একটি ফেসবুক পোস্ট থেকে ঘটনার সূত্রপাত। জি বাংলার জনপ্রিয় মেগাসিরিয়াল ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’-এ অভিনয় করছেন দিতিপ্রিয়া রায় ও জিতু কামাল। সিরিয়ালের প্রমোশনের জন্য জিতু কামাল ফেসবুকে শুটিংয়ের একটি ছবি পোস্ট করেন। তা দেখে দিতিপ্রিয়ার মনে হয়, ছবিটি ‘ইনঅ্যাপ্রোপ্রিয়েট’।
বিষয়টি প্রোডাকশন হাউসকে জানান দিতিপ্রিয়া। প্রোডাকশন হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয় জিতু কামালকে। এরপর ছবিটি ফেসবুক থেকে সরিয়ে ফেলেন জিতু। কিন্তু এখানেই বিষয়টি থেমে থাকেনি। একসঙ্গে জুটি হয়ে অভিনয় করলেও শুটিংয়ে পরস্পরের সঙ্গে কথা বলতেন না জিতু ও দিতিপ্রিয়া। তবে এক সময় বরফ গলে। হোয়াটস অ্যাপে টুকটাক কথা শুরু হয় তাঁদের।
সেই আলাপই কাল হলো। জিতুর একটি কথা আপত্তিকর ঠেকে দিতিপ্রিয়ার কাছে। তিনি বিষয়টি নিয়ে লম্বা পোস্ট করলেন ফেসবুকে। অন্যদিকে, নিজের অবস্থান পরিস্কার করতে জিতু কামালও ফেসবুক পোস্টের আশ্রয় নিলেন। দিতিপ্রিয়ার সঙ্গে হোয়াটস অ্যাপে তাঁর কী কথা হয়েছিল, ফাঁস করে দিলেন সেই স্ক্রিনশট। জিতু কামাল ও দিতিপ্রিয়ার দ্বন্দ্ব নিয়ে টালিউড এখন সরগরম।
দিতিপ্রিয়া ফেসবুকে লিখেছেন, ‘প্রথম এক মাস পর থেকেই আমার সহ-অভিনেতা আমার সঙ্গে কথা বলেন না। শুধু হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ রাখেন। একদিন আমাকে জিজ্ঞেস করেন, ওই ইভেন্টে যাচ্ছ? আমি বলি, আমার ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে। তিনি জানতে চান, কেন, তুমি কি প্রেগন্যান্ট? আরেকটি ঘটনায়, একটি এআই দিয়ে বানানো ছবি, যেখানে দেখা যায় আমরা চুম্বন করছি, ওই ছবি আমাকে মাঝরাতে পাঠিয়ে লেখেন, বেশ হয়েছে, এটা বয়ফ্রেন্ডকে পাঠাও। রাতেই ব্রেকআপ হয়ে যাবে। এই সব ঘটনা প্রাথমিকভাবে মজার ছলে নিয়ে থাকলেও পরবর্তীকালে আমাকে অস্বস্তিকর অবস্থায় ফেলেছে।’
‘চিরদিনই তুমি যে আমার’ সিরিয়ালের দৃশ্যে দিতিপ্রিয়া রায় ও জিতু কামাল। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
দিতিপ্রিয়া বলেন, ‘আমরা সবাই ভাবি, মেয়েদের কাজই হলো মুখ বুজে সব সহ্য করা। তাই এ রকমটা তো করাই যায়। ইয়ার্কিটা কোথায় থামাতে হয় এটা যদি কেউ বুঝতে না পারেন, তা হলে খুব মুশকিল একসঙ্গে কাজ করা। ইয়ার্কি মেরে ১৫ থেকে ১৬ বছরের ছোট কাউকে কি কখনো এভাবে প্রেগন্যান্ট কিনা জিজ্ঞেস করা যায়?’
ফেসবুক পোস্টে সহশিল্পীর নাম উল্লেখ না করলেও এটা যে জিতু কামালকে উদ্দেশ্য করে লেখা, তা বুঝতে আর কারও বাকি নেই। দিতিপ্রিয়ার ফেসবুক পোস্টের কয়েক ঘণ্টা পর জিতু কামালও নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। দিতিপ্রিয়ার সঙ্গে তাঁর ঠিক কী কথা হয়েছিল, সেই হোয়াটস অ্যাপ স্ক্রিনশট প্রকাশ করে দিয়েছেন তিনি।
‘চিরদিনই তুমি যে আমার’ সিরিয়ালের দৃশ্যে দিতিপ্রিয়া রায় ও জিতু কামাল। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ভিকটিম কার্ড খেলাটা আমাদের সমাজে প্রথম নয়। অনেক উদাহরণ আছে। কিন্তু এই মেয়েটির কোনো দোষ নেই, এই মেয়েটি নিরপরাধ। এই মেয়েটিকে পেছন থেকে প্রবঞ্চনা দেওয়া হচ্ছে। যারা দিচ্ছে তারা কিন্তু এই মেয়েটির বিপদের সময় পাশে দাঁড়াবে না। প্লিজ মেয়েটিকে মেয়েটির পথে থাকতে দিন। কাজ করতে দিন। মেয়েটি ভালো। শিক্ষিত মেয়ে। একটু অপরিণত, আর নিজের প্রেমিকের জন্য জীবনটুকু পর্যন্ত দিতে পারে। আর প্রেমিক মহাশয়কে বলছি, এনাকে যত্ন করে রাখবেন। প্লিজ হাতছাড়া করবেন না, আপনি রত্ন পেয়েছেন।’
কিন্তু নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে ব্যক্তিগত কথোপকথন প্রকাশ করাটা কতটা যুক্তিযুক্ত? এ বিষয়ে জিতু বলেন, ‘আমারও তো বাবা-মা আছেন। আমারও তো সম্মান আছে। তাঁদের সম্মান রক্ষা করার দায়িত্ব কি আমার নয়? আমি যদি স্ক্রিনশটগুলো না দিতাম, তাহলে কী করে নিজেকে রক্ষা করতাম? আমি তো অপেক্ষা করেছিলাম, হয়তো পোস্টটা নামিয়ে দেবে, হয়তো চুপ করে যাবে। সেটা না করে আজেবাজে মন্তব্য করে চলেছে। আমি কী করতে পারি?’
‘চিরদিনই তুমি যে আমার’ সিরিয়ালের দৃশ্যে দিতিপ্রিয়া রায় ও জিতু কামাল। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
সব মিলিয়ে, সিরিয়ালের এই জনপ্রিয় জুটির পর্দার পেছনের গল্প এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। কে ঠিক, কে ভুল—তা হয়তো সময় বলবে। কিন্তু এটা তো বোঝা গেল, দর্শকরা যাঁদের দেখে ‘পারফেক্ট অনস্ক্রিন কাপল’ মনে করেছিলেন, বাস্তবে তাঁদের ইকুয়েশন এখন বহু প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।