সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বানর আতঙ্ক, প্রধান বন সংরক্ষকের সাহায্য চাইলেন ভিসি
বাংলাদেশ

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বানর আতঙ্ক, প্রধান বন সংরক্ষকের সাহায্য চাইলেন ভিসি

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) দেড় সহস্রাধিক আবাসিক ছাত্রীর মধ্যে বিরাজ করছে বানর আতঙ্ক। গত কয়েক মাসে বানরের আক্রমণে দুটি ছাত্রী হলের শতাধিক ছাত্রী আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র। 

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টিলা ও গাছপালা ঘেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের জন্য নির্মিত সামাদ রহমান হল ও সুহাসিনী দাস হলে খাবারের সন্ধানে বানর দলবেঁধে হানা দেয়। দুই ছাত্রী হলে প্রায় দেড় হাজারের অধিক ছাত্রীর বসবাস। সম্প্রতি বানরের উৎপাত বৃদ্ধি পাওয়ায় বন বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ২টি হলের চারপাশে নেট দিয়ে ঘেরাও দেয়, হলের পার্শ্ববর্তী গাছের ডালপালা ছাঁটাই, ট্রেপ স্থাপনসহ নিরাপত্তাব্যবস্থা বৃদ্ধি করেছে। এরপরও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বানরের উৎপাত।

রোকেয়া ইয়ামিন মোহনা নামের আবাসিক হলের একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘বানরের কারণে আমরা সব সময় আতঙ্কের মধ্যে থাকি। সামনে অনেকের ফাইনাল পরীক্ষা। এ কারণে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে আমরা শঙ্কিত। আমরা এ সমস্যার সমাধান চাই।’

সিকৃবি ভিসি প্রফেসর ড. মো. আলিমুল ইসলাম বলেন, ‘বন্যপ্রাণী নিয়ন্ত্রণ আইনের বাধ্যবাধকতা থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ সত্ত্বেও এই সমস্যা নির্মূল করা সম্ভব হচ্ছে না। ছাত্রী হলের নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি আহতদের সুচিকিৎসা ও ভ্যাকসিন প্রদানের ব্যবস্থাসহ বানরের আক্রমণ থেকে সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানের যথাসাধ্য চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এই বিষয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধৈর্যসহ সচেতনভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের যেকোনও ধরনের নিরাপত্তা প্রদানের ক্ষেত্রে প্রশাসন সচেষ্ট ও বদ্ধপরিকর।’

নগরীর বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নগরীর কলবাখানির চাষনী পীর (র.) মাজারসংলগ্ন চা বাগান, খাদিম জাতীয় উদ্যান, টিলাগড় ইকোপার্ক ছাড়াও সিলেট নগরীর আশপাশে অসংখ্য টিলা আর জঙ্গল ছিল। এসব টিলা ও জঙ্গলে দলে দলে বানরসহ নানা প্রজাতির প্রাণীর অবাধ বিচরণ ছিল। বানরের দল বিভিন্ন বনজ ফল নিয়ে এক গাছ থেকে অন্য গাছে লাফালাফি করতে দেখা যেত। নগরায়ণের ফলে এবং মানুষের অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ডের কারণে এসব গাছ ও টিলা ক্রমশ অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। ফলে বনে দেখা দিয়েছে খাবারসংকট। ফলে ২০২০ সালের মার্চে করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর থেকে নগরীর আম্বরখানা, ইলেকট্রিক সাপ্লাই, কুমারপাড়া, সোবহানীঘাট, কাজিটুলা, শাহী ঈদগাহ, সুবিদবাজার, বনকলাপাড়া এমনকি টিলাগড় ইকোপার্ক ও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে এসব বানর।

নগরীর বাসিন্দাদের মতে, হজরত শাহজালাল (র.)-এর অন্যতম সফরসঙ্গী হজরত চাষনী পীর (র.) মাজারকে ঘিরে বানরের আবাসস্থল গড়ে ওঠে। টিলাবেষ্টিত এ মাজার এলাকায় ছিল প্রচুর গাছপালা ও ঝোপঝাড়। এ কারণে বানররা স্থানটিকে নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহার করত। মাজারে আগত দর্শনার্থীরা এসব বানরকে কলাসহ অন্যান্য খাবার দিতেন। বর্তমানে দর্শনার্থী তুলনামূলক কমে যাওয়া এবং গাছপালা উজাড় হয়ে যাওয়ায় বানরগুলো খাবারসংকটে ভুগছে। ফলে তারা বাসাবাড়িতে খাবারের সন্ধান করছে। এমনকি অনেকসময় শিশুসহ অন্যদের কামড় দিচ্ছে।

প্রধান বন সংরক্ষকের সঙ্গে সাক্ষাৎ

বানরের উপদ্রব থেকে রক্ষা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গতকাল বুধবার সিকৃবির উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আলিমুল ইসলাম প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমির হোসাইন চৌধুরীর সঙ্গে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বনভবনে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় সিকৃবি ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দফতরের পরিচালক প্রফেসর ড. মো. সামিউল আহসান তালুকদার, বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক মো. সানাউল্লাহ পাটোয়ারী এবং বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক মো. মিজানুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বানরের আক্রমণ থেকে ছাত্রীদের রক্ষার জন্য বন বিভাগের প্রতি দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আহ্বান জানালে বন বিভাগের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করা হয়।

Source link

Related posts

হাসপাতালের অধিকাংশ যন্ত্রপাতি বিকল, ৭ বছর ধরে তালাবদ্ধ হৃদরোগ বিভাগ

News Desk

ভিডিও ধারণ শেষে কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে টিকটকার গ্রেফতার

News Desk

বাবার অটোভ্যান চুরি করে বিক্রি, টাকা না দেওয়ায় প্রতিবেশীকে হত্যা

News Desk

Leave a Comment