পরিমাণ ভূগর্ভস্থ পানি সংরক্ষণ হয়, সিন্ধু নদীর অববাহিকায় তার ৮০ গুণ বেশি পানি সংরক্ষিত হয়।
যদিও পানির পর্যাপ্ত রিচার্জ (বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে ভূগর্ভে পাঠানো) ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাব এবং ব্যাপক উদাসীনতায় ভূগর্ভস্থ পানি প্রতিনিয়ত নিঃশেষ হচ্ছে। শিল্প ও কৃষি বর্জ্যে সৃষ্ট দূষণে পানির গুণগত মানকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে।

দেশটির ৮০ শতাংশের বেশি আবাদি জমির সেচে সিন্ধু নদের পানি ব্যবহার করা হয়।

বিজ্ঞাপন
ঔপনিবেশিক আমলে সেচ সুবিধার জন্য ব্রিটিশরা সিন্ধু নদের উপর প্রথম বাঁধ, ব্যারেজ ও খাল তৈরি করেছিল। সিন্ধু নদ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার মূল কারণ হলো এর অববাহিকা জুড়ে বাঁধ এবং জলপ্রবাহকে ভিন্ন দিকে নিতে বড় বড় কাঠামো নির্মাণ।
বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির উচ্চ হার এবং ক্রমাগত শিল্পায়নের কারণে পানির চাহিদা বেড়েছে। অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিপূর্ণ শীর্ষ দশ দেশের তালিকায় পাকিস্তানও রয়েছে।
সিন্ধু অববাহিকা সেচ ব্যবস্থার পরিষেবাগুলির কার্য প্রদ্ধতি উন্নতমানের নয় এবং এগুলো আর্থিকভাবে টেকসইও নয়। আবার ভূমির আকারের সঙ্গে ভূ-পৃষ্ঠের পানি ব্যবহারের অধিকার জড়িত, যা অল্প জমি আছে তেমন কৃষকদের বিপক্ষে যায়। শুধু তাই নয়, দেশটির শুল্ক সংগ্রহ ব্যবস্থাও বেশ পুরাতন এবং অস্বচ্ছ। আর সেচ শুল্ক কাঠামো পানি সংরক্ষণে কোনো ধরনের প্রণোদনা দেয় না।
সব মিলিয়ে চলতি বছরের বন্যা পাকিস্তানে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি করে। আর এই পরিস্থিতি তৈরিতে প্রধান হোতা হিসেবে কাজ করেছে দেশটির প্রাকৃতিক সম্পদ তথা পানি সম্পদের ভুল ব্যবস্থাপনা। যদিও ইসলামাবাদ পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার এই ব্যর্থতার দায় ভারতের ওপর চাপাতে চেষ্টা করছে এবং অভিযোগ করছে ভারতের কিষেণগঙ্গা (৩৩০ মেগাওয়াট) ও রাতলে (৮৫০ মেঘাওয়াট) পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কারণে এমনটা হচ্ছে। আর নিজেদের এই অভিযোগ প্রমাণ করতে পাকিস্তান বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে ‘কোর্ট অব আরবিট্রেশন’-এর হস্তক্ষেপ চেয়ে বিরোধ উত্থাপন করেছে।

ইসলামাবাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার। তারা পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না এবং কৃষিতে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। যদিও দেশটির মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশের মূল শক্তি কৃষি। নিজেদের ব্যবস্থার উন্নতি করার পরিবর্তে বরং নাগরিকদের ক্ষোভ ভারতের দিকে ধাবিত করার চেষ্টা করছে পাকিস্তান।

Related posts

ইলন মাস্কের টুইটই আটকে দিল টুইটার!

News Desk

অবশেষে নতুন প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী পেল ইরাক

News Desk

ফিলিস্তিনিদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে ইসরায়েলের হামলা

News Desk

Leave a Comment