আমাদের আর যাওয়া হলো না, সেই আরেক দিনটা আর এল না
বিনোদন

আমাদের আর যাওয়া হলো না, সেই আরেক দিনটা আর এল না

চোখের নিমেষে যেন কেটে গেল একটি বছর। মনে হচ্ছে, এই তো সেদিন আমরা দুই ভাই হাসতে হাসতে কী দারুণ আড্ডা দিলাম। হ্যাঁ, জুয়েল ভাই তো আমার নিজেরই ভাই। তাঁর সঙ্গে আমার প্রথম দেখা ১৯৯২ সালে, শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে। তাঁর অফিস ছিল সেখানে। ওখানেই তাঁর সঙ্গে আমার প্রথম আলাপ, পরিচয় ও সখ্য। একটা সময় নিয়মিত যেতাম সেখানে। আমাদের সংগীতাঙ্গনের এক অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, গুণী শিল্পী হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল। আমার ক্যারিয়ারের শুরুটাও তাঁর সঙ্গে। আমি তাঁর সঙ্গে গিটার বাজাতাম। যত দূর মনে পড়ে, ১৯৯৪ সাল থেকে টানা তিন বছর বা তারও বেশি সময় পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে গিটার বাজিয়েছি।

গান নিয়ে আজ আমার যে অবস্থান, তাতে দুজন মানুষের বড় অবদান। একজন জুয়েল ভাই, অন্যজন সঞ্জীবদা (সঞ্জীব চৌধুরী)। জুয়েল ভাইয়ের মাধ্যমে সঞ্জীবদার সঙ্গে পরিচয়। জুয়েল ভাইয়ের কারণে আমার প্রথম অ্যালবাম (তখন ভোরবেলা) প্রকাশ, জুয়েল ভাইয়ের কারণেই তাঁর ‘আমার আছে অন্ধকার’ গানটি আমার সুর করা। সেই গান বাচ্চু ভাই (আইয়ুব বাচ্চু) মিউজিক করেছেন। তিনি তখন অন্য কারও সুর করা গানের মিউজিক করতেন না। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটেছিল। বাচ্চু ভাই গানটির মিউজিক করেছেন। আমি সব সময় যে কথাটি বলি, অনুভব করি—সেটা হলো, আমার আজকের যে অবস্থান, তার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ দুই ব্যক্তি হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল ও সঞ্জীব চৌধুরী।

জুয়েল ভাই ছিলেন এক্সট্রা অর্ডিনারি লেভেলের একজন কণ্ঠশিল্পী। অসাধারণ কণ্ঠ ছিল তাঁর। বাংলাদেশের মিউজিক সিনারিওতে জুয়েল ভাইয়ের মতো মেলোডিয়াস কণ্ঠ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তাঁর ভয়েসে একটা অদ্ভুত টেক্সচার ছিল—তাঁর গায়ন, শব্দ উচ্চারণ, একটা গানকে নিজের মতো করে উপস্থাপন করার যে ক্ষমতা; সেটা ছিল অসাধারণ। তাঁর অসম্ভব সুন্দর কণ্ঠটাই গানকে ভিন্ন এক মাত্রায় নিয়ে যেত।

বাপ্পা মজুমদার। ছবি: আজকের পত্রিকা

ব্যক্তি জুয়েল ছিলেন অনেকের চেয়ে ভিন্ন। যদি আমার কথা বলি, ব্যক্তি জুয়েল ভাই ছিলেন আমার বন্ধু, বড় ভাই, অন্যতম অভিভাবক। তিনি অনুষ্ঠান নির্মাতাও ছিলেন। চমৎকার বাচনভঙ্গিতে তাঁর উপস্থাপনা নজর কাড়ত সবার। যেকোনো বিষয়ে কথা বলার আগে বা কারও ইন্টারভিউ নিতে হলে তাঁকে নিয়ে কিংবা ওই বিষয়ে প্রচুর পড়াশোনা করতেন, গবেষণা করতেন। ফলে যেটা বলতেন, জেনেবুঝে বলতেন।

জুয়েল ভাইয়ের সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়েছিল তিনি চলে যাওয়ার মাসখানেক আগে। টেক্সট মেসেজে কথা হচ্ছিল। কথা বেশি দূর এগোয়নি। তিনি মেসেজে বললেন, ‘বাপ্পা, এ নিয়ে আমরা পরে কথা বলি? আমার শরীরে তীব্র ব্যথা হচ্ছে। সহ্য করতে পারছি না।’ ওটাই ছিল তাঁর সঙ্গে শেষ কথা। এরপর জুয়েল ভাইয়ের বাসায় আমাদের বসার কথা ছিল। একদিন ভাবি বললেন, ‘ওর তো মনটা ভালো থাকে না, শরীরটা যেহেতু ভালো নেই। তোমরা সবাই মিলে একদিন আসো। চলো, আমরা একটু গান করি। তাহলে ওর মনটা একটু ভালো হবে।’

আমরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিলাম। জুয়েল ভাইয়ের বাসায় যাব, ঠিক তার আগেই সকালবেলায় ভাবি বললেন, ‘ওর শরীরটা বেশি খারাপ। আজকের প্রোগ্রামটা বরং ক্যানসেল করি। আমরা আরেক দিন করব।’ আমাদের আর যাওয়া হলো না, সেই আরেক দিনটা আর এল না। তার আগে জুয়েল ভাই চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে।

Source link

Related posts

‘রাঙ্গাস্থালাম’ নিয়ে ফিরছেন রাম চরণ

News Desk

ক্রিকেটারের জীবন নিয়ে ওয়েব সিরিজ ‘ম্যাচ উইনার’

News Desk

ভক্তদের গাড়ি উপহার দেবেন ডাউনি

News Desk

Leave a Comment