১৪ বছরে মনি-মুক্তা, চালাতে পারে সাইকেলও
বাংলাদেশ

১৪ বছরে মনি-মুক্তা, চালাতে পারে সাইকেলও

বাংলাদেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানে আলোচিত ও নতুন ইতিহাসের সাক্ষী মনি ও মুক্তার ১৪তম জন্মদিন আজ (২২ আগস্ট)। ২০০৯ সালের এই দিনে দিনাজপুরে জোড়া লাগা অবস্থায় জন্ম হয়েছিল তাদের। ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা শিশু হাসপাতালে অপারেশনের মাধ্যমে ভিন্ন সত্ত্বা লাভ করে। যা বাংলাদেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানে সৃষ্টি হয় এক নতুন ইতিহাস। দেশে প্রথম অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জোড়া লাগানো শিশুর সফল পৃথকীকরণ হলো মনি ও মুক্তা। 

২০০৯ সালের ২২ আগস্ট দিনাজপুরের পার্বতীপুর ল্যাম্ব হাসপাতালের সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে জন্ম হয় তাদের। কিন্তু তারা দুনিয়ায় আসে জোড়া লাগা অবস্থায়। ফলে দুঃশ্চিন্তার অন্ত ছিল না বাবা-মায়ের। জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নের পালপাড়ার বাসিন্দা বাবা জয় প্রকাশ পাল ও মা কৃষ্ণা রানী পাল ২০১০ সালের ৩০ জানুয়ারি ভর্তি করান ঢাকা শিশু হাসপাতালে। পরে ৮ ফেব্রুয়ারি দেশের প্রথম অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জোড়া লাগানো দুই শিশুকে আলাদা করেন চিকিৎসক এ আর খান। দেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানে সৃষ্টি হয় নতুন ইতিহাস।

বাবা মায়ের কোল থেকে নানা চড়াই উতরাইয়ের পর বীরগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে বেড়ে ওঠা মনি-মুক্তা পা দিয়েছে ১৪ বছরে, এসেছে স্বাভাবিক জীবনে। তারা এখন স্থানীয় ঝাড়বাড়ী দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী। সাইকেল চালিয়েই তারা স্কুলে যায়। পড়ালেখার পাশাপাশি কো-কারিকুলামেও পারদর্শী। হতে চায় চিকিৎসক, সেবা করতে চায় দুস্থ-অসহায় মানুষের।

মনি বলে, আমাদের জন্মের পর স্বাভাবিক ছিলাম না। সেই সময়ের যে ছবিগুলো তোলা হয়েছিল তা দেখে বুঝেছি। চিকিৎসা বিজ্ঞানের বদৌলতে আমরা আজ স্বাভাবিক জীবনযাপন করছি। তাই আমাদের ইচ্ছা চিকিৎসক হওয়া। চিকিৎসক হয়ে আমরা গরিব, অসুস্থ, অসহায় মানুষের সেবা করতে চাই। 

মুক্তা জানায়, আমাদের গর্ব হয় যে আমরা বাংলাদেশে প্রথম সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পৃথক হয়েছি। চিকিৎসক এ আর খানসহ যেসব চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টরা আমাদের এ পর্যন্ত আসতে সহায়তা করেছে তাদের কাছে আমরা চির কৃতজ্ঞ। সবার কাছে দোয়া কামনা করি যাতে মানুষের মতো মানুষ হতে পারি। যাতে চিকিৎসক হতে পারি। 
শত বাধা পেরিয়ে মনি ও মুক্তা পৌঁছে যাক তাদের গন্তব্যে এমন চাওয়া বাবা ও মায়ের। তবে পরিবারের সীমাবদ্ধতাও কম নয়। তাদের বাবা জয় প্রকাশ পাল কৃষি কাজ করেন। পাশাপাশি গ্রামের মধ্যে ছোট একটি ওষুধের দোকান রয়েছে। যার স্বল্প আয় দিয়েই স্ত্রী, তিন মেয়ে ও এক ছেলের পড়াশোনা ও ভরণপোষণ করেন তিনি।

১৪ বছরে মনি-মুক্তা, চালাতে পারে সাইকেলও

জয় প্রকাশ পাল বলেন, মনি ও মুক্তার জন্মের পর পেটে জোড়া লাগানো ছিল। ফলে তাদের ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে অনেক দুঃশ্চিন্তা ছিল। এলাকার মানুষও নানান অপবাদ দিয়েছে। অর্থ সংকট আর হতাশার মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম। পরে চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাদেরকে আলাদা করেন। এখন তারা সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে। আমার মেয়ে দুটির মেধা ভালো। ভালো ছবি আঁকে, ভালো নৃত্য করে। এখন তাদেরকে নিয়ে আমার গর্ব হয়। তারা যাতে মানুষের মতো মানুষ হতে পারে। তাদের স্বপ্ন চিকিৎসক হওয়ার, তাদের এই স্বপ্ন পূরণে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাবো। 

স্থানীয় সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল বলেন, মনি ও মুক্তা বাংলাদেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাদের স্বপ্নপূরণে পড়ালেখায় সহযোগিতা করা হচ্ছে। সম্প্রতি তাদেরকে দুটি বাইসাইকেল দেওয়া হয়েছে যাতে তারা সময়মতো স্কুলে পৌঁছাতে পারে।

Source link

Related posts

কুষ্টিয়া করোনায় ২৪ ঘণ্টায় পাঁচজনের মৃত্যু

News Desk

কষ্টে আছেন গাইবান্ধায় পানিবন্দি ৬১ হাজার মানুষ

News Desk

এলএসডির ব্যবসা চলছে একবছর ধরে, ১৫টি গ্রুপ সক্রিয়

News Desk

Leave a Comment