Image default
বাংলাদেশ

২৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রাণ ফিরবে তো বাঙালি নদীতে?

বগুড়াসহ তিন জেলায় দুই হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঙালি নদীর ২১৭ কিলোমিটার খনন ও তীর সংরক্ষণের কাজ চলছে। প্রকল্প বাস্তবায়নকারীদের আশা, নদী খননের ফলে কৃষকরা সারা বছর সেচ সুবিধা পাবেন। নদীতে পানি থাকবে এবং দেশি
মাছ বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পাবে। আবারও প্রাণ ফিরবে নদীতে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, বগুড়া, গাইবান্ধা ও সিরাজগঞ্জ জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত একসময়ের  খরস্রোতা বাঙালি নদীর ১৮৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ১৪৩ কিলোমিটার গড় প্রস্থ কালের বিবর্তনে ভরাট হয়ে গেছে। এই নদীতে নাব্য ফিরিয়ে আনতে খননের উদ্যোগ নেয় সরকার। খনন প্রকল্পের আওতায় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা থেকে বগুড়া হয়ে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী এলাকায় ২১৭ কিলোমিটার নদী খনন করতে হবে। এতে সরকারের ব্যয় হবে দুই হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ড্রেজিংয়ের কাজে ব্যয় এক হাজার ৮০০ কোটি ও অবশিষ্ট টাকা ব্যয় হবে নদীর তীর সংরক্ষণকাজে। 

এরই মধ্যে বগুড়ার শেরপুর থেকে সোনাতলা পর্যন্ত ৯৯ কিলোমিটার বাঙালি নদী খননের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। বগুড়ার ৯৯ কিলোমিটার নদী খনন ও তীর সংরক্ষণ করতে সরকারের ব্যয় হবে প্রায় ৭৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ১১টি গ্রুপে সিসি ব্লকের কাজ চলছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নদী খননে ওই তিন জেলায় রয়েছে দেড় শতাধিক ড্রেজিং মেশিন। দিনেরাতে নদী খনন ও সিসি ব্লকের কাজ চলছে।

বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার পোড়াপাইকর সলুরঘাট এলাকায় সাউদান ড্রেজিং অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের বেলিফুল-১ ড্রেজিং মেশিন দিয়ে নদী খনন কাজ চলছে। সেখানে মেশিন চালকসহ ২৭ জন শ্রমিক কাজ করছেন। 

ড্রেজিং মেশিন চালক মিজানুর রহমান বলেন, দিনেরাতে ১৪ থেকে ১৮ ঘণ্টায় ৫৫০ কিউসেক মিটার মাটি খনন করা যায়। সিরাজগঞ্জ থেকে গাইবান্ধা পর্যন্ত বাঙালি নদীতে দেড় শতাধিক ড্রেজিং মেশিন দিয়ে নদী খননের কাজ চলছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে নদী খননের কাজ শেষ হবে। এরপর তীর সংরক্ষণের কাজ শুরু হবে।

সোনাতলার পোড়াপাইকর গ্রামের লুৎফর রহমান, রফিকুল ইসলাম মাস্টার, আমিনুর রহমান, মশিউর রহমান, তুহিন মিয়া ও সাজু প্রামাণিক জানান, একসময়ের খরস্রোতা বাঙালি নদীতে ৩০-৩৫ ফুট গভীর পানি ছিল। বর্তমানে নদীর তলদেশ
ভরাট হয়ে গেছে। সেখানে কৃষকরা বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করছেন। নদীতে পানি না থাকায় শুষ্ক মৌসুমে কৃষকরা শীতকালীন ও রবি ফসল চাষাবাদ করতে করতে শ্যালোচালিত মেশিনের সেচের ওপর নির্ভর করতে হয়। 

স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, খননের কাজ শেষ হলে বাঙালি নদীতে আবারও পানি পাওয়া যাবে। তখন কৃষকের চাষাবাদে সেচ, মাছ চাষ ও গ্রামবাসী চাহিদামতো পানি ব্যবহার করতে পারবেন। তাদের বাড়তি অর্থ ব্যয়ে শ্যালো মেশিনের সেচের ওপর নির্ভর করতে হবে না।

সোনাতলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ আহমেদ বলেন, বাঙালি নদী খননের ফলে সারা বছর পানি প্রবাহ থাকবে। শীতকালীন ও রবি মৌসুমে কৃষকরা স্বল্প খরচে সেচ সুবিধা পাবেন। নদী প্রাণ ফিরে পাবে।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, কালের বিবর্তনে নদ-নদী, খাল-বিল থেকে দেশি মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। বাঙালি নদী খননের ফলে প্রচুর দেশি মাছ পাওয়া যাবে। ফলে পুকুরে চাষ করা মাছের ওপর আর নির্ভরশীল হতে হবে না এই অঞ্চলের মানুষকে।

বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, সিরাজগঞ্জ থেকে বগুড়া হয়ে গাইবান্ধা পর্যন্ত ২১৭ কিলোমিটার নদী খনন ও তীর সংরক্ষণ কাজে সরকারের ব্যয় হবে দুই হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের জুন মাসে কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৩ সালের জুনে। আরও আগে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে তা সম্ভব হয়নি। ইতোমধ্যে ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এলাকাভেদে পাঁচ ফুট থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত নদী খনন করা হচ্ছে। 

তিনি আরও বলেন, বগুড়া অংশে রয়েছে ৯৯ কিলোমিটার। এখানে নদী খনন ও শাসনে ব্যয় হবে ৭৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু সিসি ব্লকের জন্য ব্যয় হবে ৩১৮ কোটি টাকা। বাকি টাকা অন্যান্য কাজে ব্যয় হবে। এতে নদীতে আগের মতো পানিপ্রবাহ বাড়বে।

 

Source link

Related posts

মোংলা বন্দরে নিলামে উঠেছে নামীদামি ৭০ গাড়ি, পড়ে আছে আরও ২৩০টি

News Desk

কনকনে শীতে কাঁপছে পঞ্চগড়, তাপমাত্রা নামলো ১১ ডিগ্রির ঘরে

News Desk

‘লকডাউন’ থেকে বেরিয়ে আসতে জাতীয় পরামর্শক কমিটির ১০ সুপারিশ

News Desk

Leave a Comment