বসতবাড়ির সম্পত্তি হাতিয়ে নিজের বৃদ্ধা মাকে বাড়িতে ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছেলের বিরুদ্ধে। নিজের একমাত্র ছেলের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ তুলে বাড়ির সামনে ধরনায় বসেছেন ওই বৃদ্ধা। ওই বৃদ্ধার অভিযোগ, সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে তার একমাত্র ছেলে মোস্তাফিজুল ইসলাম সৌরভ তাকে বাড়িতে ঢুকতে দিচ্ছে না।
সোমবার (১৪ জুলাই) নওগাঁ শহরের কাজীর মোড় এলাকায় এই ঘটনাটি ঘটেছে।
ওই বৃদ্ধার নাম বিলকিস আক্তার (৭০)। তার এক ছেলে ও দুই মেয়ে। ছোট মেয়ে কানাডায় থাকেন। শহরের কাজীর মোড়ে বিলকিস আক্তারের স্বামী নিজের ১০ শতক জমির ওপর প্রায় ৩০ বছর আগে দোতলা বাড়িটি নির্মাণ করেন। ওই বাড়ির দোতলার একটি ফ্ল্যাটে তিনি বসবাস করে আসছিলেন।
বৃদ্ধা বিলকিস আক্তারের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর বসতবাড়ির জমি নিয়ে ছেলে মোস্তাফিজুল ইসলামের সঙ্গে মা বিলকিস আক্তারের বিরোধ সৃষ্টি হয়। স্বামীর মৃত্যুর পর আইন অনুযায়ী বিলকিস আক্তার ও তার তিন সন্তান বসতবাড়ির অংশীদার হন। কিন্তু মোস্তাফিজুল ইসলাম বসতবাড়ির পুরো সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে তার মা ও বোনদের তাদের অংশের জমি লিখে দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। কিন্তু মা ও বোনেরা তাকে বসতবাড়ির জমি লিখে দিতে রাজি না হওয়ায় পারিবারিক বিরোধ দেখা দেয়। ছেলের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় বিলকিস আক্তার ২০২১ সাল থেকে অধিকাংশ সময় নওগাঁ শহরেই বড় মেয়ের বাড়িতে থাকছেন। সোমবার বেলা ১১টার দিকে নিজের বাড়িতে এসে দোতলার ফ্ল্যাটে ঢুকতে গিয়ে তালা মারা দেখতে পান। তালা মারার বিষয়টি ছেলেকে মোস্তাফিজুলকে জানালে তিনি সাফ জানিয়ে দেন তাকে বাড়িতে ঢুকতে না দেওয়ার জন্য গেটে তালা ঝুলিয়েছেন।
এদিকে বাড়িতে ঢুকতে না পেরে বাড়ির নিচতলায় দোতলায় ওঠার সিঁড়ির সামনে গ্যারেজে বসে ছিলেন বৃদ্ধা বিলকিস আক্তার। এমন দিনও দেখতে হবে তিনি কখনও ভাবেননি।
এ বিষয়ে কথা হয় বিলকিস আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘স্বামীর মৃত্যুর পর তার একমাত্র ছেলে তার দেখাশোনা করেন না। বোনদের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করেন। ছেলের কথা বসতবাড়ির আমার ও মেয়েদের অংশ তাকে লিখে দিতে হবে। কিন্তু আমরা তাকে জমি লিখে দিতে রাজি হইনি। এটা নিয়ে বিরোধ শুরু। ছেলের সাথে বনিবনা না হওয়ায় স্বামীর মৃত্যুর পর বড় মেয়ের বাড়িতেই থাকি। মাঝে মাঝে নিজের বাড়িতেও থাকি। সোমবার বেলা ১১টার দিকে ফ্ল্যাটে ঢুকতে গিয়ে দেখি দোতলার সিঁড়িতে কাঁচি গেট লাগিয়েছে এবং তালা ঝোলানো। আমি ছেলেকে তালা খুলতে বললে সে আমাকে বলে, “তুই তো দুই আনার মালিক। তুই গিয়ে পাথারে গিয়ে থাক। এই বাড়িতে তোর জায়গা হবে না।” আমি আজকে রোজা আছি। বেলা ১১টা থেকে বসে আছি। আমি আমার নিজের বাড়িতে ঢুকতে চাই। আমার বড় মেয়ে এসেছিল তাকে বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বামী এই বাড়ি করে গেছেন। এটা আমার স্বামীর স্মৃতি। জীবনের বাকিটা সময় এই বাড়িতে কাটাতে চাই। এই বাড়িতে আমার মালিকানা কম বলে ছেলে এর আগেও কটাক্ষ করেছে। মেয়েরা আমার অপমান সইতে না পেরে তাদের অংশ আমাকে লিখে দিয়েছে। এই বাড়িতে কাগজে-কলমে আমার অংশই বেশি। কিন্তু আমার ছেলে পুরো সম্পত্তি হাত করার জন্য আমাকে বাড়িতে ঢুকতে দিতে চায় না।’
বিলকিস আক্তারের বড় মেয়ের স্বামী ডা. আবুজার গাফফার বলেন, ‘আমার শ্যালক এর আগেও শাশুড়িকে নির্যাতন করেছে। এমনকি গায়ে হাতও তুলেছে। এটা নিয়ে মামলাও রয়েছে। আমার শ্যালকের মধ্যে মানবতা বলে কিছু নেই। নিজের মাকে বলে, তুই দুই আনার মালিক, তুই গিয়ে পথে থাক। এই কথা শুনে ২০২৩ সালে আমার স্ত্রী ও শ্যালিকা বসতবাড়ির তাদের অংশের জমি মায়ের নামে লিখে দিয়েছে। কাগজে-কলমে আমার শাশুড়ি এখন বসতবাড়ির প্রায় ৭০ শতাংশের মালিক। অথচ তাকেই এখন বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।’
মাকে বাড়িতে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ স্বীকার করে ছেলে মোস্তাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘বসতবাড়ি নিয়ে পারিবারিক কলহের জেরে মারামারি ও চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। আমাকে প্রাণনাশের চেষ্টা করা হয়েছিল। ওই ঘটনার পর আমার মা স্বেচ্ছায় মেয়ের বাসায় বসবাস করে আসছেন। আদালতের নির্দেশে বড় বোনের জিম্মায় আছেন। এখন তিনি আমার জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ তাই তাকে বাড়িতে ঢুকতে দিচ্ছি না। তিনি বাড়িতে থাকলে আবারও পারিবারিক কলহ ও মারামারি হতে পারে। তাই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’