রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের রুইলুই পর্যটনকেন্দ্র পুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। আগুনে অন্তত ১৪০টি রিসোর্ট-কটেজ, দোকান ও বসতঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে নিঃস্ব হয়ে গেছেন রিসোর্ট-কটেজের মালিক ও ব্যবসায়ীরা। কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির কথা জানিয়েছেন তারা।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পৌনে ১টার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তেই আশপাশের রিসোর্টে ছড়িয়ে পড়ে। পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আগুনে পোড়ার পর স্থানীয় লোকজন, ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনীর চেষ্টায় সন্ধ্যা ৬টার দিকে আগুনে নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে এ ঘটনায় হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, দুপুর পৌনে ১টার দিকে সাজেক ভ্যালির হেডম্যান লালথাংয়া লুসাইয়ের বাসভবনের পাশে সাজেক ইকো ভ্যালি রিসোর্টে প্রথমে আগুন লাগে। পরে তা আশপাশের বসতঘর ও রিসোর্ট-কটেজে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় কয়েকশ পর্যটক আতঙ্কিত হয়ে রিসোর্ট থেকে বেরিয়ে যান। বিকাল ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে আসে ফায়ার সার্ভিস। সাজেকের অধিকাংশ রিসোর্ট-কটেজ কাঠ ও বাঁশের তৈরি হওয়ায় পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে সব ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
আগুনে পুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে শতরঞ্জি ইকো রিসোর্ট। এই রিসোর্টের মালিক নাইমুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগামী ৩০ ফেব্রুয়ারি আমার রিসোর্ট উদ্বোধনের কথা ছিল। কিন্তু আজ আগুনে পুড়ে আমার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। অন্তত ৬০ লাখ টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’
আগুনে সব পুড়ে যাওয়ায় নিঃস্ব হয়ে গিয়েছি উল্লেখ করে মেঘের ঘর রিসোর্টের মালিক জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আমার সবকিছু শেষ। দুপুর পৌনে ১টার দিকে দেখলাম অবকাশ রিসোর্টের কিছু দূরে আগুন লেগেছে। তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এতে আমার দুটি রিসোর্ট ও একটি রেস্তোরাঁ পুড়ে যায়। ফায়ার সার্ভিস এসেছে আগুন লাগার দুই ঘণ্টা পরে। তারা আসার আগেই সাজেক পুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।’
সাজেক রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি সুপর্ণ দেব বর্মণ জানিয়েছেন, আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে আমরা নেভানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। এরই মধ্যে কয়েকটি রিসোর্ট-কটেজ পুড়ে যায়। পরে আশপাশের সব রিসোর্ট-কটেজে ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার আগেই সব পুড়ে গেছে।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরিন আক্তার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সাজেক ভ্যালিতে ফায়ার সার্ভিসের কোনও স্টেশন না থাকায় দীঘিনালা থেকে ফায়ার সার্ভিসের দল আসতে সময় বেশি লেগেছে। আবার সেখানে পানির সংকট থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় বেশি লেগে যায়।’
ইউএনও শিরিন আক্তার আরও বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে সেনাবাহিনী ও স্থানীয় লোকজন মিলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। পরে দীঘিনালা ফায়ার সার্ভিসের দলকে খবর দেওয়া হয়। কিন্তু দুর্গম পাহাড়ি পথ হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের সাজেকে পৌঁছাতে সময় লাগে দুই ঘণ্টার মতো। এরপর আগুন নেভানোর কাজ শুরু করলেও পর্যাপ্ত পানি না থাকায় দূরের গ্রাম থেকে পানি এনে নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হয়। এরই মধ্যে সদর থেকে আরও দুটি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেয়। কিন্তু বাতাসের তীব্রতা, পানির সংকটে নেভাতে বেশি সময় লেগে যায়। সবশেষ ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট পাঁচ ঘণ্টার চেষ্টায় সন্ধ্যা ৬টার দিকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।’
আগুন কীভাবে লেগেছে এবং কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে জানতে চাইলে রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রুহুল আমীন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঘটনাস্থলে বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রয়েছেন। আগুন কীভাবে লেগেছে, সেটি এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিষয়টি নিশ্চিত হতে আমাদের তদন্ত টিম কাজ করছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে। বিস্তারিত তথ্য হাতে এলে জানাতে পারবো।’
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সবমিলিয়ে ১৪০টি রিসোর্ট-কটেজ, দোকান ও বসতঘর পুড়ে গেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে পানি ছিটানোর আলোচনা হলেও সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় সেটি করা যায়নি। এ ঘটনায় হতাহতের কোনও খবর পাইনি আমরা।’