Image default
বাংলাদেশ

খুলনার উপকূলে বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত লোকালয়

অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে খুলনার কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছা উপকূলে বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। প্লাবিত হয়েছে বহুগ্রাম। লবনপানি প্রবেশ করায় লোকালয়, ফসলি জমি ও মৎস্য ঘের হুমকির মধ্যে পড়েছে।

বুধবার (২৬ মে) ভোর থেকে কয়রা উপকূলে থেমে থেমে হালকা বৃষ্টি শুরু হয়। সকাল ৮টার পরপরই সূর্যের দেখা মেলে। এরপর কখনো গুড়ি গুড়ি আবার কখনো ঝড়ো বৃষ্টি। ফের রোদ। এভাবেই রোদ-বৃষ্টির খেলা চলে। এরপরই ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টি শুরু হয়। বেলা ১১ টার পর থেকে জোয়ারের পানি বাড়তে শুরু করে। উত্তাল ঢেউ এসে আঘাত করে দূর্বল বেড়িবাঁধে। প্রথম পর্যায়ে বাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করতে শুরু করে। পরবর্তীতে নদী উত্তাল হয়ে উঠলে বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। সেখান থেকে লোকালয়ে নদীর নোনা পানি প্রবেশ করে। প্লাবিত হয় বহু গ্রাম।

মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া গ্রামের আসমা বেগম বলেন, ঝড় আসলে বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি বাড়িতে প্রবেশের আতেঙ্কে থাকতে হয়। আম্পানেও ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছিলো। আজও বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানিতে ঘর প্লাবিত হয়েছে। লঞ্চঘাট এলাকার আনোয়ারা বেগম বলেন, ঝড়ে বেশ কয়েক দফা ঘর ভেঙেছে। আম্পানেও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। এবারও আতঙ্ক বিরাজ করছে।

খুলনার উপকূলে বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত লোকালয়খুলনার কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে ও উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। তবে কতগুলো গ্রাম প্লাবিত হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান এখনই দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। উত্তরবেদকাশির আংটিহারা, জোড়শিং, উত্তর বেদকাশির কাতিরভেড়ি, কয়রা সদরের ৪ ও ৫ নং কয়রা, মহারাজপুরের তেঁতুলতলার তিন কিলোমিটার, মকবাড়ি ও দশহালিয়া গ্রামে জোয়ারের পানি উপচে ও বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে।

এদিকে উপজেলার মদিনাবাদ লঞ্চঘাট এলাকায় সিপিপির স্বেচ্ছাসেবকরা কয়রা হামকুড়ো এলাকায় জোয়ারের পানিতে বেড়িবাঁধে ফাটল ধরায় মাইকিং করেছে। তারা বলছে, সকলের সহযোগিতার প্রয়োজন। একে অপরের পাশে দাড়িয়ে বেড়িবাঁধ মেরামত করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। কয়রা উপজেলা মহারাজপুর ইউনিয়ন মঠবাড়ি গ্রাম বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে যাচ্ছে এলাকাবাসী।

মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিএম আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, দশহালিয়া গ্রামে সকাল থেকে স্বেচ্ছাসেবীরা দূর্বল ও ঝুকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ মেরামতে কাজ শুরু করে। বেলা ১১ টার পর থেকে জোয়ারের পানি বেড়িবাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করে লোকালয়ে। একপর্যায়ে অসংখ্য জায়গাতে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। প্লাবিত হয় লোকালয়।

খুলনার উপকূলে বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত লোকালয়একই অবস্থা পাইকগাছা ও দাকোপ উপজেলার।

পাইকগাছা ইউএনও এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী বলেন, বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সোলাদানা, গড়ইখালী, রাড়ুলী, কোপিলমুনি, লতা, দেলুটি এই ছয়টি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে বাঁধ উপচে প্লাবিত হয়েছে লোকালয়। অনেক স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। অনেকেই আশ্রয় কেন্দ্রে রাত থেকে রয়েছে। তাদের খাবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বেড়িবাঁধ মেরামতে আমাদের কর্মী এবং এলাকাবাসী কাজ করছেন। এখনও প্লাবিত হওয়া গ্রামের সংখ্যা জানতে পারিনি। জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।

দাকোপ উপজেলার কামনীবাসিয়া, পানখালী এবং মেরিন কোম্পানির আশপাশ সহ বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ উপচে ও ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। খুলনার আঞ্চলিক আবহাওয়া কার্যালয়ের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। ঝড় ও পূর্ণিমার কারণে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

পাউবো সাতক্ষীরা বিভাগ-২-এর পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশিদুর রহমান বলেন, কয়রা উপজেলার ২৬টি স্থানের বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। জোয়ারের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি এবং বাতাসের তীব্রতা বাড়ার কারণে কিছু এলাকায় পানি প্রবেশ করতে পারে।

Related posts

নবজাতকের মৃত্যুশোক সইতে না পেরে অক্সিজেন মাস্ক খুলে মরলেন মা

News Desk

‘এবারের বর্ষায় ফেরি ও লঞ্চঘাট টিকবেতো’

News Desk

তিনদিন পরপর এমপি-মন্ত্রীদের করোনা টেস্ট

News Desk

Leave a Comment