হঠাৎ বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া; ধান, আলু ও সবজির ব্যাপক ক্ষতি
বাংলাদেশ

হঠাৎ বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া; ধান, আলু ও সবজির ব্যাপক ক্ষতি

অসময়ে বৈরী আবহাওয়া, কয়েকদিন ধরেই হচ্ছে বৃষ্টিপাত- সেইসঙ্গে দমকা হাওয়া। এতে নুইয়ে পড়েছে ধানগাছ, আলু ক্ষেতে জমেছে পানি। ফলে কৃষকদের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বাদ যায়নি সবজী ক্ষেতও। ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তা।

গত কয়েকদিন ধরেই দিনাজপুরে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। কিন্তু গত শুক্রবার (১ নভেম্বর) রাতে বৃষ্টির সঙ্গে দমকা বাতাস বইতে শুরু করে। এতে কৃষকের জমির ধানগাছ নুইয়ে পড়ে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় এই জেলায় ৪৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সেইসঙ্গে বাতাসের গতিবেগও ছিল ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৮ কিলোমিটার।

এই দমকা বাতাসের কারণেই ধানগাছ নুইয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। তারা জানিয়েছেন, যেসব ধান গাছ পড়ে গেছে সেগুলো থেকে ভালো ফলন পাওয়া যাবে না।

দিনাজপুরের সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের চেরাডাঙ্গী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশেই বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত। কয়েকদিন পরেই যে ধান পরিপুষ্ট হয়ে উঠতো কৃষকের গোলায়, শনিবার ভোররাতে হঠাৎ বৃষ্টি আর দমকা হাওয়ায় নুইয়ে পড়েছে সেসব গাছ। অনেক জায়গায় ডুবে গেছে শীষ। শুধু এই এলাকাতেই নয়, জেলার ১৩টি উপজেলাতেই ধানক্ষেতের এমন অবস্থা। এতে ব্যাপক ক্ষতি হবে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

চেরাডাঙ্গী এলাকার হায়দার আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ধান তো পড়ে গেছে। এই ধানগুলো তো ভালো পাওয়া যাবে না। যে কয়েকটা গাছ দাড়িয়ে আছে, যদি এমন আবহাওয়া চলতেই থাকে তাহলে সেগুলোও পড়ে যাবে। পড়ে যাওয়া গাছ থেকে কিছুটা ধান পাওয়া যাবে। কিন্তু এগুলোর রং হবে না, ফলন ভালো হবে না, আবার মূল্য কম হবে।’

ওই এলাকার রবিউল ইসলাম বলেন, ‘এমনিতেই এবারে ধানে কিছু পোকা ধরেছিল। খরচ করে এখন পোকা নাই, কিন্তু বৃষ্টি ও বাতাসে ধান গাছ পড়ে গেছে। এখন এসব গাছ থেকে ধান হবে না। কেটে গরুকে খাওয়ানো ছাড়া কোনও উপায় নাই। এভাবে ক্ষতি হলে আমরা কী করবো।’

ইউনিয়নের নাহিতুর গ্রামের মোকাররম হোসেন বলেন, ‘যে হাওয়া ও বৃষ্টি হয়েছে তাতে করে গৃহস্থের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ধান গাছ যেগুলো পড়ে গেছে সেগুলো থেকে ধান পাওয়া যাবে না। আমার ১০ কাঠা (২৫ শতক) জমির ধান পড়ে গেছে।’

শুধু ধানক্ষেতেই নয়, কৃষকদের রোপণ করা আলু ক্ষেতেও লেগেছে পানি।ফলে মাটির নিচেই পচে নষ্ট হবে বীজ। আর এমন অবস্থায় বাড়বে উৎপাদন খরচ।

একই ইউনিয়নের উলিপুর এলাকার কৃষক মোজাহারুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রতিদিন পানি হচ্ছে। আলু ক্ষেতে পানি লেগে গেছে। এতে যেসব বীজ আছে মাটির নিচে সেগুলো পচে যাবে। গত বছরে যে ক্ষতি হয়েছিল তা পুষিয়ে নেওয়া যাবে আশা করেছিলাম। কিন্তু এখন যে কী হবে তা বুঝতে পারছি না। বৃষ্টি বাড়লে ক্ষতি বাড়বে।’

কৃষক তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আলু ক্ষেতে পানি লেগেছে। এখন সেই পানি সেচ করার ব্যবস্থা করছি। যেভাবে ক্ষেতে পানি লেগেছে তাতে করে বীজ পচে যাবে। একই ক্ষেতে দুইবার করে আলু লাগাতে হবে। গত বছর আলুর দাম পাইনি, এবারও একই রকম লোকসানে পড়বো বলে মনে করছি।’

ঘুঘুডাঙ্গা এলাকার কৃষক মঈনুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আলু ক্ষেত তো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই সময়ে বৃষ্টি হয়, আগে দেখিনি। ধান পড়ে গেছে, আলু ডুবে গেছে। এই সময়ে বৃষ্টির প্রয়োজন নাই। এটি আল্লাহর গজব। আমাদের এই এলাকাতে এই সময়টাতেই আলু লাগানো হয়।’

ইতোমধ্যেই নুইয়ে পড়া ধানক্ষেত, আলুক্ষেতসহ ক্ষতির মধ্যে পড়া জমির পরিমাণ নিরূপণ করেছে কৃষি বিভাগ। দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আফজাল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রাথমিক হিসাবে ধানের জমি আক্রান্ত হয়েছে ৫৮১ হেক্টর, আলু ক্ষেত ২৩ দশমিক ৫ হেক্টর এবং সবজি ক্ষেত আক্রান্ত হয়েছে ২২ দশমিক ৫ হেক্টর। আমাদের মাঠ কর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কৃষকদের পাশে থেকে পরামর্শ দিতে। এই অবস্থা থাকলে ক্ষতি হবে। ক্ষতির বিষয়টি দুই চার দিন পড়ে নিরূপণ করা যাবে। তবে যদি আবহাওয়া ভালো হয় তাহলে ক্ষতির পরিমাণ কমবে।’

Source link

Related posts

পানিতে ভেসে গেলো ১১৬ কোটি টাকার মাছ ও কৃষি

News Desk

দুধের সরবরাহ বাড়াতে ৩০০ কালেকশন সেন্টার

News Desk

ফেরির পল্টুন থেকে পড়ে প্রাণ গেল শ্রমিকের

News Desk

Leave a Comment