বরিশালের ৬টি আসনে হেভিওয়েটের ছড়াছড়ি, থাকছে বিদ্রোহীর শঙ্কা
বাংলাদেশ

বরিশালের ৬টি আসনে হেভিওয়েটের ছড়াছড়ি, থাকছে বিদ্রোহীর শঙ্কা

ফেব্রুয়ারি মাস যতই এগিয়ে আসছে বরিশালের ছয়টি আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে প্রার্থিতা নিয়ে প্রতিযোগিতা বেড়েই চলেছে। আর এ প্রতিযোগিতায় বিএনপির স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে নেতৃবৃন্দও রয়েছেন।

এমনকি যারা দীর্ঘদিন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত- পদ পদবি না থাকলেও তারাও আছেন প্রতিযোগিতায়। আর এ কারণে প্রার্থীদের কেন্দ্র করে বাড়ছে গ্রুপিংও। প্রতিযোগিতায় থাকা অনেকেই হেভিওয়েট। এর মধ্যে আগের সংসদ নির্বাচনে জয় পাওয়া প্রার্থীরাও রয়েছেন। থাকছেন কেন্দ্রীয় নেতারাও। এতে দলীয় মনোনয়ন না পেলে অনেকেই বিদ্রোহী হতে পারেন বলেও শঙ্কা রয়েছে তৃণমূলে।

বরিশাল-১ (আগৈলঝাড়া-গৌরনদী) আসনে প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন, কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য প্রকৌশলী আব্দুস সোবাহান ও বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান।

বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনে প্রার্থী হতে আগ্রহী কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু, মোহাম্মদ দুলাল হোসেন ও দেলোয়ার হোসেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির বন ও পরিবেশক সহ-সম্পাদক কাজী রওনুকুল ইসলাম টিপু এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইদ মাহামুদ জুয়েল। শোনা যাচ্ছে গোলাম ফারুক অভির নামও।

বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে প্রার্থী হতে চান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সভাপতি জয়নুল আবেদীন।

বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনে প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবকদলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান।

বরিশাল-৫ (সদর) আসনে প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মজিবর রহমান সরোয়ার, উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমতুল্লাহ ও এবায়েদুল হক চাঁন। প্রার্থীর তালিকায় নাম লিখিয়েছেন সাবেক বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরীন, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবুল কালাম শাহিন।

বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনে প্রার্থী হতে চান বরিশাল জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাবেক সংসদ সদস্য আবুল হোসেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম খান রাজন ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবকদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর শিকদার বাদল।

৫ আগস্ট পরিবর্তী সময় থেকে বরিশালের ছয়টি আসনে বিএনপি থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে স্ব-স্ব আসনে দলীয় কর্মসূচি থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ তারা প্রার্থী হতে পারেন এমন কথা জানাচ্ছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার থেকে নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণার পর এর তালিকা দীর্ঘ হতে শুরু করেছে। কেউ কেউ নিজেদের ‘দল মনোনয়ন’ দেবে বলেও জানাচ্ছেন।

এর মধ্যে কিছু নেতা রয়েছেন যারা আবার প্রার্থীর সিরিয়াল ধরে রাখতে চান। এবার দল থেকে প্রার্থী হতে না পারলে পরে যাতে তারা বলতে পারেন, প্রার্থীর তালিকায় থাকা সত্ত্বেও তাকে প্রার্থী করা হয়নি। ছয়টি আসনে যাদের গত ১৭ বছরে একবারের জন্য মুখ দেখা যায়নি, তারাও এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। সে ক্ষেত্রে দলীয় কর্মসূচি থেকে শুরু করে সামাজিক-সাংস্কৃতিক এবং খেলাধুলার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে তারা অংশ নিয়ে নিজেদের প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরছেন

বরিশালে ছয়টি আসনের মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আসন হচ্ছে বিভাগীয় শহর বরিশাল-৫ সদর। এ আসনে প্রার্থী হতে চান সাবেক তিনবারের সংসদ সদস্য চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মজিবর রহমান সরোয়ার। তিনি বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। বিএনপির প্রভাবশালী নেতা হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে বরিশালে। সর্বশেষ ২০০৮ সালের নির্বাচনে সরোয়ার এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

তার সঙ্গে প্রার্থীর প্রতিযোগিতায় রয়েছেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপির নির্বাহী সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমতুল্লাহ, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবুল কালাম শাহিন।

প্রার্থী হতে চান পদ স্থগিত হওয়া বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য বিকলিক জাহান শিরীন ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এবায়েদুল হক চাঁনও। 

বরিশাল-৩ আসন থেকে প্রার্থী হতে প্রত্যন্ত এলাকা ঘুরে বেড়াচ্ছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান এবং কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সভাপতি জয়নুল আবেদীন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে সেলিমা রহমানের সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন জয়নুল আবেদীন। এ কারণে জাতীয় পার্টির প্রার্থী দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আগামী নির্বাচনেও একই অবস্থা হলে সে ক্ষেত্রে আসনটি বিএনপির হাতছাড়া হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সুযোগ নিতে চান জামায়াতে ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীরা।

বরিশাল-১ আসন থেকে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইউনুস তালুকদারের কাছে পরাজিত হন প্রকৌশলী আব্দুস সোবাহান। এর আগে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন জহির উদ্দিন স্বপন। সেখানে স্বপনের সঙ্গে প্রার্থিতা নিয়ে প্রতিযোগিতায় রয়েছেন আব্দুস সোবাহান ও আকন কুদ্দুসুর রহমান।

বরিশালের ৬টি আসনে হেভিওয়েটের ছড়াছড়ি, থাকছে বিদ্রোহীর শঙ্কা

বরিশাল-২ আসনে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনিরুল ইসলাম মনিরের কাছে পরাজিত হন বিএনপি প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু। তার সঙ্গে প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ দুলাল হোসেন ও দেলোয়ার হোসেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির বন ও পরিবেশক সহ-সম্পাদক কাজী রওনুকুল ইসলাম টিপু এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইদ মাহামুদ জুয়েল।

সম্ভাব্য প্রার্থী ও তাদের অনুসারীরা উপজেলা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ছুটে বেড়াচ্ছেন। একই সঙ্গে প্রার্থীর পক্ষে সালাম দেওয়ার সঙ্গে আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের পক্ষে ভোট চাইছেন। এ ক্ষেত্রে যে যার পক্ষে যাচ্ছেন, তিনিই তাদের প্রার্থী সবুজ সংকেত পেয়েছেন অথবা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্বাচনি মাঠে গিয়ে কাজ করতে বলেছেন বলে দাবি করছেন।

এদিকে বরিশাল-২ আসনে চমক আসারও একটি খবর রটেছে। ওই আসনে সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক অভির নামও শোনা যাচ্ছে। অভির বাড়ি উজিরপুর। সেখান থেকে কানাডায় অবস্থানরত অভির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টুর বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা।

বরিশাল-৪ আসনে ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ। ফরহাদের সঙ্গে প্রার্থিতার যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবকদলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান। সেখানে ফরহাদ এবং রাজিব তাদের অনুসারীদের নিয়ে দলীয় কর্মসূচি থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন। একইসঙ্গে তাদের প্রার্থিতাও ঘোষণা করছেন।

বরিশাল-৬ আসনে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন বিএনপি প্রার্থী আবুল হোসেন খান। এর আগে ওই আসন থেকে আবুল হোসেন খান একবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার সঙ্গে প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন ৭ জন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম খান রাজন, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবকদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর শিকদার বাদল, যুক্তরাজ্যের বিএনপি নেতা সোলায়মান সেরনিয়াবাত, অঙ্গিসেনা সংসদের চেয়ারম্যান টি এম জহিরুল হক তুহিন।

মাঠ পর্যায়ের একাধিক বিএনপি নেতা নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানিয়েছেন, বড় একটি রাজনৈতিক দল এবারের নির্বাচনে না থাকায় বিএনপির প্রার্থীদের জয়ী হতে তেমন বেগ পেতে হবে না- এটি কোনোভাবেই ঠিক নয়। কারণ ৫ আগস্ট পরবর্তী সময় সাধারণ ভোটাররা চিন্তাভাবনা করেই ভোট দেবেন।

সে ক্ষেত্রে বিএনপি থেকে প্রার্থী ঘোষণার পর বিদ্রোহী প্রার্থী হলে যেকোনও দল সেটির সুযোগ নেবে। বিশেষ করে জামায়াত ইসলামী এ সুযোগ কোনোভাবেই হাতছাড়া করবে না। এ কারণে যে আসনে যার জনপ্রিয়তা রয়েছে, তাকে প্রার্থী ঘোষণার পাশাপাশি বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা জারির দাবি জানিয়েছেন।

তারা আরও বলেন, প্রার্থীর তালিকা যত দীর্ঘ হচ্ছে গ্রুপিং একইভাবে দীর্ঘ হচ্ছে। বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ভাগ ভাগ হয়ে প্রার্থীদের সঙ্গে সময় দিচ্ছেন। এতে যারা প্রার্থী হতে চান, তাদের নাম বসিয়ে গ্রুপের নামও দেয়া হয়েছে। যা আগামী নির্বাচনে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে ধারণা করছেন মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, বিএনপি বড় একটি রাজনৈতিক দল। সে ক্ষেত্রে এ দল থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার প্রার্থীও বেশি। তবে দল থেকে প্রতিটি আসনের একক প্রার্থী ঘোষণার পর এখন যে গ্রুপিং দেখছেন তা দেখা যাবে না। আমার ধারণা, কেন্দ্রের নির্দেশনা মেনেই সবাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন।

তিনি আরও বলেন, সে ক্ষেত্রে কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে দলের ক্ষতি করবে না। আসলে এ মুহূর্তে দেশের স্বার্থে প্রয়োজন সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচন। ওই নির্বাচনের অপেক্ষায় রয়েছে সাধারণ ভোটাররা। তারাও দীর্ঘদিন তাদের প্রার্থী নির্বাচিত করতে পারেননি। আমরা আশা করছি, এবারের নির্বাচনের মাধ্যমে সাধারণ ভোটাররা তাদের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটাতে পারবে। 

Source link

Related posts

‘চুরির টাকা’ নিলেন স্বামী, খুন হলেন স্ত্রী

News Desk

গুলিতে শিশু হত‍্যা: ‘পুলিশের গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা’

News Desk

বিশ্রামের ফুরসত নেই রাজশাহীর বিক্রেতাদের

News Desk

Leave a Comment