Image default
বাংলাদেশ

দুই শিশুকে হত্যার কথা স্বীকার, ভারতে পালাতে চেয়েছিল সফিউল্লাহ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে বিষ মেশানো মিষ্টি খাইয়ে দুই শিশুকে হত্যার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে রিমা আক্তারের কথিত প্রেমিক সফিউল্লাহ ওরফে সোফাই মিয়া। একই সঙ্গে দোষ স্বীকার করে ১৬১ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে সফিউল্লাহ পুলিশকে জানিয়েছে, ভারতে পালাতে চেয়েছিল।

সোমবার (২৮ মার্চ) রাত ৯টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান।

আরও পড়ুন: দুই সন্তানকে হত্যা, রিমার কথিত প্রেমিক গ্রেফতার

পুলিশ সুপার বলেন, ‘সফিউল্লাহ এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী বলে স্বীকার করেছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর সফিউল্লাহকে গ্রেফতারের জন্য ১১ দিন বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায় আশুগঞ্জ থানা পুলিশের একাধিক টিম। ঘনঘন স্থান পরিবর্তন করছিল। এজন্য গ্রেফতারে সময় লেগেছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার বিকাল ৫টার দিকে রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর থেকে তাকে গ্রেফতার করে আশুগঞ্জ থানা পুলিশ।’

তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহপুর থেকে রংপুরে যাওয়ার জন্য বাসে ওঠার সময় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রংপুর থেকে সৈয়দপুরে যাওয়ার পর সেখান থেকে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু শুরু থেকে তার ওপর পুলিশ নজর রাখায় ভারতে পালাতে পারেনি।’ 

পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘দুই শিশু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আর কেউ জড়িত আছে কিনা সে বিষয়টি খতিয়ে দেখছি আমরা। এতদিন সফিউল্লাহকে যারা আশ্রয় দিয়েছিল  তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।’

আরও পড়ুন: চাকরি দিয়ে রিমার সঙ্গে প্রেম, পরে দুই সন্তানকে হত্যা 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা মোহাম্মদ শাহিন বলেন, ‘দুই সন্তান হত্যার ঘটনায় বাবা ইসমাইল হোসেন সুজন বাদী হয়ে স্ত্রী রিমা আক্তার ও সফিউল্লাহকে আসামি করে আশুগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেছেন। ওই মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।’

প্রসঙ্গত, গত ১০ মার্চ কথিত প্রেমিককে বিয়ে করতে বিষ মিশ্রিত মিষ্টি খাইয়ে দুই শিশুসন্তান ইয়াছিন খান (৭) এবং মোরসালিন খানকে (৫) হত্যা করে মা রিমা আক্তার। ওই মিষ্টি এনে দিয়েছিল রিমার প্রেমিক সফিউল্লাহ ওরফে সোফাই মিয়া। সফিউল্লাহ আশুগঞ্জ উপজেলার মৈশার গ্রামের বাসিন্দা।

আরও পড়ুন: ‘দুই সন্তান হত্যার বিচার না পেলে আত্মহত্যা করবো’ 

এ ঘটনায় ১৭ মার্চ দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতের বিচারক বেগম আফরিন আহমেদের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে সন্তানদের হত্যার কথা স্বীকার করে রিমা। ওই দিন বিকালে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ জানায়, ১২ বছর আগে ইসমাইল হোসেন সুজন এবং রিমার বিয়ে হয়। তাদের ঘরে ছিল দুই সন্তান। অভাব-অনটনের কারণে রিমা আশুগঞ্জ উপজেলার এসআলম অটোরাইস মিলে কাজ নেয়। অপরদিকে সিলেটের গোলাপগঞ্জ থানার একটি ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ নেন সুজন। অভাব-অনটন ও সুজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে দাম্পত্য কলহ চলছিল। এরই মধ্যে রিমা এসআলম অটোরাইস মিলের শ্রমিক সর্দার সফিউল্লাহর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। গত সাত মাস ধরে প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। এরই মধ্যে রিমাকে বিয়ের আশ্বাস দেয় সফিউল্লাহ। তবে শর্ত জুড়ে দেয়, দুই সন্তানকে ছাড়া বিয়ে করবে। এ অবস্থায় গত ১০ মার্চ বিকাল ৫টার দিকে সফিউল্লাহ বিষ মিশ্রিত পাঁচটি মিষ্টি রিমার কাছে পৌঁছে দেয়। 

আরও পড়ুন: নাপা সিরাপে নয়, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে ২ শিশুকে হত্যা: পুলিশ 

পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ওই দিন বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে দুই শিশুর জ্বর এসেছে বলে দুর্গাপুর বাজারের ‘মা ফার্মেসিতে’ শাশুড়িকে ওষুধ আনতে পাঠায়। শাশুড়ি ‘মা ফার্মেসিতে’ যাওয়ার সুযোগে রিমা দুই ছেলেকে সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিষ মিশ্রিত মিষ্টি খাওয়ায়। এর মধ্যে তিনটি মিষ্টি বড় ছেলে ইয়াছিনকে খাওয়ায় এবং ছোট ছেলে মোরসালিনকে দুটি মিষ্টি খাওয়ায়। শাশুড়ি বাড়ি আসার পর শিশুদের আধা চামচ করে নাপা সিরাপ খাওয়ায় মা। এরপর শিশুরা বমি করতে থাকে। তাদের আশুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালে সন্তানদের চিকিৎসা না করিয়ে বাড়ি নিয়ে যায় রিমা। পথিমধ্যে ইয়াছিন এবং বাড়ি নেওয়ার পর মোরসালিন মারা যায়।

Source link

Related posts

রঙিন ফুলকপিতে বেশি লাভ, পাহাড়ে চাষের দারুণ সম্ভাবনা

News Desk

লকডাউনে পোশাক কারখানা খোলা রাখতে চায় বিজিএমইএ

News Desk

প্রথম দিন জমেনি রাজারহাট, চামড়া ব্যবসায়ীরা হতাশ

News Desk

Leave a Comment