Image default
বাংলাদেশ

৩০ হাজার মানুষের ভরসা একটিমাত্র বাঁশের সাঁকো

নীলফামারীর ডোমার উপজেলার সীমান্তঘেঁষা ভোগডাবুড়ি ইউনিয়নে বুড়িতিস্তা নদীর বুদুর ঘাটে স্থায়ী কোনও সেতু নেই। আট গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা একটি বাঁশের সাঁকো। বিকল্প পথ না থাকায় এই সাঁকো দিয়েই যাতায়াত করতে হয় গ্রামবাসীকে। স্থানীয়রা প্রতি বছর নিজস্ব উদ্যোগে নড়বড়ে সাঁকোটি মেরামত করে কোনও রকমে যাতায়াত করেন। বর্ষাকালে শিশুদের স্কুলে যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। দুর্ভোগ পোহাতে হয় কৃষিপণ্য পরিবহনে।  

এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান চান শব্দিগঞ্জ, গোসাইগঞ্জ, আনন্দবাজার, সর্দারপাড়, জালিয়াপাড়া, ভোগডাবুড়ি, চিলাপাড়া, মধ্যপাড়া বাজার—এই আট গ্রামের বাসিন্দারা।

সরেজমিন দেখা যায়, একটি বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে কষ্ট করে চলতে হয় ওই এলাকার মানুষদের। ডোমার শহরসহ জেলা শহর নীলফামারীতে যেতেও ওই সাঁকোটিই ব্যবহৃত হয়। বর্ষা মৌসুমে দুর্ভোগে পড়েন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। কৃষকের উৎপাদিত পণ্য ধান, চাল, পাট, ভুট্টা, গম, আদা, মরিচ, পেঁয়াজ ও রসুন ডোমার বাজারে আনতে দুর্ঘটনায় পড়তে হয় অনেক সময়। বর্ষায় কলা গাছের ভেলা আর শুষ্ক মৌসুমে বাঁশের সাঁকোই নদীর উভয় পারের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা।

নদীর কোলঘেঁষে গড়ে উঠেছে শব্দিগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোসাইগঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কারেঙ্গাতলী উচ্চ বিদ্যালয়। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের বুদুর ঘাটের বাঁশের সাঁকো দিয়েই চলাচল করতে হয়।

গোসাইগঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সামিনা আকতার বলে, ‘বাবা-দাদার আমল থেকে বুদুর ঘাটে সেতু নেই। আমরা অনেক কষ্ট করে স্কুলে যাতায়াত করি। বর্ষা মৌসুমে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পড়ালেখার জন্য বিদ্যালয়ে যেতে হয়। তারপরও বর্ষা মৌসুমে প্রায় তিন মাস লেখাপড়া বন্ধ থাকে। এতে সহপাঠীদের সঙ্গে পাঠ্যসূচি মেলাতে হিমশিম খেতে হয়। পিছিয়ে পড়তে হয় পাঠ্যসূচি থেকে। আমাদের দাবি, বুদুর ঘাটে একটি সেতু নির্মিত হোক। ঝুঁকিপূর্ণ এই সাঁকোতে প্রতিনিয়ত ঘটে দুর্ঘটনা। বর্ষাকালে রোগী নিয়ে পড়তে হয় সীমাহীন দুর্ভোগে। উপজেলা শহরে উন্নত চিকিৎসার জন্য যাওয়ার কোনও উপায় থাকে না। প্রায় ৮-১০ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে যেতে হয় ডোমার উপজেলা শহরে।’

সামিনা আরও জানায়, ভোট এলে অনেকেই সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন। কিন্তু ভোট চলে গেলে কারও কোনও খবর থাকে না।

উপজেলার শব্দিগঞ্জ গ্রামের মোনতাজ আলী, জরিনা বেগম বলেন, ‘ছেলেমেয়েরা নড়বড়ে ওই সাঁকোর ওপর দিয়ে স্কুল-কলেজে আসা-যাওয়া করে। শুধু তা-ই নয়, ব্যবসায়ী ও কৃষকদের পণ্য নিয়ে উপজেলা শহরে যাতায়াত করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।’

ভুক্তভোগী স্থানীয় বাসিন্দা জয়দেব রায় ও স্বপ্না রায় জানান, এলাকাবাসী একটি সেতু নির্মাণের দাবি করে আসছেন। দেশ স্বাধীনের পঞ্চাশ বছর অতিবাহিত হলেও কেউ শোনেনি তাদের কথা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এ নিয়ে নেই কোনও পরিকল্পনা।

ভোগডাবুড়ি ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান রেয়াজুল ইসলাম কালুর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমি অতি দ্রুত সেতু নির্মাণ করে মানুষের দুর্ভোগ কমানোর চেষ্টা করবো। বিষয়টি নিয়ে উপজেলার মাসিক মিটিংয়ে আলোচনা করা হবে।’

এলজিইডি উপজেলা প্রকৌশলী মোস্তাক আহমেদ জানান, তিনি নতুন এসেছেন। বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন। সমস্যাটি জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নীলফামারী এক আসনের (ডোমার ডিমলা) সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন সরকার জানান, উপজেলা প্রকৌশলীর দফতর থেকে তালিকা দেওয়া হলে সেতুটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নির্মাণ করা হবে। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে।

 

 

Source link

Related posts

সেপ্টেম্বরের শেষে ফের ভাসানচরে নেয়া শুরু রোহিঙ্গাদের

News Desk

সুনামগঞ্জে নদীর পানি বাড়ছে

News Desk

এনআইডি না থাকলেও বয়স্কদের টিকা

News Desk

Leave a Comment