পবিত্র ঈদুল আজহায় প্রতি বছর মসলাজাতীয় পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি দামও বাড়ে। কিন্তু এ বছর তার উল্টো চিত্র লক্ষ করা যাচ্ছে। পাইকারি বাজারে এবার মসলার দাম গত বছরের তুলনায় কিছুটা কমতির দিকে। পাশাপাশি বেড়েছে মসলার আমদানিও।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতি বছর কোরবানির ঈদের আগে একটি সিন্ডিকেট বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে মসলার দাম বাড়ায়। এবার এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি।
দেশের ভোগ্যপণ্যের অন্যতম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার বাড়ার পরিবর্তে কিছু মসলার দাম কমেছে।
এদিকে, চলতি অর্থবছরে এপ্রিল পর্যন্ত দেশে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সব মিলিয়ে এক লাখ ৭০ হাজার টন মসলাপণ্য আমদানির কথা জানালো চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্র।
সংস্থাটির উপপরিচালক ড. মোহাম্মদ শাহ আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৮৩৪ দশমিক ৪২ টন মসলা আমদানি হয়েছে। ওই সময়ে এই বন্দর দিয়ে দেশে সবচেয়ে বেশি ৯৯ হাজার ৮৫৮ টন রসুন আমদানি করা হয়েছে। অন্যান্য মসলার মধ্যে এলাচ ১ হাজার ৬১৪ দশমিক ৬ টন, দারুচিনি ১০ হাজার ৫৪৩ টন, লবঙ্গ ২ হাজার ১৫৪ টন, জিরা ৩ হাজার ৭০২ টন, পেস্তাবাদাম ৮২৭ টন, কেশিয়া পাউডার ৩৭৫ টন, কিসমিস ৪ হাজার ৮২৩ টন, শাহী জিরা ২ টন, জয়ত্রী ২৯০ টন, কাবাব চিনি ২ টন, জায়ফল ২৭২ টন, কালোজিরা ৭ টন, গোলমরিচ ১ হাজার ৯ দশমিক ৭২ টন, মেথি ৭২ টন, আদা ২১ হাজার ১৯ টন, পেঁয়াজ ১৪ হাজার ৬৩ দশমিক ৬ টন, হলুদ ৪ হাজার ৩২৮ টন, শুকনো মরিচ ১৭৯ দশমিক ৭ টন, ওয়ালনট ১৭৫ টন, অনিয়ন পাউডার ৪৩৯ টন, জিনজার পাউডার ৩৭ দশমিক ৮ টন, গারলিক পাউডার ৭৩২ টন, পি-নাট ৮৮ টন, ড্রাই অনিয়ন লিভ ১৩৮ টন, কোকোনাট ফ্যাট ৮৮৮ টন, কেশিও নাট ৯৮৫ টন ও মৌরি ৭১২ টন আমদানি করা হয়েছে।’
নগরীর বহদ্দারহাট এলাকার বাসিন্দা জালাল রুমি বলেন, ‘কোরবানি এলে মসলার বাজারে এক ধরনের অস্থিরতা শুরু হয়। তবে এবার মসলার দাম বাড়েনি বরং কিছু কিছু মসলার দাম কমেছে। এটা ভালো লক্ষণ।’
এক সপ্তাহের ব্যবধানে খাতুনগঞ্জে মসলাজাতীয় পণ্যের মধ্যে এলাচের দাম কেজিপ্রতি ২০০ টাকার বেশি কমেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে ধনে ও গোলমরিচের দাম। আবার দু-সপ্তাহের ব্যবধানে কেজি প্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা কমেছে জিরার দাম। পেঁয়াজের দামও কমতির দিকে খাতুনগঞ্জে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারিতে কেজিপ্রতি ২ থেকে ৩ টাকা কমেছে পণ্যটির দাম।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বুধবার কথা বলে জানা গেছে, পাইকারিতে কেজিপ্রতি এলাচ ৪ হাজার ৭০ টাকা, লবঙ্গ ১ হাজার ২৪০ টাকা, জিরা ৬০০ টাকা, ধনে ১৫০ টাকা, দারুচিনি ৩৯০ টাকা, স্টার ৭৮০ টাকা, গোলমরিচ ১ হাজার ৮০ টাকা এবং জয়ত্রী ২ হাজার ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
একইদিন রাউজান উপজেলার পাহাড়তলী চৌমুহনী বাজারের শাহজাহান স্টোরের মালিক মো. শাহজাহান বলেন, ‘খুচরায় কেজিপ্রতি এলাচ ৪ হাজার ৮০০ টাকা, লবঙ্গ ১ হাজার ৪০০ টাকা, জিরা ৭৫০ টাকা, ধনিয়া ১৬৫ টাকা, দারুচিনি ৫৮০ টাকা, গোলমরিচ ১ হাজার ১০০ টাকা এবং জয়ত্রী ৩ হাজার ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।’
খাতুনগঞ্জের মসলা আমদানিকারক মঞ্জুর ফারুক বলেন, ‘আমদানিকারকরা এবারে বেশি মসলা আমদানি করেছেন। আর বন্দরে খালাস করতে অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেগ পেতে হয়নি। কিছু পণ্যে যেমন– তেল ও চিনিতে ভ্যাট-ট্যাক্স মওকুফ করা হয়েছে। তবে যতটুকু আমদানি হয়েছে, ততটুকু পরিমাণ ভোক্তা পর্যায়ে চাহিদা নেই বললেই চলে। ব্যবসায়ীরা চান, দ্রুত মসলা বিক্রি করতে, তাই কম দামে ছেড়ে দিচ্ছেন তারা। আর এবারে কোনও নির্দিষ্ট পণ্য তেমন গুদামজাত করে রাখতে পারেনি। প্রশাসন তৎপর থাকায়, দাম অনেকটা কম।’
কোরবানির আগে মসলাজাতীয় পণ্যের দাম কমার বিষয়ে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার-সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে খাতুনগঞ্জে পণ্যের বিক্রি কমে গেছে এখন। তাই চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বেশি। আর সরবরাহ বেশি থাকায় কিছু পণ্যের দাম কমছে। আবার আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করতে গিয়েও অনেক সময় নানা পণ্যের দাম কমে।’
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস বলেন, ‘দেশি পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে। প্রতিদিন ট্রাকে ট্রাকে পেঁয়াজ আসছে। পুরো বাজার দেশি পেঁয়াজে সয়লাব। পাশাপাশি বিদেশ থেকেও আদা, রসুনের আমদানি ভালো। বাজারে কোনও সংকট নেই। গত এক সপ্তাহের তুলনায় দাম কিছুটা কমেছে।’