জাহিদ হাসান (জন্ম ৪ অক্টোবর ১৯৬৭) বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা ও নাট্য পরিচালক। ৯০-এর দশক থেকে বাংলাদেশের প্রথম সারির অভিনেতাদের একজন হিসেবে কাজ করছেন তিনি। টেলিভিশন ছাড়াও তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয়েও আসাধারন দক্ষতা দেখিয়েছেন। বিশেষ করে হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত শ্রাবণ মেঘের দিন তার অভিনীত অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র। এই চলচ্চিত্রে মতি চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্রে বিভিন্ন ধারার চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। তবে দর্শকের কাছে তার অন্যান্য চরিত্রগুলোর পাশাপাশি কৌতুক চরিত্রগুলো বেশি আদরণীয়। তার বিখ্যাত কৌতুক চরিত্র ছিল হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত টেলিফিল্মে মফিজ নামক একটি পাগলের চরিত্র।

জাহিদ হাসান প্রাথমিক জীবন
জাহিদ হাসান ১৯৬৭ সালের ৪ অক্টোবর সিরাজগঞ্জে তার নানার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ইলিয়াস উদ্দিন তালুকদার ছিলেন একজন কাস্টম কর্মকর্তা ও মা হামিদা বেগম ছিলেন একজন গৃহিণী। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে জাহিদ হাসান সবার ছোট। তিনি চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত সিরাজগঞ্জের হৈমবালা উচ্চ বালক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন এবং পরের তিন বছর বেনাপোলের ইন্টার স্কুলে পড়ার পর পুনরায় সিরাজগঞ্জে ফিরে এসে সেখান থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেন।
তিনি স্কাউটের সাথে যুক্ত ছিলেন। সেখানে তিনি অভিনয় করতেন। তিনি সিরাজগঞ্জ তরুণ সম্প্রদায় নাট্য দলে যোগ দেন এবং এই দলের সাথে উত্তর বঙ্গের বিভিন্ন স্থানে মঞ্চনাটকে অভিনয় করেন। সেসময় তিনি সাত পুরুষের ঋণ মঞ্চনাটকে নিয়মিত অভিনয় করেন। ১৯৮৪ সালে ১০ আগস্ট মঞ্চনাটকটি বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত হয়।

জাহিদ হাসান সম্পূর্ণ জীবনী তথ্য
| পুরো নাম: | জাহিদ হাসান |
| ডাক নাম: | জাহিদ |
| পেশা: | অভিনেতা, নাট্য পরিচালক |
| জন্ম তারিখ: | ৪ অক্টোবর ১৯৬৭ |
| জন্মস্থান: | সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ |
| বয়স: | (বয়স ৫৪) |
| ইঞ্চিতে উচ্চতা | ৬ ফুট ২ ইঞ্চি) |
| কি কারণে বিখ্যাত: | গল্প, উপন্যাস,বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী |
| জাতীয়তা: | বাংলাদেশী |
| শিক্ষা | এন/এ |
| ধর্ম: | ইসলাম |
| লিঙ্গ: | পুরুষ |
| রাশি: | এন/এ |
| পিতা: | ইলিয়াস উদ্দিন তালুকদার |
| মা: | হামিদা বেগম |
| বৈবাহিক অবস্থা: | বিবাহিত |
| স্ত্রী | সাদিয়া ইসলাম মৌ |
| সন্তান | পুস্পিতা (মেয়ে), পূর্ণ (ছেলে) |
| পুরস্কার | জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার |
জাহিদ হাসান অভিনয় জীবন
১৯৮৬ সালে আবদুল লতিফ বাচ্চুর পরিচালনায় বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার যৌথ প্রযোজনারবলবান ছায়াছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে হাসানের বড় পর্দায় অভিষেক হয়। তিনি ১৯৯০ সালে টেলিভিশনে অভিনয় শুরু করেন। এর পূর্বে তিনি ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে অভিনয়ের অডিশন দেন। তার অভিনীত প্রথম টেলিভিশন নাটক জীবন যেমন। আলিমুজ্জামান দুলু প্রযোজিত নাটকটি ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত হয়। এই নাটকটি তার জীবনে রূপ পরিবর্তন করে দেয়। ১৯৯০ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্প সমাপ্তি অবলম্বনে নির্মিত সমাপ্তি টেলিফিল্মে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন। নাটকটির চিত্রনাট্য রচনা করেছিলেন অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা।
হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত টেলিফিল্ম নক্ষত্রের রাত, মন্ত্রী মহোদয়ের আগমন, সমুদ্র বিলাস প্রাইভেট লিমিটেড, আজ রবিবার তাকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে আসে। এছাড়াও তিনি হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত শ্রাবণ মেঘের দিন চলচ্চিত্রে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।

জাহিদ হাসান নাট্য পরিচালনা
অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি নাটক পরিচালনা করে থাকেন। তার পরিচালিত প্রথম মেগা ধারাবাহিক লাল নীল বেগুনি। তার পরিচালিত অন্যান্য টেলিভিশন ধারাবাহিকসমূহ হল ঘুঘুর বাসা, চোর কুটুরি, একা, ও ছন্নছাড়া। তার পরিচালিত টেলিভিশন নাটক ও টেলিছবিসমূহ হল রুমঝুম, বোকা মানুষ, ব্যবধান, স্বপ্নের গ্রহ, অপু দ্য গ্রেট, প্রাইভেট ডিটেকটিভ ও বাউন্ডুলে এক্সপ্রেস।

জাহিদ হাসান ব্যক্তিগত জীবন
জাহিদ হাসান প্রতিষ্ঠিত মডেলকন্যা সাদিয়া ইসলাম মৌ-এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের দুই সন্তান রয়েছে। মেয়ের নাম পুস্পিতা এবং ছেলের নাম পূর্ণ। স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে তিনি ঢাকার মোহাম্মদপুরে বসবাস করেন। তার ‘পুস্পিতা প্রডাকশন লিমিটেড’ নামক একটি প্রযোজনা সংস্থা রয়েছে।

জাহিদ হাসান অভিনীত চলচ্চিত্র
| বছর | চলচ্চিত্র | চরিত্র | পরিচালক |
| ১৯৮৬ | বলবান | আব্দুল লতিফ বাচ্চু | |
| ১৯৯৯ | শ্রাবণ মেঘের দিন | মতি | হুমায়ূন আহমেদ |
|
২০০৭
|
মেড ইন বাংলাদেশ | খোরশেদ | মোস্তফা সরয়ার ফারুকী |
| ঝন্টু মন্টু দুই ভাই | ঝন্টু/ মন্টু | আজমল হুদা মিঠু | |
| ২০০৮ | আমার আছে জল | জামিল | হুমায়ূন আহমেদ |
| ২০১১ | প্রজাপতি | তানভীর | মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ |
| ২০১৭ | হালদা | নাদের চৌধুরী | তৌকির আহমেদ |
| ২০১৯ | সাপলুডু | ইরফান | গোলাম সোহরাব দোদুল |

জাহিদ হাসান অভিনীত টেলিফিল্ম
| তারায় তারায় খচিত | নিউজ ম্যান |
| মন্ত্রী মহোদয়ের আগমন – হুমায়ূন আহমেদ | ঝুমুর ঝুমুর প্রেম |
| সমুদ্র বিলাস প্রাইভেট লিমিটেড – হুমায়ূন আহমেদ | টাকার বিত্ত |
| গৃহসুখ প্রাইভেট লিমিটেড – হুমায়ূন আহমেদ | ভয় অভয় |
| পাথরে ফুটাব ফুল | ম্যানেজিং ডাইরেক্টর |
| অপু দ্যা গ্রেট | মাশুল |
| আমি কিন্তু ভালো মানুষ | মা বলিও না |
| চাপাবাজ | বোঝা-না বোঝার বোঝা |
| সেকেন্ড হ্যান্ড | সরি একটু দেরি হয়ে গেল |
| আরমান ভাই হাউজ হাজব্যান্ড | জনৈক পর্যটক |
| রঙ নাম্বার | লাইট হাউজ |
| ঝগড়া পুর | একালের রূপবান |
| কেন মিছে নক্ষত্রেরা | স্বপ্ন |
| ইবলিশ | শুভ বিবাহ |
| কবি | ব্রেকিং নিউজ |
| উকিল জামাই | বিয়েটা আমার খুব দরকার |
| সু পাত্রের সন্ধানে | শ্বশুর বাড়ীর শাল |
| চোর বাটপার | বিপরীতে হিত |
| ইমোশনাল আব্দুল মতিন | আমেরিকানা |
| পিপাসা | চিঠি |
| মোটর সাইকেল | ঘরের খবর পরের খবর |
| নিতু তোমাকেই ভালবাসি | পুত্র দায় |
| এক ফোঁটা পানির জন্য | ভূত অদ্ভুত |
| ছন্ন ছাড়া | বিশ্বাস অবিশ্বাস |
| আবিষ্কার | বদনাম |
| সোলায়মানি কলস | শেষে এসে অবশেষে |
| কবি | মেঘ বালকের গল্প |
| আরমান ভাই | মায়া |
| আবারও আরমান ভাই | সেম সাইড |
| আরমান ভাই কয়া পারছে | রহস্যময়ী |
| আরমান ভাই ফাইস্যা গেছে | হাবিবের সংসার |
| আরমান ভাই বিরাট টেনশনে | হেলিকপ্টার |
| আরমান ভাই দি জেন্টেলম্যান | সাঁকো |
| আরমান ভাই হানিমুনে | মুরির টিন |
| গাড়ি চলে না | টাই-ব্রেকার |
| বুমেরাং | তুলা রাশি |
| খোয়াবনামা | অর্ডার |
| পিশাচ মকবুল | ইরর |
| কবি কিংকর | ১০০ টাকার ব্যপার |
| জনৈক জাহিদ হাসান | পবেত |
| শূণ্য স্থান পূরণ | ফরমাল-ইন |
| সেই চোখ |
জাহিদ হাসান অভিনীত টিভি ধারাবাহিক
- নক্ষত্রের রাত – হুমায়ূন আহমেদ
- আজ রবিবার – হুমায়ূন আহমেদ
- সবুজ সাথি – হুমায়ূন আহমেদ
- অবচেতন মন – জাহিদ হাসান
- বন্ধন – আবুল হায়াত
- গ্র্যাজুয়েট – মুহম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ
- লাল নীল বেগুনী – জাহিদ হাসান
- টোটো কোম্পানি – জাহিদ হাসান
- সাহেব বাবুর বৈঠকখানা – জাহিদুল ইসলাম মিন্টু
- পিছুটান – জাহিদ হাসান

জাহিদ হাসান পুরস্কার ও সম্মাননা
| পুরস্কার | বছর | শ্রেণী | চলচ্চিত্র/নাটক | ফলাফল |
|
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার
|
১৯৯৯ | শ্রেষ্ঠ অভিনেতা | শ্রাবণ মেঘের দিন | বিজয়ী |
| ২০১৭ | শ্রেষ্ঠ খলচরিত্রে অভিনয়শিল্পী | হালদা | বিজয়ী | |
| ২০১৯ | শ্রেষ্ঠ খলচরিত্রে অভিনয়শিল্পী | সাপলুডু | বিজয়ী | |
|
মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার
|
১৯৯৮ | সেরা টিভি অভিনেতা (তারকা জরিপ) | বিজয়ী | |
| ১৯৯৯ | সেরা টিভি অভিনেতা (তারকা জরিপ) | বিজয়ী | ||
| ২০০০ | সেরা টিভি অভিনেতা (তারকা জরিপ) | বিজয়ী | ||
| ২০০১ | সেরা টিভি অভিনেতা (তারকা জরিপ) | বিজয়ী | ||
| ২০০২ | সেরা টিভি অভিনেতা (তারকা জরিপ) | বিজয়ী | ||
| ২০০৭ | সেরা টিভি অভিনেতা (তারকা জরিপ) | বিজয়ী | ||
| ২০১০ | সেরা টিভি অভিনেতা (তারকা জরিপ) | গ্রাজুয়েট | বিজয়ী | |
|
২০১২
|
সেরা টিভি অভিনেতা (তারকা জরিপ) | আরমান ভাই হানিমুনে | বিজয়ী | |
| সেরা টিভি অভিনেতা (সমালোচক) | কর্তা কাহিনী | মনোনীত | ||
|
আরটিভি স্টার অ্যাওয়ার্ড
|
২০১৯
|
ধারাবাহিক নাটকে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা – কেন্দ্রীয় চরিত্র
|
হেভিওয়েট মিজান | বিজয়ী |
| ডিম পাড়ে হাঁসে খায় বাগডাশে | মনোনীত |
জাহিদ হাসান সদা হাস্যোজ্জ্বল চিরতরুণের গল্প
চোখে কাজল, পরনে পাঞ্জাবি ও ঢাকাই লুঙ্গি আর বলনে পুরান ঢাকার আঞ্চলিক ভাষা– ইদের দিনে টিভির পর্দায় প্রচারিত বিশেষ নাটকে এমন ধারার এক মানুষকে দেখা যায়। বলছি আরমান ভাই ওরফে জাহিদ হাসানের কথা। সদা হাসিমুখ এই মানুষটি আমাদের কাছে তুমুল জনপ্রিয় একজন নাট্য ব্যক্তিত্ব। শুধু নাট্য ব্যক্তিত্ব বললে ভুল বলা হবে, চলচ্চিত্র অভিনেতা ও ব্যক্তি জীবনে একজন সফল প্রেমিক ও গৃহকর্তার এক সুন্দর নজির তিনি। আজকে এই গুণী ব্যক্তির জীবন সম্পর্কে কিছু কথা জেনে নেয়া যাক।
বিশিষ্ট অভিনেতা জাহিদ হাসানের অভিনয় জীবন নিয়ে কথা বলার আগে তার ব্যক্তিজীবন সম্পর্কে কিছু তথ্য উল্লেখ করছি প্রথমে। ১৯৬৭ সালের ৪ অক্টোবর, সিরাজগঞ্জের এক সাধারণ পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ছিলেন একজন কাস্টম কর্মকর্তা এবং মা একজন গৃহিণী। ছোটবেলা থেকেই সবার আদরে বড় হয়েছেন তিনি। ৮ ভাইবোনের মাঝে তিনি সর্বকনিষ্ঠ। তার শিক্ষাজীবন অতিবাহিত হয়েছে সিরাজগঞ্জে। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই অভিনয়ের প্রতি তার বেশ আগ্রহ ছিল এবং প্রায়সময় বিভিন্ন স্কুলের অনুষ্ঠানে তিনি অংশগ্রহণ করেন। সিরাজগঞ্জে থাকাকালীন তিনি সিরাজগঞ্জ তরুণ সম্প্রদায় নাট্য দলের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং সেখানে নিয়মিত অভিনয় করতেন। সেসময় সেখানে তিনি ‘সাত পুরুষের ঋণ মঞ্চ’ নাটকটিতে অভিনয় করেছিলেন।
পড়াশোনা শেষে একসময় তিনি ঢাকার পথে পাড়ি জমান নিজের কর্মজীবন শুরুর লক্ষ্যে। তবে অভিনয়কে নিজের পেশা হিসেবে বেছে নেবেন, এমন ভাবনা তখনও তার ছিল না। কিন্তু ভাগ্যের লিখন খন্ডাবে কে, তিনি ঢাকায় এসে মঞ্চ নাটকের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন। নিজের অভিনয় প্রতিভাকে বিকশিত করার সুযোগটি তিনি হেলায় নষ্ট করেননি।
ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকলে, আমাদের জীবনে এমন অনেক কিছুই ঘটে থাকে যা হয়তো আমরা কল্পনা করি না। কিছু ঘটনা আমাদের চলার পথকে কিছুটা সহজ করে দেয়। জাহিদ হাসান অভিনীত ‘সাত পুরুষের ঋণ’ মঞ্চ নাটকটি ১৯৮৪ সালের ১০ আগস্ট বিটিভিতে প্রচারিত হয়। আর এভাবেই রূপালী পর্দার ছোট ঘরানায় তার পদযাত্রা শুরু হয়।
পথপরিক্রমায় ঠিক ৫ বছর পর, ১৯৮৯ সালে বিটিভির একটি নাটকের অডিশনে তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন। তার অভিনয়শৈলীতে মুগ্ধ হয়ে বিচারকগণ তাকে নাটকের জন্য মনোনীত করেন। তার অভিনীত প্রথম ছোট পর্দার নাটক ‘জীবন যেমন’। ১৯৯০ সালে এই নাটকটি প্রচারিত হয়। এরপর নতুন নতুন টিভি চ্যানেল আসতে থাকে এবং কাজের পরিসর বাড়তে থাকে। একটি-দুটি করতে করতে আজ জাহিদ হাসানের ঝুলিতে রয়েছে অসংখ্য নাটকে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা। আমরা তাকে মূলত হাস্যরসাত্মক চরিত্রগুলোতে অভিনয় করতে দেখে থাকি। চরিত্রগুলোকে তিনি তার সুনিপুণ দক্ষতায় ফুটিয়ে তোলেন। প্রতিটি চরিত্রে আমরা ভিন্ন জাহিদ হাসানকে দেখে থাকি। চরিত্রের প্রয়োজনে তিনি নিজেকে সেই ধাতে গড়ে তোলেন। কখনো শুদ্ধ বাংলা ভাষায় চলিত রীতিতে অনর্গল কথা বলে চলেছেন, আবার কখনো রপ্ত করেছেন আঞ্চলিক ভাষাকে।
এবার আসা যাক তার চলচ্চিত্র অভিনয় সম্পর্কিত তথ্যে। কথায় আছে, যে পারে, সে সবই পারে। শক্তিশালী এই অভিনয়শিল্পী চলচ্চিত্র অঙ্গনেও তার প্রখর মেধার পরিচয় দিয়েছেন, উপহার দিয়েছেন বেশ কিছু ব্যবসাসফল ও দর্শকনন্দিত সিনেমা। তার অভিনীত প্রথম সিনেমা ‘বলবান’। বাংলাদেশ, শ্রীলংকা ও পাকিস্তানের যৌথ প্রযোজনায় সিনেমাটি তৈরি হয় এবং প্রদর্শিত হয় ১৯৮৬ সালে। এরপর তিনি বেশ কিছু সিনেমায় অভিনয় করেছেন, যেমন- শ্রাবণ মেঘের দিন, মেড ইন বাংলাদেশ, প্রজাপতি, আমার আছে জল, ঝন্টু মন্টু দুই ভাই ইত্যাদি। তবে চলচ্চিত্র অঙ্গনে হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ এ মন্টু চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি সকলের নজর কাড়েন এবং দর্শকদের কাছ থেকে ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছেন। এই চলচ্চিত্রের জন্য ১৯৯৯ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে মেরিল প্রথম আলো পুরষ্কার অর্জন করেন।
এ পর্যন্ত তার সর্বশেষ অভিনীত সিনেমা হালদা। কিছুদিন আগে সিনেমাটি রিলিজ পেয়েছে, যেখানে তাকে নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গেছে। মানুষ তাকে সবসময় একজন কৌতুক অভিনেতা ও ইতিবাচক চরিত্রেই অভিনয় করতে দেখেছেন। অনেকটা সাহস নিয়ে তিনি নিজেকে ভিন্ন ধাঁচে উপস্থাপন করেছেন এবং তিনি নিরাশ করেননি। দর্শকরা তার অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়েছে।
জাহিদ হাসানের ভক্তরা জেনে খুশি হবেন, সম্প্রতি তিনি ‘কলকাতার সিতারা’ নামক একটি নতুন সিনেমাতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। কলকাতার জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক আবুল বাশার রচিত উপন্যাস ‘ভোরের প্রসূতি’ অবলম্বনে সিনেমার গল্প তৈরি হয়েছে এবং সিনেমাটি পরিচালনা করবেন আশীষ রায়। এই ছবিতে তাকে দিলু নামক একজন দায়িত্ববান পুরুষের ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখা যাবে।
এত বছরের অভিনয় অভিজ্ঞতাকে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজে লাগিয়ে একসময় তিনি পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। মেয়ের নামে তার একটি নিজস্ব প্রোডাকশন হাউজ রয়েছে, নাম পুষ্পিতা। তার প্রোডাকশন হাউজ থেকে বর্তমানে দুটি ধারাবাহিকের কাজ চলছে– ‘রাজু ৪২০’ ও ‘ভ্যাগাবন্ড’। দুই ধারাবাহিকের নাম ভূমিকায় তিনি অভিনয় করছেন, তবে দুই নাটকে তাকে দুটি ভিন্নরূপে দেখা যাবে।
এবার তার বিবাহিত জীবন নিয়ে আলোকপাত করা যাক। অভিনয় করতে করতে একসময় অভিনয় জগতের এক মানুষকে তিনি ভালোবেসে ফেলেন। ভালোবাসা উভয় পক্ষ থেকেই ছিল। একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের শ্যুটিং চলাকালে সাদিয়া ইসলাম মৌ ও জাহিদ হাসানের মধ্যে ভালোলাগার জন্ম নেয়। গানটি ছিল “আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে…”। তাদের মাঝে প্রণয়ের সূত্রপাতে হয়ত এই গানের কথাগুলোর কিছু প্রভাব থাকলেও থাকতে পারে। একপর্যায়ে তাদের ভালোবাসার সম্পর্ক বিয়ের সম্পর্কে গড়ায়। তবে ভালোবাসা থেকে বিয়ের মধ্যকার পথটুকু মোটেও সহজ ছিল না জাহিদ হাসানের জন্য। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তাকে বৌ হিসেবে ঘরে তুলতে পেরেছেন।
মৌ সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছুই নেই; তিনি একজন স্বনামধন্য মডেল, অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী। তারা দুজনই মিডিয়া জগতের জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। বছরের পর বছর ধরে তারা একই ছাদের তলায় সুখে শান্তিতে বসবাস করছেন। তাদের ঘর আলো করে রয়েছে দুই সন্তান– মেয়ে পুষ্পিতা ও ছেলে পূর্ণ।
জাহিদ হাসান এমন একজন মানুষ, যিনি তার কর্ম ও ব্যক্তিজীবন, উভয়ক্ষেত্রেই একজন সফল মানুষ।




