খাগড়াছড়িতে অবরোধকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে মেজরসহ ১১ সেনাসদস্য আহত
বাংলাদেশ

খাগড়াছড়িতে অবরোধকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে মেজরসহ ১১ সেনাসদস্য আহত

খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে ‘জুম্ম-ছাত্র জনতার’ ব্যানারে অবরোধ চলাকালে গুইমারা উপজেলার রামেসু বাজারে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে সিন্দুকছড়ি সেনা জোনের উপ-অধিনায়ক মেজর মো. মাজহার হোসেন রাব্বানীসহ ১১ সেনাসদস্য আহত হয়েছেন। এ সময় স্থানীয় সাংবাদিক সাইফুর রহমানসহ আরও নয় জন আহত হন। সংঘর্ষের ঘটনায় তিন জনকে আটক করা হয়েছে।

রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টার দিকে গুইমারার রামেসু বাজারে এ ঘটনা ঘটে। অবরোধকারীরা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সড়ক অবরোধ করলে তাতে বাধা দিলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। 

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুপুরে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন অবরোধের সমর্থনকারীরা। খবর পেয়ে সিন্দুকছড়ি সেনা জোনের উপ-অধিনায়ক মেজর মো. মাজহার হোসেন রাব্বানীসহ সেনাসদস্যরা সেখানে গিয়ে তাদের সড়ক থেকে সরে যেতে বলেন। এ নিয়ে অবরোধকারীদের সঙ্গে সেনাসদস্যদের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সেনাসদস্যদের ওপর হামলা ঘটনা ঘটে। তখন অবরোধকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে ১১ সেনাসদস্য ও সাংবাদিকসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। 

এ অবস্থায় সেনাসদস্যরা সেখান থেকে চলে এলে দুপুর ১টার দিকে রামেসু বাজারে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে বাজারের বেশ কয়েকটি দোকান পুড়ে যায়। এ সময় বাজারের পাশে থাকা কয়েকটি বসতঘরও আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একই সময়ে কয়েকটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করেছেন অবরোধকারীরা। এরই মধ্যে আগুন দেওয়ার ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দোকানপাট জ্বলতে দেখা যায়। বাজারের দোকানমালিকদের অধিকাংশ পাহাড়ি বলে জানা গেছে। তবে সেনাসদস্যদের আহতের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও বক্তব্য দেয়নি পুলিশ কিংবা সেনাবাহিনী। 

তবে গুইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এনামুল হক চৌধুরী বলেছেন, ‘সড়ক অবরোধ করা নিয়ে পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গেও ঝামেলা হয়েছে। এখনও পরিস্থিতি উত্তপ্ত। পরে বিস্তারিত জানানো হবে। আমরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে অবরোধকারীদের ঝামেলা হয়েছে বলে শুনেছি। তবে কতজন আহত হয়েছেন, তা এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি। বিস্তারিত জানার জন্য আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। পরে জানাবো।’

অবরোধের কারণে আটকে পড়া পর্যটকদের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, ‘সাজেক ও অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্র থেকে সব পর্যটককে নিরাপদে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বর্তমানে তারা সবাই খাগড়াছড়ি সদরে অবস্থান করছেন। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিয়ে সবাইকে নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে।’

স্থানীয় বাসিন্দা মংসাজাই মারমা ও কংজরী মারমা জানান, অবরোধের সমর্থনে তারা খাদ্যগুদামের সামনের সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করছিলেন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এলে তাদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের ওপর গুলি করেন। গুলির পরপরই লোকজন ভয়ে দিগবিদিক পালিয়ে যান। এরপর ২০-২৫ জন লোক এসে রামেসু বাজার ও বসতবাড়ি লুটপাট করে এবং যাওয়ার সময় আগুন ধরিয়ে দেন। এসব লোকের সঙ্গে মুখোশ পরা লোকও ছিল। দোকানপাট ও বসতবাড়ির সঙ্গে অনেকগুলো মোটরসাইকেলেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

এদিকে, দুপুর ১২টায় জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে বিভিন্ন শ্রেণির লোকজনকে নিয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখার উদ্দিন খন্দকারের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। সভায় তিনি বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামকে অশান্ত করে একটা পক্ষ ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছে। সব জাতিগোষ্ঠীকে মিলেমিশে থাকার আহ্বান জানাই। সাম্প্রতিক ঘটনার নেপথ্যে যারা আছে তাদের খুঁজে বের করার পাশাপাশি যারা ১৪৪ ধারা লঙ্ঘন করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিন সকাল থেকে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে খাগড়াছড়ি শহরেও। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত শহরের মোড়ে মোড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর অবস্থান দেখা গেছে। বাজার এবং বাজারের আশপাশে কোনও দোকানপাট খোলেনি। প্রয়োজনীয় কাজে যারা বের হচ্ছেন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে নিরাপত্তা বাহিনী।

গত মঙ্গলবার রাত ৯টায় প্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে পাহাড়ি এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ওই দিন রাত ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় একটি ক্ষেত থেকে তাকে উদ্ধার করেন স্বজনরা। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে একজনকে আটক করেছে পুলিশ। তাকে ছয় দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন আদালত।

ধর্ষণের প্রতিবাদে ‘জুম্ম-ছাত্র জনতার’ ব্যানারে গত শনিবার ভোরে অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়। কর্মসূচির কারণে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি, খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি-সাজেক সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। শনিবার সকালে জেলার বিভিন্ন স্থানে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছের গুঁড়ি ফেলে বিক্ষোভ করেন অবরোধকারীরা। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা প্রশাসন। শনিবার বেলা ২টায় জেলার সদর উপজেলা ও পৌরসভা এলাকায় এ আদেশ দেওয়া হয়। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়।

খাগড়াছড়ি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকারের সই করা এক আদেশে এ তথ্য জানানো হয়। এই আদেশে বলা হয়, যেহেতু খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার খাগড়াছড়ি পৌরসভা ও সদর উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি এবং জনগণের জান ও মালের ক্ষতিসাধনের আশঙ্কা রয়েছে, তাই বেলা দুইটা থেকে আগামী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ১৪৪ ধারা আদেশ জারি থাকবে।

Source link

Related posts

বসবাসযোগ্য শহরের তালিকায় তলানিতে ‘ঢাকা’

News Desk

‘শিরক’ আখ্যা দিয়ে বটগাছ কর্তন: মালিক বললেন, ‘বিক্রি করে দিয়েছি’

News Desk

এনআইডির দায়িত্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ই

News Desk

Leave a Comment