মানুষের সঙ্গে কুকুর, বিড়াল বা বিভিন্ন পোষাপ্রাণী বা পাখির বন্ধুত্ব দেখা গেলেও দিনাজপুরের হিলিতে হাঁসের সঙ্গে বন্ধত্ব গড়ে তুলে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী এস এম ইফতি রিফাত। প্রাইভেট পড়া থেকে শুরু করে হাট ও বাজার যেখানেই ইফতি যায় সেখানেই তার সঙ্গে সঙ্গে যায় হাঁসটি। হাঁস ও মানুষের মাঝে ভালোবাসার এমন দৃশ্য দেখতে ভিড় করছেন অনেকে। প্রাণীর প্রতি মানুষের ভালোবাসা থেকেই এমন সৃষ্টি বলে দাবি প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার।
হিলির থানা রোডের বাসিন্দা পাউশগাড়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক ওবায়দুর রহমানের ছেলে এস এম ইফতি রিফাত। স্থানীয় দক্ষিনবাসুদেবপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ালেখা করে সে। স্থানীয় বাজার থেকে একদিনের একটি হাঁসের বাচ্চা কিনে নিয়ে এসে সেটিকে লালন-পালন করে। এখন সেই হাঁসের সঙ্গে দারুণ সখ্য গড়ে উঠেছে ইফতির। সে যেখানেই যায় সেখানেই পিছু নেয় হাঁসটি। তাকে না দেখলে চিৎকার-চেঁচামেচি করে হাঁসটি। তার হাতে ছাড়া অন্য কারও হাতে খায় না। এদিকে হাঁস ও মানুষের এমন বন্ধুত্ব দেখতে ভিড় করছেন অনেকে নিচ্ছেন হাঁসের সঙ্গে সেলফি।
হাঁস পালনকারী শিক্ষার্থী ইফতি রিফাত বলে, ‘ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন পাখি ও প্রাণী লালন-পালনের শখ আমার। প্রথমে কবুতর পালন করি এরপর মুরগি, কোয়েল পাখি, বাজরিকা পাখি পালন করতাম। এ ছাড়া বিড়াল ও কুকুর লালন পালন করতাম। সেই শখ থেকেই আমি হিলি বাজারে যাই কবুতর কিনতে। কিন্তু সেখানে অনেকগুলো হাঁসের বাচ্চাকে মা ছাড়া দেখে আমার মায়া হয়। সেই মায়ার টানে সেখান থেকে একদিনের একটি হাঁসের বাচ্চা কিনে নিয়ে আসি বাড়িতে। এর পর সেটিকে লালন-পালনের জন্য একটি খাঁচা কিনি। সেখানেই রেখে লালন-পালন করছিলাম। হাঁসটিকে নিজ হাতে খাওয়ানো থেকে শুরু করে সবকিছুই আমি নিজেই করি। ধীরে ধীরে হাঁসটি বড় হয়ে ওঠে এখন তার বয়স দেড় মাস। এতে করে হাঁসটির সাথে আমার বোঝাপড়া বেশ ভালো হওয়ায় আমাদের দুজনের মাঝে বেশ সখ্য গড়ে উঠেছে। এরপর থেকেই সে আমার সঙ্গে বাসায় যেমন থাকে তেমনি আমি যেখানে যাই সেখানেই যায়। আমার সঙ্গে ঘোরাফেরা করে। আমি যখন প্রাইভেট পড়তে যাই তখনও সে আমার সাথে যায়। খেলা থেকে শুরু করে হাট-বাজার যেখানেই যাই না কেন ও আমার সঙ্গে যায়। এ ছাড়া আমার সঙ্গে ও খেলাধুলা থেকে শুরু করে সবকিছু করে। আমাকে ছাড়া অন্য কারও হাতে খায় না এমনকি আমাকে না দেখলে হাসটি চেঁচামেচি করে। এটিকে আরও বড় করার ইচ্ছা আছে আমার। সেই সঙ্গে এই হাসটিকে বিক্রি বা জবাই কোনোটিই করবো না। আমার সঙ্গেই রাখবো ওকে।
স্থানীয়রা জানান, ইফতির হাঁসের সঙ্গে সখ্যর দৃশ্য দেখতে প্রতিদিন অনেকেই ভিড় করছেন, হাঁসের সঙ্গে তুলছেন ছবি। কেউ কেউ বলছেন, তারা এর আগে এমন দৃশ্য দেখেননি।
ইফতির বাবা ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘সে (ইফতি) ছোটবেলা থেকেই পশুপাখির প্রতি মমতা দেখিয়েছে। মোবাইল আসক্তির বদলে এমন সৃজনশীল কাজে ব্যস্ত থাকাটা প্রশংসনীয়।’
ড্রিমল্যান্ড স্কুলের শিক্ষক জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ইফতি যখন প্রাইভেট পড়ে, হাঁসটিও ঠিক তখন তার পাশে পাশে থাকে। সে না থাকলে হাসটি কেঁদে ওঠে, আর দেখা পেলেই শান্ত হয়ে যায়।’
হাকিমপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শফিউল ইসলাম বলেন, ‘প্রাণী ও মানুষের মাঝে ভালোবাসা গড়ে ওঠা স্বাভাবিক। ভালোবাসা ও যত্ন পেলে প্রাণীরাও মানুষের প্রতি গভীরভাবে সাড়া দেয়।’