অবহেলায় ভেঙে না পড়ে বিশ্বজয় রিকতার
বাংলাদেশ

অবহেলায় ভেঙে না পড়ে বিশ্বজয় রিকতার

‘আমার প্রতিবন্ধী সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে অবহেলার শিকার হই। সেই অবহেলা থেকে নিজেই একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করি। এখন সেটিতে ২৯৪ প্রতিবন্ধী শিশু শিক্ষাগ্রহণ করছে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের সেবা ও শিক্ষার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠা করা এই প্রতিষ্ঠান আজ বিশ্বের কাছে পরিচিতি লাভ করেছে। এজন্য আমি অত্যন্ত খুশি। এই অর্জন আমার একার নয়, বাংলাদেশের সবার। বিশ্বের সব চাহিদাসম্পন্ন শিশুর অর্জন এটি।’

মঙ্গলবার (০৩ ডিসেম্বর) বিকালে বাংলা ট্রিবিউনকে কথাগুলো বলেছেন ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রকাশিত ২০২৪ সালের বিশ্বের সবচেয়ে অনুপ্রেরণা জাগানো ও প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকায় স্থান পাওয়া কুড়িগ্রামের রিকতা আখতার বানু। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠা করে প্রশংসিত হওয়া রিকতা আখতার চিলমারী উপজেলার রমনা ইউনিয়নের রমনা সরকার বাড়ি গ্রামের বাসিন্দা।

চিলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে কর্মরত এই নারী। প্রতিবন্ধী সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে অবহেলার শিকার হয়ে চিলমারীতে প্রতিষ্ঠা করেন রিকতা আখতার বানু (লুৎফা) বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়। এটি প্রতিষ্ঠা করে প্রশংসিত হয়েছেন ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার প্রত্যন্ত এলাকার এই বাসিন্দা। 

বিবিসির তালিকায় নিজের নাম প্রকাশ পাওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে রিকতা আখতার বানু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘খবরটি শুনে আনন্দে আমার হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে। চোখে আনন্দ অশ্রু চলে আসছে। এই অর্জনের কৃতিত্ব আমাদের সবার। বিবিসিকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমার মাতৃভূমিকেও ধন্যবাদ।’

‘আমার প্রতিবন্ধী সন্তানকে স্থানীয় একটি স্কুলে ভর্তি করিয়ে অবহেলার শিকার হয়েছি। আমার মেয়ে সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত ছিল। স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে গেলে ফিরিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। সেই অবজ্ঞা থেকে নিজের জমি বিক্রি করে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠা করি। মূলত প্রতিবন্ধী শিশুদের সহায়তার এটি প্রতিষ্ঠা করেছি। আমার প্রতিষ্ঠানটি এখন সবার। সব প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য এই প্রতিষ্ঠান সবসময় খোলা। আমি চাই এখানে আবাসিক সুবিধার ব্যবস্থা চালু হোক। একটি সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করে এখানের শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক। এজন্য সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।’ প্রতিষ্ঠানের জন্য ভবিষ্যতের চাওয়ার বিষয়ে বলেন রিকতা।

তিনি জানান, ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত তার স্কুলটি ৭৩ জন প্রতিবন্ধী শিশু নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল। বর্তমানে ২৯৪ প্রতিবন্ধী শিশু আছে। ২০২০ সালে এটি এমপিওভুক্ত হয়। এখানে বর্তমানে ১৫ জন শিক্ষক আছেন। শুরুতে অটিস্টিক বা শেখার অক্ষমতা আছে, এমন শিশুদের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হলেও এখন বিভিন্ন বুদ্ধিবৃত্তিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতা আছে, এমন শিশুদের পড়ানো হয়। তার এই উদ্যোগ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিষয়ে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।

আমার সেই প্রতিবন্ধী মেয়েটির বয়স এখন ২২ বছর উল্লেখ করে রিকতা আখতার আরও বলেন, ‘দেড় বছর আগে তাকে বিয়ে দিয়েছি। মাস খানেক আগে তার একটি সুস্থ ও স্বাভাবিক মেয়েসন্তান হয়েছে। আমি তাদের দেখভাল করছি। সবাই তাদের জন্য দোয়া করবেন।’

চিলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রোগীদের সেবিকা থেকে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের কল্যাণকামী হয়ে ওঠা রিকতা আখতার প্রত্যাশা করেন, সমাজের আর ১০টি স্বাভাবিক শিশুর মতো দেশের সব বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু পড়ালেখা ও খেলাধুলা করার সুযোগ পাক। অবহেলা কিংবা সহানুভূতির শিকার না হয়ে সহযোগিতা পাক তারা।

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের অভিভাবকদের উদ্দেশে আহ্বান জানিয়ে বিশ্বজুড়ে অনুপ্রেরণা জাগানো রিকতা আখতার বলেন, ‘প্রতিবন্ধী শিশুদের অভিভাবকদের কাছে আমার অনুরোধ, প্রতিবন্ধী সন্তানদের গোপন না রেখে তাদের স্কুলে দেন। সব প্রতিবন্ধী হয়তো চাকরি করবে না, কিন্তু অন্তত নিজের কাজটা নিজে করতে পারবে। তাদের সেভাবে গড়ে ওঠার সুযোগ দিতে হবে। অবহেলা করা যাবে না, নির্যাতন করা যাবে না।’

‘আমি স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত করেছি। কিন্তু এটি আপনাদের সবার। আমি চাই এখানে আবাসিক সুবিধা চালু হোক। তাহলে শুধু কুড়িগ্রাম নয়, আশপাশের জেলা থেকে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের এখানে রেখে নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন। এজন্য সরকারসহ সমাজের সবার সহযোগিতা চাই’ বলেন বিশ্বনন্দিত এই মা।

Source link

Related posts

আনোয়ারায় মন্দির চুরি, মালামাল নিয়ে দুজন গ্রেপ্তার

News Desk

নববর্ষ উপলক্ষে সন্ধ্যায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী

News Desk

ময়মনসিংহ মেডিকেলে করোনায় ১৭ জনের মৃত্যু

News Desk

Leave a Comment