গাজীপুর সদরের শিরিরচালা এলাকায় স্ট্যান্ডার্ড ফিনিস অয়েল কোম্পানি লিমিটেড (ইউনিট-২) নামের কয়েল তৈরির কারখানায় লাগা আগুন প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ফায়ার সার্ভিসের সাত ইউনিটের প্রচেষ্টায় বুধবার (১৯ নভেম্বর) বিকাল ৪টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার বাঘের বাজার এলাকার ওই কারখানার গুদামে থাকা রাসায়নিক থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছিল। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার বিষয়টি বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মামুন।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, কারখানায় নানা অব্যবস্থাপনার কারণে গুদামে থাকা রাসায়নিক থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছিল। এমনকি ফায়ার লাইসেন্স নবায়ন করা ছিল না তাদের। ছিল না সেফটি প্ল্যানও।
কারখানার শ্রমিক, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্র জানায়, দুপুরে কারখানায় আগুন লাগে। সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তাকর্মীরা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ধোঁয়া বের হতে থাকলে কারখানার সীমানাপ্রাচীর ঘেঁষা উপবন ফিলিং স্টেশন এবং এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কে স্থানীয় লোকজন ঘরের আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন ধরনের মালামাল বাইরে বের করে আনেন। খবর পেয়ে প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের দুটি এবং পরে আরও পাঁচটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মামুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কারখানায় লাগা আগুন শুরুতেই বিশাল আকার ধারণ করে। এখানে রাসায়নিকের গুদাম ছিল, রাসায়নিকে উৎপাদিত পণ্য ছিল। কেরোসিনসহ অনেক ধরনের রাসায়নিক ছিল। এজন্য দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। গাজীপুরে যতগুলো স্পেশাল পানিবাহী গাড়ি আছে, সব কয়টি এখানে ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে তিনটি চ্যালেঞ্জ ছিল আমাদের সামনে। পাশে উপবন ফিলিং স্টেশন, দক্ষিণ এবং পশ্চিম পাশে আবাসিক এলাকা ও অন্যান্য পোশাক কারখানা ছিল। চারদিকে আগুন ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা ছিল। ভেতরে ব্যাপক রাসায়নিক, কাঁচামাল ও উৎপাদিত পণ্য ছিল। সবগুলোকে নিরাপদে রেখে কাজ করেছি আমরা। দুপুরের খাবারের সময় আগুন লাগায় কারখানার শ্রমিকরা বাইরে ছিলেন। এতে কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। জয়দেবপুর ফায়ার সার্ভিসের দুটি, রাজেন্দ্রপুর স্টেশনের তিনটি ও ভোগড়া মডার্ন ফায়ার স্টেশনের দুটি সহ সাতটি ইউনিটের কর্মীরা সাড়ে তিন ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে নিয়ন্ত্রণে আনে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্তের পর জানা যাবে।’
ওই কারখানা পরিদর্শন শেষে ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক কাজী নাজমুজ্জামান বলেন, ‘কারখানায় কয়েল তৈরি করা হয়। যেখানে কেরোসিনজাতীয় দ্রব্য ও ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার হতো। সেখান থেকেই আগুন লাগে। সঙ্গে সঙ্গে কেরোসিনের মাধ্যমে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এজন্য নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লেগেছে। এ ছাড়া কারখানায় যে ধরনের অগ্নি-নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকা দরকার, সেফটি প্ল্যান থাকা দরকার, তা ছিল না। কারখানায় ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স থাকলেও অব্যবস্থাপনার কারণে নবায়ন করা হয়নি।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কারখানার সহকারী মহাব্যবস্থাপক সুজিত বিশ্বাস বলেন, ‘আগুন লাগার পরপরই কারখানার লোকজন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু অনেক তীব্রতা থাকায় সবাই পরে বের হয় যান। এ ছাড়া সব শ্রমিক-কর্মকর্তাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। কারখানার তিনটি এরিয়াতে আগুন লেগেছে। সেখানে থাকা সব মালামাল পুড়ে গেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও নিরূপণ করা যায়নি।’

