ফিলিস্তিনি শিশুকে নিয়ে নির্মিত সিনেমা পেল দীর্ঘতম স্ট্যান্ডিং ওভেশন
বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭: ৫৪
‘দ্য ভয়েস অব হিন্দ রজব’ সিনেমার শিল্পী ও কলাকুশলী। ছবি: সংগৃহীত
পৃথিবীর প্রাচীনতম চলচ্চিত্র উৎসব ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ৯৩ বছরের ইতিহাসে এই ঘটনা এবারই প্রথম ঘটল। ‘দ্য ভয়েস অব হিন্দ রজব’ সিনেমা দেখে দর্শকেরা এতটা আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ে যে প্রদর্শনী শেষে টানা ২২ মিনিট হাততালি দিতে থাকে। এটি এই উৎসবের দীর্ঘতম স্ট্যান্ডিং ওভেশন। ২০ মিনিট পার হওয়ার পর প্রেক্ষাগৃহের আলো নিভিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। তবু হাততালি চলতে থাকে।
ফিলিস্তিনের পতাকা নিয়ে দ্য ভয়েস অব হিন্দ রজব দেখতে এসেছিলেন অনেকে। সিনেমাটি শেষ হওয়ার পর পতাকা ওড়াতে দেখা যায় তাঁদের। মুখে ছিল ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ স্লোগান। কিছুক্ষণের জন্য ভেনিস উৎসব যেন হয়ে ওঠে এক টুকরা ফিলিস্তিন।
দ্য ভয়েস অব হিন্দ রজব এবারের ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের সবচেয়ে আলোচিত সিনেমা। ইসরায়েলি হামলায় নিহত ছয় বছর বয়সী ফিলিস্তিনি শিশু হিন্দ রজবকে নিয়ে তৈরি হয়েছে সিনেমাটি। বানিয়েছেন অস্কারে একাধিকবার মনোনয়ন পাওয়া তিউনিসিয়ান পরিচালক কুসারু বিন হানিয়া।
হলিউডের একাধিক তারকা এই সিনেমার সঙ্গে নানাভাবে যুক্ত হয়েছেন। ব্র্যাড পিট ও হোয়াকিন ফিনিক্স যুক্ত হয়েছেন নির্বাহী প্রযোজক হিসেবে। এ ছাড়া ‘রোমা’খ্যাত মেক্সিকান নির্মাতা আলফোনসো কুরায়ন, অভিনেত্রী রুনি মারা, ‘দ্য জোন অব ইন্টারেস্ট’খ্যাত নির্মাতা জোনাথন গ্লেজার, প্রযোজক ডেডে গার্ডনার ও জেরেমি ক্লেইনারও রয়েছেন এই সিনেমার সঙ্গে। ফলে ভেনিস উৎসবে সিনেমাটির দিকে নজর ছিল সবার। ৩ সেপ্টেম্বর এই উৎসবে সিনেমার প্রিমিয়ারে শিল্পী, কলাকুশলী ছাড়াও হাজির হয়েছিলেন হোয়াকিন ফিনিক্স, রুনি মারাসহ হলিউড থেকে আগত নির্বাহী প্রযোজকেরা। হিন্দ রজবকে স্মরণ করে প্রত্যেকে পরেছিলেন কালো পোশাক। হাতে ছিল শিশু হিন্দ রজবের ছবি।
সত্য ঘটনা নিয়ে তৈরি হয়েছে দ্য ভয়েস অব হিন্দ রজব। ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারি গাজার রেড ক্রিসেন্ট স্বেচ্ছাসেবীরা একটি পরিবারের কাছ থেকে ফোন পান। ইসরায়েলি হামলায় একটি গাড়িতে আটকে পড়া পরিবারটি উদ্ধারের জন্য সাহায্য চাইছিল। কিছুক্ষণ পর ছয় বছর বয়সী শিশু হিন্দ রজবের কণ্ঠ শোনা যায় ফোনে। চাচা-চাচি ও চার ভাইবোনের সঙ্গে গাড়িতে সেও ছিল। গাজা শহর ছেড়ে কোনো নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে যাচ্ছিল তারা। কিন্তু পথে ইসরায়েলি বাহিনীর বাধার মুখে পড়ে। প্রথমবারের হামলায় গাড়িতে থাকা পরিবারের অন্য সদস্যরা প্রাণ হারায়। বেঁচে ছিল শুধু হিন্দ রজব। রেড ক্রিসেন্ট স্বেচ্ছাসেবীদের কাছে অনুরোধ করছিল তাকে উদ্ধারের জন্য।
এর এক দিন আগে ওই এলাকায় কয়েকজন চিকিৎসকের মৃত্যু হয়। তাই সামরিক অনুমোদন ছাড়া রেড ক্রিসেন্ট স্বেচ্ছাসেবীরা উদ্ধারের জন্য যেতে পারছিলেন না। তাঁরা পৌঁছানোর আগে ইসরায়েলি বাহিনী সেই শিশুকেও গুলি চালিয়ে হত্যা করে। রেড ক্রিসেন্ট স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে হিন্দ রজবের সেই কথোপকথনের অডিও রেকর্ড রাখা হয়েছে এই সিনেমায়।