পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের রাজধানী পেশওয়ারের প্রাণকেন্দ্র কিসসা খাওয়ানি বাজার। দীলিপ কুমার, রাজ কাপুরসহ ভারতীয় সিনেমার বেশ কয়েকজন কিংবদন্তীর জন্ম এ এলাকায়। পাকিস্তান সরকার এ দুই অভিনেতার পৈতৃক বাড়িকে জাতীয় ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ঘোষণা করেছিল ২০১৪ সালে। শতবর্ষী এ বাড়িগুলোকে এবার সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত সোমবার থেকে শুরু হয়েছে সংস্কার কাজ।
১৯২২ সালে পেশওয়ারে কাপুর হাভেলি তৈরি করেছিলেন দেওয়ান বিশ্বেশ্বরনাথ কাপুর। তাঁর ছেলে পৃথ্বীরাজ কাপুর এ বংশের প্রথম সদস্য, যিনি সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখেন। পৃথ্বীরাজের সন্তান রাজ কাপুরেরও জন্ম এই কাপুর হাভেলিতে। দেশভাগের পর কাপুর পরিবার ভারতে পাড়ি জমায়। ১৯৮৮ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রাজ কাপুর কয়েকবার চেষ্টা করেছেন পৈতৃক বাড়িতে যাওয়ার। কিন্তু সম্ভব হয়নি।
পেশওয়ারে অবস্থিত শতবর্ষী কাপুর হাভেলি। ছবি: সংগৃহীত
তবে ১৯৯০ সালে রণধীর কাপুর ও তাঁর ভাই ঋষি কাপুর গিয়েছিলেন পূর্বপুরুষের বাড়িতে। সেখানকার মাটিও সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন। রণধীর কাপুর বলেন, ‘পূর্বপুরুষদের জন্মভূমিতে গিয়ে আমরা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম। ওই বাড়ির উঠোনের মাটি এনে ছড়িয়ে দিয়েছিলাম আমাদের খামারবাড়িতে।’
কাপুর হাভেলি যাতে ধ্বংস না করা হয়, যেন বাড়িটিকে সংরক্ষণ করে ধরে রাখা হয় কাপুর বংশের স্মৃতি; সে চেষ্টা করেছিলেন ঋষি কাপুর। পাকিস্তানের সরকারের পক্ষ থেকে তাঁকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, বাড়িটিকে সংস্কার করে জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হবে। কয়েক বছর আগে নেওয়া সে উদ্যোগ বাস্তবায়নের কাজ শুরু হলো সম্প্রতি।
সংস্কার শেষে এ বাড়িটিকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হবে। ছবি: সংগৃহীত
কাপুর হাভেলির অদূরেই রয়েছে অভিনেতা দীলিপ কুমারের পৈতৃক বাড়ি। বাড়িটি তৈরি করেছিলেন তাঁর বাবা। ১৯২২ সালে ওই বাড়িতেই জন্ম দীলিপ কুমারের। তাঁর বাবা ফলের ব্যবসা করতেন। এক সময় ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়ে ভাগ্যের সন্ধানে বোম্বাইয়ে পাড়ি জমান। ১৯৩০ সালে পেশোয়ারের বাড়িটি ৫ হাজার রুপিতে বিক্রি করে দেন দীলিপ কুমারের বাবা।
সেই থেকে বাড়িটি কয়েকবার হাতবদল হয়েছে। কয়েক বছর আগেও বাড়িটি গুদাম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। পরে সরকার অধিগ্রহণ করে। এ বাড়িটিও সংস্কার করা হচ্ছে। জানা গেছে, রাজ কাপুর ও দিলীপ কুমারের পৈতৃক বাড়ির সংস্কার কাজের জন্য ৭ কোটি রুপি বরাদ্দ করা হয়েছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে শেষ হবে এ কাজ।
অভিনেতা দীলিপ কুমারের পৈতৃক বাড়ি। ছবি: সংগৃহীত
খাইবার পাখতুনখোয়ার আর্কিওলোজি অ্যান্ড মিউজিয়াম বিভাগের পরিচালক ড. আব্দুস সামাদ জানিয়েছেন, মূল ডিজাইন অক্ষুণ্ন রেখেই বাড়িগুলো সংস্কার করা হবে। তাই খুব যত্ন করে সংস্কারের কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাতে এমন স্থাপত্যশৈলী নষ্ট না হয়।