ফেরির ধাক্কায় রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের ৩ নম্বর পন্টুনের কবজা ভেঙে গেছে। এতে বন্ধ হয়ে গেছে ঘাটটি। সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। বর্তমানে দৌলতদিয়ায় শুধু ৪ নম্বর ঘাট চালু আছে। এতে যানবাহন পারাপারে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে এবং সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘ যানজট।
মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে দেখা যায়, ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দৌলতদিয়া ক্যানাল ঘাট পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এলাকায় পণ্যবাহী ট্রাক পারাপারের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। কয়েকশ যানবাহন ফেরির জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। আটকে থাকা যানবাহনগুলোর মধ্যে পচনশীল পণ্যবাহী ট্রাকগুলোর চালকরা দুশ্চিন্তায় আছেন। অল্প সংখ্যক যাত্রীবাহী যানবাহন থাকলেও পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যাই বেশি। ফলে ট্রাকচালক ও যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থেকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয় ও ঘাট সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সোমবার বিকাল থেকে দৌলতদিয়া প্রান্তে পদ্মায় তীব্র স্রোত দেখা দেয়। সন্ধ্যার পর এর তীব্রতা আরও বাড়ে। রাত ১১টার দিকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া থেকে ছেড়ে আসা রো রো ফেরি শাহ পরান দৌলতদিয়ায় পৌঁছে নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারায় ফেরিটি প্রচণ্ড বেগে ৩ নম্বর ঘাটের পন্টুনে ধাক্কা দিলে কবজা ভেঙে যায়। এরপর থেকে ঘাটটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর আগে ২৩ আগস্ট থেকে তীব্র স্রোতের কারণে দৌলতদিয়ার ৭ নম্বর ঘাটও বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে চারটি ঘাটের মধ্যে কেবল ৪ নম্বর ঘাট সচল রয়েছে। সেখানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাত্রীবাহী পরিবহন এবং জরুরি কিছু পণ্যবাহী গাড়ি পার করা হচ্ছে। তবে সাধারণ পণ্যবাহী গাড়ি পারাপার বন্ধ রাখা হয়েছে। একটি ঘাট চালু থাকায় যানবাহনের দীর্ঘ সারি তৈরি হয়েছে।
ফরিদপুর থেকে ছেড়ে আসা গোল্ডেন লাইনের বাসচালক আব্দুল জলিল বলেন, ‘দুই ঘণ্টা ধরে দৌলতদিয়া ঘাটে আটকে আছি। একটি মাত্র ঘাট চালু রয়েছে। যাত্রীদের ভোগান্তি হচ্ছে।’
যশোর থেকে আসা ট্রাকচালক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সকাল ৮টার দিকে এসে আটকে আছি। গাড়িতে তার রয়েছে। সময়মতো মালামাল পরিবহন করতে না পেরে পরিবহন খরচের পাশাপাশি আমাদের খরচও বাড়ছে।’
বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, ‘তীব্র স্রোতের কারণে ফেরি পারাপারে অনেক বেশি সময় লাগছে। সোমবার রাত পৌনে ১২টার দিকে ৩ নম্বর ঘাটের পন্টুন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখন শুধু ৪ নম্বর ঘাট চালু রয়েছে। যাত্রীবাহী বাস ও কিছু জরুরি গাড়ি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পার করা হচ্ছে। সাধারণ পণ্যবাহী গাড়ি আপাতত পার করা যাচ্ছে না। আশা করছি, দ্রুতই ঘাটটি সচল করা যাবে। ঘাট কম থাকায় ফেরি কম চালাতে হচ্ছে। বর্তমান এই নৌপথে ছোট বড় মিলিয়ে ১০টি ফেরি চলাচল করছে।’
এদিকে, সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় গত কয়েকদিন ধরে সড়ক অবরোধ করা হচ্ছে। এতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা থেকে অনেক গাড়ি দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে পারাপার হচ্ছে। এ কারণেও দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় গাড়ির চাপ পড়ছে। মঙ্গলবার সকালে দৌলতদিয়া প্রান্তে প্রায় দুই কিলোমিটার লম্বা গাড়ির লাইন তৈরি হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির লাইন আরও দীর্ঘ হয়েছে।