Image default
বিনোদন

গান রেকর্ড করে গিনেস বুকে নাম তুলেছিলেন বাপ্পি লাহিড়ী

ভারতের মুম্বাইয়ে কিংবদন্তী সংগীতশিল্পী বাপ্পি লাহিড়ী ৬৯ বছর বয়সে মারা গেছেন। তিনি অসংখ্য বাংলা ও হিন্দি চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দেওয়ার পাশাপাশি ছিলেন গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক ও গায়ক।

মঙ্গলবার রাতে মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে মারা যান এই কিংবদন্তী সংগীতশিল্পী।

বয়স যখন মাত্র তিন। তখন মঞ্চে তবলা বাজাতে শুরু করে ছোট্ট অলোকেশ লাহিড়ী, সেই ছোট ছেলেটাই একদিন হয়ে উঠে ভারতের ‘ভারতের ডিস্কো কিং’। যাকে সবাই এক ডাকে চেনেন ‘বাপ্পি লাহিড়ী’ নামে।
বাপ্পি লাহিড়ীকে ডিস্কো কিং বলা হতো। রোমান্টিক গান থেকে শুরু করে কাওয়ালি, রাগাশ্রয়ী গান সবকিছুই রপ্ত করেছিলেন তিনি। ১৯৮৬ সালে ৩৩ সিনেমায় ১৮০টি গান রেকর্ড করে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নিজের নাম তুলে নিয়েছিলেন বাপ্পি।

১৯৫২ সালের ২৭ নভেম্বর জলপাইগুড়িতে জন্মগ্রহণ করেন বাপ্পি। ছোটথেকেই সুরের জগতের মানুষ ছিলেন বাপ্পিদা, তার বাবা অপরেশ লাহিড়ী ছিলেন বাংলা সংগীতের অন্যতম জনপ্রিয় গায়ক। মা বাঁশরী লাহিড়ী ছিলেন শাস্ত্রীয় সংগীত শিল্পী। বাপ্পি লাহিড়ী শুধু একজন সংগীত পরিচালকই ছিলেন না, প্লে-ব্যাকও করেছেন সমানতালে। পিতা-মাতার সান্নিধ্যেই তার সংগীতে হাতে খড়ি। তিনি বাংলার গর্ব, বাঙালির গর্ব। ১৯ বছর বয়সে দাদু (১৯৭২) নামক বাংলা চলচ্চিত্রে প্রথম কাজ করেন তিনি।

গানের জগতের সফরটা বাংলা ছবির সঙ্গে শুরু করলেও খুব দ্রুতই মুম্বাইয়ে পাড়ি দেন তিনি। তার স্বপ্ন ছিল মামার (কিশোর কুমার) মতো বলিউডে রাজ করবেন। বলিউডে তার প্রথম কাজ ছিল ‘নানহা শিকারি’ (১৯৭৩), এই ছবির গীতিকারের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর পরিচালক তাহির হুসনের ‘জখমি’ ছবিতে গান লেখার পাশাপাশি গেয়েওছিলেন বাপ্পি লাহিড়ী।

আশির দশকের বলিউডে উল্কা গতিতে তার উত্থান। পরপর হিন্দি ছবিতে কম্পোজ করা সুর থেকে তার গানে বুঁদ হয়েছিল আসমুদ্রহিমাচল। মিঠুন চক্রবর্তীর ‘ডিস্কো ডান্সার’ ছবির মিউজিক কম্পোজ করে রাতারাতি সুপারস্টারে পরিণত হয়েছিলেন বাপ্পি লাহিড়ী। তার জনপ্রিয়তা ভারতের গণ্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ে বিদেশে। এরপর থেকেই ডিস্কো কিং’ নামে পরিচিতি লাভ করেন এই বাঙালি গায়ক।

ডিস্কো মিউজিকের ব্যবহার তার মতো আগে কেউ কোনোদিন করেনি ভারতীয় সিনেমায়। কিশোর কুমার, আশা ভোঁসলে থেকে ঊষা উত্থুপ, রথী-মহারথীদের সঙ্গে কাজ করেছেন বাপ্পি লাহিড়ী। সুরক্ষা, ওয়ারদাত, চলতে চলতে, কমাণ্ডো, ইলজাম, ডিস্কো ড্যান্সার, ড্যান্স ড্যান্স, ফিল্ম হি ফিল্ম, সাহেব, টারজান, কসম পয়দা করনে ওয়ালে কি, ‘নমক হালাল’-অজস্র ছবির সুপারহিট গানের স্রষ্টা তিনি। ‘শরাবী’ ছবির গান কম্পোজ করে ফিল্মফেয়ারের মঞ্চে সেরা সংগীত পরিচালকের পুরস্কার এসেছিল তার ঝুলিতে।

শুধু সংগীত পরিচালনা নয়, গায়ক বাপ্পি লাহিড়ীও কম জনপ্রিয় ছিলেন না। তার হিন্দি উচ্চারণে বাংলা টান ছিল স্পষ্ট, সেই বাঙালিয়ানা আজীবন কাটিয়ে উঠতে পারেননি তিনি। বা বলা যায় সেই বাংলা টান কাটানোর চেষ্টা ছিল না তার। সেই নিয়েই বোম্বাই সে আয়া মেরা দোস্ত (আপ কি খাতির) থেকে বোম্বাই নাগারিয়া (ট্যাক্সি নং ৯২১১) বা হু লা লা (ডার্টি পিকচার)-সব জায়গায়তেই অপ্রতিরোধ্যা বাপ্পি লাহিড়ী।

শুধুমাত্র ডিস্কো সংগীতের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকেননি বাপ্পী লাহিড়ী। বেশ কিছু গজল গানও রচনা করেছেন তিনি। কিসি নজর কো তেরা ইন্তেজার আজ ভি হ্যায় (এইতবার), আওয়াজ দি হিয়া (এইতবার) তার মধ্যে অন্যতম।

শুধু বাপ্পিদার গান নয়, তার ফ্যাশন স্টেটমেন্ট বরাবর ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সোনার প্রতি তার প্রেম অজানা নয়। তার মুখের হাসিটাও কম জনপ্রিয় ছিল না, সবসময় ঠোঁটের কোণে লেগে থাকত সেই হাসি।

তবে আজ সকলকে কাঁদিয়ে না-ফেরার দেশে পারি দিলেন বাপ্পি লাহিড়ী। তার প্রয়াণে শোকস্তব্ধ গোটা সংগীত জগৎ।

তথ্য সূত্র : https://www.bd-pratidin.com/

Related posts

দশম অবতার সিনেমার রহস্যময়ী নারী

News Desk

বক্স অফিসে রণবীর-আলিয়ার প্রেমকাহানির ৩০০ কোটি রুপি পার

News Desk

‘পাগলাটে মন’ নিয়ে হাজির অবন্তী সিঁথি

News Desk

Leave a Comment