৮ মাস ধরে বেতন বন্ধ, ঝিমিয়ে পড়েছে কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসাসেবা
বাংলাদেশ

৮ মাস ধরে বেতন বন্ধ, ঝিমিয়ে পড়েছে কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসাসেবা

কিশোরগঞ্জের কমিউনিটি ক্লিনিকের সার্বিক চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। গত আট মাস ধরে কর্মীদের বেতন-ভাতা বন্ধ থাকায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এতে চিকিৎসাবঞ্চিত হচ্ছেন লোকজন।

কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গ্রামপর্যায়ে মা ও শিশুসহ সব বয়সী লোকজনের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার কাজ করে আসছে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এখান থেকে ২৭ ধরনের ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হয় রোগীদের। অসুখ-বিসুখে ক্লিনিকগুলোর ওপর ভরসা করে গ্রামের দরিদ্র লোকজন। কিশোরগঞ্জ জেলায় এ ধরনের কমিউনিটি ক্লিনিক আছে ৩২৩টি। ক্লিনিকের মূল দায়িত্ব পালন করেন একজন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার বা সিএইচসিপি। তবে গত আট মাস ধরে বেতন-ভাতা বন্ধ থাকায় প্রভাব পড়েছে তাদের কাজে। ফলে ক্লিনিকগুলো অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। ঠিকমতো স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন না রোগীরা।

করিমগঞ্জ উপজেলার কাদিরজঙ্গল ইউনিয়নের সাঁতারপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের সামনে কথা হয় সাঁতারপুর গ্রামের রুমা আক্তার ও সুরাইয়ার সঙ্গে। তারা জানান, ছোটখাটো অসুখ-বিসুখ, মাতৃত্ব সেবা ও শিশুদের নিয়ে তারা ক্লিনিকে যান। আগে ভালো সেবা পেতেন। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে ক্লিনিক সময়মতো খোলা হয় না। আবার মাঝেমাঝে বন্ধও থাকে। এ কারণে ওষুধও পাচ্ছেন না। এখন অসুস্থ হলে জেলা শহরে যেতে হয়।

একই ইউনিয়নের জঙ্গলবাড়ি কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার সানজিদা সামান্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা, প্রজনন স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, টিকাদান কর্মসূচি, পুষ্টি, স্বাস্থ্যশিক্ষাসহ বিভিন্ন সেবা নিতে ক্লিনিকগুলোতে ভিড় করেন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর লোকজন। কিন্তু গত আট মাস ধরে আমাদের বেতনভাতা বন্ধ রয়েছে। এ কারণে অনেক কষ্ট করে খেয়ে না খেয়ে ক্লিনিকগুলো পরিচালনা করতে হচ্ছে। অনেকে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কেউ আবার সংসার খরচ চালাতে অন্য কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে চিকিৎসাবঞ্চিত হচ্ছেন গ্রামের লোকজন।’

করিমগঞ্জ উপজেলায় মোট কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে ৩৫টি। এর মধ্যে সাঁতারপুর, জঙ্গলবাড়ি, হাত্রাপাড়া, সতেরদরিয়া, পিটুয়া ও টামনি পিটুয়া কমিউনিটি ক্লিনিকে সরেজমিনে গিয়ে কর্মী এবং স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সময়মতো ক্লিনিকগুলো খোলা হয় না। আবার কখনও বন্ধ থাকায় কিংবা খোলা হলেও দায়িত্বপ্রাপ্তদের অনুপস্থিতির কারণে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। শুধু করিমগঞ্জ নয়, তাড়াইল উপজেলার আরও চারটি কমিউনিটি ক্লিনিক ঘুরে একই চিত্রই দেখা গেছে।

পিটুয়া কমিউনিটি ক্লিনিক

তবে যে কর্মীরা ১২ মাস গ্রামবাসীকে চিকিৎসাসেবা দেন, তাদের দুরবস্থার কথা শুনে ব্যথিত চিকিৎসা নিতে আসা গ্রামের লোকজনও। পিটুয়া গ্রামের জিল্লুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কর্মীদের কষ্ট দেখে আমাদেরও খারাপ লাগে। আমরা কর্মীদের উজ্জীবিত করে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। সরকার যেন এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। না হয় এভাবে ক্লিনিকগুলো বন্ধ হয়ে যাবে।’

হাত্রাপাড়া ও টামনি পিটুয়া কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি জাহেদুল ইসলাম তুহিন ও হাবিবা আক্তার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের যে বেতন-ভাতা দেওয়া হতো, তা দিয়ে আমাদের সংসার চলতো না। আমাদের দাবি ছিল, যেন রাজস্ব খাতে নিয়ে যাওয়া হয়। রাজস্ব দূরে থাক, এখন আমাদের বেতন বন্ধ রয়েছে আট মাস ধরে। পেটে ভাত না থাকলে দায়িত্ব পালন করবো কীভাবে? এরপরও আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’  

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় বলছে, গত বছরের জুলাই থেকে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের (সিএইচসিপি) বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে। কেবল কিশোরগঞ্জে নয়, দেশের ১৮ হাজার হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারের বেতন বন্ধ আছে। সমস্যা সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ চলছে।

জঙ্গলবাড়ি কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা

কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. সাইফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে। এ নিয়ে তারা হতাশ। এর প্রভাব তাদের কাজকর্মে পড়েছে।’

তিনি বলেন, ‘চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। তবে ক্লিনিকগুলো যেন খোলা থাকে, প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা থেকে যেন গ্রামের লোকজন বঞ্চিত না হন, বিষয়গুলো নিশ্চিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা। একইসঙ্গে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের সমস্যারগুলো মানবিক দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে। আর তাদের বেতনের বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন মহলে নিয়মিত কথা হচ্ছে। আশা করছি, সমস্যা কেটে যাবে।’

Source link

Related posts

দেশজুড়ে করোনায় আরও ২২৮ জনের মৃত্যু

News Desk

১২টি কোরবানি পশুর হাট বসাতে চায় চট্টগ্রাম নগরে

News Desk

দিনাজপুরে ওঠানামা করছে নদ-নদীর পানি

News Desk

Leave a Comment