বাদল সরকার: থার্ড থিয়েটার টু ফার্স্ট থিয়েটার
বিনোদন

বাদল সরকার: থার্ড থিয়েটার টু ফার্স্ট থিয়েটার

বাদল সরকার: থার্ড থিয়েটার টু ফার্স্ট থিয়েটার

বিনোদন ডেস্ক

প্রকাশ : ২৬ জুলাই ২০২৫, ০৮: ০৭

Photo

বাদল সরকার। ছবি: সংগৃহীত

বাদল সরকারের পেশাগত নাম সুধীন্দ্রনাথ সরকার। নাটক লিখেছেন প্রায় ৬০টি। তিনি মনে করতেন, নাটক সমাজের দর্পণ হওয়া উচিত। বাংলা থিয়েটারে ষাটের দশকের শেষ দিকে ‘থার্ড থিয়েটার’ নামক একটি নতুন নাট্যধারার প্রবর্তন করেন বাদল সরকার। ‘থার্ড থিয়েটার’ সমকালে অভিনব ও ব্যতিক্রমধর্মী নাট্যরীতি হিসেবে সমাদৃত হয়। লোকনাট্যকে ‘ফার্স্ট থিয়েটার’ আর প্রসেনিয়ামকে ‘সেকেন্ড থিয়েটার’ প্রচিহ্নিত করে বাদল সরকার নয়া-আন্দোলনরূপে এ ধারাটি হাজির করেন। এটি পুরোপুরি মৌলিক ভাবনা নয়। ষাট-পরবর্তী সময়ে ইউরোপ-আমেরিকায় একটি বিকল্প নাট্যধারার অনুসন্ধান চলছিল। মার্কিন সমালোচক রবার্ট ব্রুস্টাইন থার্ড থিয়েটারকে সংজ্ঞায়ন করে বলেছিলেন, এটি এমন এক থিয়েটার, যা প্রাণোচ্ছল অথচ সমকালীন সমস্যার সমাধান খুঁজতে আগ্রহী। বোধ করি, বাদল সরকার এখান থেকেই ধারণালব্ধ হয়েছিলেন এবং তাঁর চিন্তাটাকে ভারতীয় বাস্তবতায় খানিকটা আলাদা করে তুলেছিলেন। ফলত বাদল সরকারের থার্ড থিয়েটার স্বভূমির বাস্তবতায় স্বতন্ত্র রূপে নির্মিত।

প্রচলিত দুটি ধারা থেকে তিনি বেরিয়ে এসে ফার্স্ট থিয়েটারকে পশ্চাৎ-অভিমুখী আখ্যা দিয়ে বলেন, এ থিয়েটার দেব-দেবীনির্ভর, রাজরাজড়ার কাহিনি, নারীর সর্বংসহা রূপ ও পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বুনিয়াদে বৃত্তাবদ্ধ। সেকেন্ড থিয়েটারকে তিনি বহিরাগত আখ্যা দিয়ে বলেন, এ থিয়েটারের দর্শক সেই শহুরে মধ্যবিত্ত, যে মধ্যবিত্তের বিপ্লবী চরিত্র নেই। এ দুটি ধারার চর্চায় তাঁর মনে হয়েছে সমাজ ও সমকাল নেই; প্রতিবাদ ও প্রতিকার নেই। এ দুইয়ের ভালো দিকগুলো নিয়ে তিনি গড়লেন থার্ড থিয়েটার।

১৯৫৩ সালে মাইথনে থাকার সময় লেখালেখি ও অভিনয়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেন বাদল সরকার। তারও আগে ১৯৪৮-৪৯-এ তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় সদস্য ছিলেন। জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা তাঁকে শিল্পী হিসেবে গড়তে সহযোগিতা করে। ১৯৬৩ সালে আলোড়ন সৃষ্টিকারী নাটক ‘এবং ইন্দ্রজিৎ’ রচনা করেন। প্রথম ছাপা হয় শম্ভু মিত্র সম্পাদিত বহুরূপী পত্রিকায়। ডায়েরির ঢঙে লেখা নাটকটি প্রথম মুক্তাঙ্গনে আসে শৌভনিকের প্রযোজনায় ১৯৬৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর। ১৯৬৮ সালে এবং ইন্দ্রজিৎ নাটকের জন্য তিনি পুরস্কৃত হলেও বিশিষ্টজনেদের অনেকেই তাঁর থার্ড থিয়েটার চিন্তাকে মানতে পারেননি। কিন্তু সাধারণ্যে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে। প্রসেনিয়ামের সীমিত দর্শক থেকে সাধারণ দর্শক তাঁর নাটকের আরাধ্য হয়ে ওঠে। কারণ, নতুন এই ধারায় দূরত্ব থাকল না অভিনেতা ও দর্শকের মাঝখানে। ‘মিছিল’ এ ধারার সবচেয়ে জনপ্রিয় নাটক। প্রবীর দত্ত নামে একজন নাট্যকর্মী কার্জন পার্কে নাটক দেখতে এসে পুলিশের আক্রমণে নিহত হলে তার প্রতিবাদে এ নাটকটি রাজনৈতিক মাত্রা লাভ করে।

নাটক রচনার প্রথম পর্বে অর্থাৎ ষাটের দশকের শুরুতে বাদল সরকার লিখেছেন সিচুয়েশন কমেডি। তিনি কাজ করেছেন ‘লিভিং থিয়েটার’-এ; সান্নিধ্য পেয়েছেন প্রসেনিয়ামবিরোধী রিচার্ড শেখনারের। একই সঙ্গে গ্রোটোস্কির পুওর থিয়েটার তাঁকে ভাবিয়ে তুলেছে। তারপর সিরিয়াস নাটক লেখা ও করার প্রতি নিমগ্ন হয়েছেন। তাঁর মনে হলো, হালকা কমেডি শুধুই আনন্দ দেয় কিন্তু চিত্তহরণ করে না; মনে দাগ কাটে না। নাটকের মাধ্যমে সাধারণের চিত্তরঞ্জন করতে হবে—এমন প্রত্যয়ে তিনি সিরিয়াস নাটক লিখলেন নাটক রচনার দ্বিতীয় পর্বে। বাদল সরকার দেখলেন প্রসেনিয়াম থিয়েটারের সঙ্গে অর্থ আর ব্যক্তিস্বার্থ জড়িত। গণমানুষ ও সমাজ পরিবর্তনের অঙ্গীকার সেখানে ক্ষীণ। নাটকের মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনের প্রত্যয়ীদর্শন নিয়ে তাই তৃতীয় ধারার নাট্যাঙ্গিক নিয়ে এলেন। আঙ্গিকে নবধারা হলেও তিনি প্রথমত বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁর মতে বিষয় আগে ফর্ম পরে; অর্থাৎ কনটেন্টই ফর্ম নির্মাণ করবে। শুধু তাই নয়, সমকালীন নাট্যচর্চার বাস্তবতায় একটি যুগান্তকারী ইশতেহার নিয়ে তিনি হাজির হলেন। প্রশ্ন করলেন থিয়েটার কার? থিয়েটার কোথায়? থিয়েটার কেন? থিয়েটার কী? এ প্রশ্নগুলোর নয়া উত্তরও যুক্ত করেন ইশতেহারেই। তিনি বিশ্বাস করেন থিয়েটার সব মানুষের। থিয়েটার চার দেয়ালে বন্দী নয়, থিয়েটার হবে পাড়ায়-হাটে-রাস্তায়—যেখানে সব মানুষ। সুড়সুড়ি বা বিনোদনের না হয়ে থিয়েটার হবে অনুভবের। থিয়েটার আসলে ‘মানুষে মানুষে বন্ধন’, ‘খোলা মাঠ আর আকাশ’, ‘জীবনের নগ্ন কঠিন চেতনা’।

Source link

Related posts

দেখতে পারেন স্টুডিও জিবলির জনপ্রিয় ১০ অ্যানিমেশন সিনেমা

News Desk

শাকিবের সঙ্গে আমার বিবাহবিচ্ছেদ ঘটেনি: বুবলী

News Desk

নতুন গানে হবু বর-কনেকে শুভেচ্ছা

News Desk

Leave a Comment