১৫ হাজার কোটি রুপির রাজকীয় সম্পত্তি হারাতে পারেন সাইফ আলী খান, কী কারণে
বিনোদন

১৫ হাজার কোটি রুপির রাজকীয় সম্পত্তি হারাতে পারেন সাইফ আলী খান, কী কারণে

মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট গত বছর নিম্ন আদালতের রায় বাতিল করে দেওয়ায় নিজের ও পরিবারের রাজকীয় সম্পত্তির বড় অংশ হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছেন পতৌদির রাজ্যের শেষ নবাব ইফতিখার আলী খানের নাতি বলিউড তারকা সাইফ আলী খান।

নিম্ন আদালতের ওই রায়ে সাইফ ও তাঁর পরিবারকে মধ্যপ্রদেশের শহর ভোপাল ও এর আশপাশে থাকা ১৫ হাজার কোটি রুপি মূল্যের সম্পত্তির একমাত্র মালিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল।

এসব সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে নূর-উস-সাবাহ প্যালেস (বর্তমানে বিলাসবহুল হোটেল), ভোপালের ফ্ল্যাগস্টাফ হাউস, বিভিন্ন রাজপ্রাসাদ, নবাবি বাংলো ও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অন্যান্য সম্পত্তি।

এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর নিম্ন আদালতকে আবার নতুন করে মামলাটি খতিয়ে দেখে এক বছরের মধ্যে রায় দিতে নির্দেশ দেন মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট।

সাইফকে এখন তাঁর এই সম্পত্তি ও উত্তরাধিকার ধরে রাখতে আদালতে নতুন করে আইনি লড়াই লড়তে হবে।

এমন পরিস্থিতিতে বলাই যায়, ২০২৫ সাল বলিউড তারকা সাইফের জন্য মোটেই ভালো যাচ্ছে না। বছরের শুরুতে নিজের ঘরেই এক অনুপ্রবেশকারীর ছুরিতে আহত হন তিনি।

এখন তাঁকে সরকারের ‘শত্রু সম্পত্তি’ তকমাও মোকাবিলা করতে হচ্ছে।

সাইফ আলী খান কি পতৌদি ও ভোপালের নবাব

হ্যাঁ, নামকরা এই তারকাকে পতৌদি ও ভোপালের নবাব বলাই যায়।

৫৪ বছরের সাইফ ভোপালের শেষ নবাব হামিদুল্লাহ খানের প্রপৌত্র। হামিদুল্লাহ খানের দ্বিতীয় মেয়ে সাজিদা সুলতান ছিলেন সাইফের দাদি।

হামিদুল্লাহর জ্যেষ্ঠ মেয়ে আবিদা সুলতান বেগম ’৪৭-এর দেশভাগের পর পাকিস্তানে চলে যান। অন্যদিকে সাজিদা সুলতান ভারতে থেকে যান এবং বাবার মৃত্যুর পর তাঁর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হন।

১৯৬২ সালে ভারত সরকার সাজিদার এই উত্তরাধিকারের স্বীকৃতি দেয়। ওই সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাজিদার নামে সম্পত্তি হস্তান্তরে সরকারের কোনো আপত্তি নেই।

পরে সাজিদা সুলতান বিয়ে করেন পতৌদির নবাব ইফতিখার আলী খানকে। সেই সূত্রেই আলোচিত সম্পত্তি প্রথমে তাঁদের ছেলে ভারতের ক্রিকেট টিমের সাবেক ক্যাপ্টেন মনসুর আলী খান এবং পরে অভিনেতা সাইফ আলী খানের হাতে আসে।

হাইকোর্টের ধাক্কা

২০০০ সালে মধ্যপ্রদেশের এক নিম্ন আদালত সাইফ, তাঁর মা শর্মিলা ঠাকুর, দুই বোন সোহা আলী খান ও সাবা আলী খানকে ভোপালের ১৫ হাজার কোটি রুপি মূল্যের সম্পত্তির বৈধ উত্তরাধিকারী হিসেবে ঘোষণা দেন।

কিন্তু ওই রায়ের বিরুদ্ধে হামিদুল্লাহ খানের অন্য উত্তরাধিকারীরা আপত্তি জানান। তাঁদের দাবি, ভোপালের শেষ নবাবের সম্পত্তি ইসলামি উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী ভাগ হওয়া উচিত।

গত বছর মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট তাঁদের দাবি মেনে নেন এবং উত্তরাধিকার প্রশ্নে মামলাটি আবার খোলার নির্দেশ দেন।

এখন যদি মধ্যপ্রদেশের ওই নিম্ন আদালত আগের রায় বদলান, তাহলে সাইফ আলী খান এই বিশাল সম্পত্তির বড় একটি অংশ হারাতে পারেন।

‘শত্রু সম্পত্তি’ আইন

দেশভাগের সময় হামিদুল্লাহ খানের বড় মেয়ে আবিদা সুলতানের পাকিস্তানে চলে যাওয়ার কথা আগেই বলা হয়েছে।

আবিদার দেশত্যাগের ঘটনার ওপর ভিত্তি করে ২০১৪ সালে সাইফ আলী খানকে নোটিশ পাঠায় ভারত সরকার, যাতে বলা হয়, ভোপালের সাবেক শাসকের কাছ থেকে পাওয়া ১৫ হাজার কোটি রুপির সম্পত্তির ওপর ১৯৬৮ সালের ‘শত্রু সম্পত্তি আইন’ প্রযোজ্য হবে।

সাইফ আলী খানের মা শর্মিলা ঠাকুর ও বাবা মনসুর আলী খান। ছবি: সংগৃহীত

এতে কারণ হিসেবে বলা হয়, যেহেতু সম্পত্তির উত্তরাধিকারী আবিদা পাকিস্তানে চলে গেছেন এবং ভারতীয় নাগরিকত্ব ছেড়েছেন, তাই এই সম্পত্তিকে ‘শত্রু সম্পত্তি’ হিসেবে গণ্য করা হবে এবং তা সরকার বাজেয়াপ্ত করতে পারবে।

কথা হচ্ছে, ভোপালের সম্পত্তিগুলো সাইফ আলী খান পেয়েছিলেন হামিদুল্লাহ খানের দ্বিতীয় মেয়ে সাজিদা সুলতানের মাধ্যমে। তাঁর বড় বোন পাকিস্তানে চলে যাওয়ার পর সাজিদাই কার্যত সেই সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হন।

এমনকি ১৯৬২ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু সরকারও জানিয়েছিল, সাজিদা সুলতানই নবাব হামিদুল্লাহর সব ব্যক্তিগত সম্পত্তির একমাত্র উত্তরাধিকারী এবং এসব সম্পত্তি তাঁর নামে হস্তান্তরে সরকারের আপত্তি নেই।

মা শর্মিলা ঠাকুরের সঙ্গে সাইফ আলী খান। ছবি: সংগৃহীতমা শর্মিলা ঠাকুরের সঙ্গে সাইফ আলী খান। ছবি: সংগৃহীত

যাই হোক, নবাব হামিদুল্লাহর কাছ থেকে পাওয়া ১৫ হাজার কোটি রুপির সম্পত্তিকে ‘শত্রু সম্পত্তি’ হিসেবে বিবেচনা করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে গিয়ে সাময়িক স্থগিতাদেশ আদায় করেন সাইফ।

কিন্তু ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে হাইকোর্ট তাঁর আবেদন খারিজ করে স্থগিতাদেশ তুলে নেন।

একই সঙ্গে তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে আপিল করার জন্য ৩০ দিনের সময় দেন।

এই সিদ্ধান্ত বাতিলের পেছনে কারণ ছিল, সরকার ১৯৬৮ সালের ‘শত্রু সম্পত্তি আইন’কে পেছনের তারিখ থেকে (কোনো আইন বর্তমান সময় থেকে কার্যকর না হয়ে আগের কোনো নির্দিষ্ট তারিখ থেকে কার্যকর হওয়া) বাতিল করে দেয় এবং মুম্বাইয়ে ‘শত্রু সম্পত্তির অভিভাবক’ নামে একটি আপিল কর্তৃপক্ষ গঠন করে, যারা এ ধরনের সব বিষয় নতুন করে খতিয়ে দেখবে।

এই কর্তৃপক্ষ ১৯৬২ সালের সেই সরকারি স্বীকৃতিকেও বাতিল করে দেয়, যেখানে সাজিদা সুলতানকে একমাত্র উত্তরাধিকারী হিসেবে মানা হয়েছিল।

সাইফ আলী খান নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আপিল করেছিলেন কি না, তা স্পষ্ট নয়।

কারণ, গত ১৬ জানুয়ারি তিনি ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে প্রায় এক সপ্তাহ হাসপাতালে ছিলেন এবং অস্ত্রোপচারের পর কয়েক সপ্তাহ তাঁকে বিশ্রামে থাকতে হয়।

Source link

Related posts

ভালোবাসা দিবসে সালমার গান

News Desk

গাড়ি ব্যবসায়ী প্রেমিককে প্রকাশ্যে আনলেন সামিরা মাহি

News Desk

বক্স অফিসে ধামাকা দেখাচ্ছে রণবীর-আলিয়ার ‘প্রেমকাহানি’

News Desk

Leave a Comment