Image default
বাংলাদেশ

কুমিল্লায় প্রথম ভাষা চত্বর, পারিশ্রমিক নেননি নির্মাতা

কুমিল্লায় ভাষা শহীদদের স্মৃতি রক্ষায় প্রথমবারের মতো নির্মাণ করা হয়েছে ভাষা চত্বর। শহীদদের স্মরণে নানা রঙে সাজানো হয়েছে চত্বরটি। এখন অপেক্ষা উদ্বোধনের। পাঁচ জন শহীদ ও কুমিল্লার ৩৪ ভাষা শহীদের নাম রয়েছে চত্বরে। বিনা পারিশ্রমিকে এই কাজটি করেছেন স্থানীয় শিল্পী মোহাম্মদ শাহীন।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে নগর শিশু উদ্যানের প্রবেশপথে নির্মাণ করা হয়েছে এই চত্বর। সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষা চত্বরের উদ্বোধন করবেন কুমিল্লা সদর আসনের এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আ.ক.ম বাহাউদ্দীন বাহার।

জানা গেছে, চত্বরের ছয় ফুট জায়গায় রয়েছে ভাষা আন্দোলনের বর্ণমালা সংবলিত প্ল্যাকার্ড, ভাষা আন্দোলনের ব্যানার, ১৮ ফুট জায়গায় রয়েছে শহীদ মিনার, রক্তিম সূর্য, চার পাশে রয়েছে ভাষা শহীদদের ছবি ও কুমিল্লার ভাষাসৈনিকদের নাম। ভাষাসৈনিকদের নামের পাশে রয়েছে পানির পোয়ারা ও নান্দনিক আলোকসজ্জা।

ভাষা চত্বরের নির্মাতা শিল্পী মোহাম্মদ শাহীন বলেন, এই কাজে আমাকে সহায়তা করেছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এবং অঙ্কনশালার শিল্পী ও শিক্ষার্থীরা। কুমিল্লাতে ভাষা চত্বর এই প্রথম নির্মিত হয়েছে। শহীদ মিনার আছে। কিন্তু এতদিন ভাষা চত্বর ছিল না। কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামকে ছাড়া বাংলা ভাষার ইতিহাস অসম্পূর্ণ। এখানে অনেক ভাষাসৈনিকের বাড়ি। তাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে চত্বর নির্মাণের খরচ বহন করেছেন কুমিল্লার মেয়র। বিনা পারিশ্রমিকে কাজটি করেছি আমি। 

তিনি বলেন, এতে নতুন প্রজন্ম ভাষার ইতিহাস সম্পর্কে গভীরভাবে জানতে পারবে। আমার বিশ্বাস এটি কুমিল্লার সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে যেমন অবদান রাখবে তেমনি ইতিহাস ঐতিহ্যে স্থান করে নেবে।

ভাষা আন্দোলন ভিত্তিক সংগঠন তিন নদী পরিষদের সভাপতি আবুল হাসানাত বাবুল বলেন, এটি ভালো উদ্যোগ। কুমিল্লায় এটি ছাড়া আর কোনও ভাষা চত্বর নেই। সব বয়সী মানুষ যখন এটি দেখবে তখন বাংলা ভাষার কথা মনে পড়বে। শহীদদের ত্যাগের কথা মনে হবে। এটি নবীনদের জন্য বার্তাবহ।

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) কুমিল্লার সাবেক সভাপতি বদরুল হুদা জেনু বলেন, ভাষা চত্বর কুমিল্লায় এটি প্রথম। কুমিল্লা শিক্ষা ও সাহিত্যের শহর। এসব কাজ তারই প্রমাণ। তবে এর চারপাশে বেশি পরিমাণ জায়গা রাখা দরকার ছিল। এতে সৌন্দর্য আরও বেশি ফুটে উঠতো। 

লেখক ও গবেষক মোতাহার হোসেন মাহবুব বলেন, ভাষা আন্দোলন নিয়ে খুব একটা কাজ হয়নি। এ বিষয়ে ব্যাখ্যামূলক তেমন বইও নেই। ভাষা আন্দোলনে কতজন শহীদ হয়েছেন, সেই সংখ্যাও আমাদের জানা নেই। সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার ও শফিউর; এই পাঁচ জনের নাম আমরা বেশি শুনি। তবে শহীদের সংখ্যা আরও বেশি হবে।

শহীদদের স্মরণে নানা রঙে সাজানো হয়েছে চত্বরটি

কুমিল্লার মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব। শিল্প-সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতা করতে আমার ভালো লাগে। আগেও কিছু কাজ করেছি। কুমিল্লা হলো জ্ঞানী-গুণী মানুষের শহর। তাদের স্মৃতি ধরে রাখতে যা যা করা দরকার আমরা সব করবো। 

প্রসঙ্গত, ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করেন নগরীর ঝাউতলার বাসিন্দা অ্যাডভোকেট শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। তিনি কুমিল্লা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। নগরীর উজিরদিঘীর পাড়ের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রূপকার। মৃত্যুর তিন বছর পর ২০১৬ সালে তাকে ‌স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়।

Source link

Related posts

বন্যাদুর্গত পরিবারগুলোতে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট

News Desk

সর্ববৃহৎ ঈদগাহ ময়দান গোর-এ শহীদে থাকবে তিন স্তরের নিরাপত্তা 

News Desk

সিলেটে বন্যায় বিপর্যস্ত ১৩ লাখ মানুষ, ছড়াচ্ছে পানিবাহিত রোগ

News Desk

Leave a Comment