‘সোনালি আঁশে ভরপুর ভালোবাসি শেরপুর’—স্লোগানের মতোই শেরপুর জেলায় চলতি বছর অনুকূল আবহাওয়া থাকায় গতবারের চেয়ে পাটের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া পাট চাষের জন্য উপযোগী। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বাম্পার ফলনের আশা করলেও পাট জাগ দেওয়ার জন্য খাল-বিলে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় চাষিরা শঙ্কিত। আবার খরচ বাড়লেও ভালো দাম না পেলে লোকসানের চিন্তা তো আছেই।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এক দশক আগে জেলায় পাটের আবাদি জমি ছিল চলতি বছরের প্রায় অর্ধেক। হেক্টরপ্রতি পাটের গড় উৎপাদনও বৃদ্ধি পাওয়ায় চলতি বছর জেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে পাটের আবাদ হয়েছে। এ বছর ১ হাজার ৮৯৪ হেক্টর জমি আবাদ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে পাটের আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৯১১ হেক্টরে। এসব জমি থেকে পাটের উৎপাদন ৬ হাজার ২০ টন।
ইতোমধ্যে ১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমির পাট কাটা শেষ হয়েছে। যেখানে বিঘাপ্রতি পাটের গড় ফলন ১০ থেকে ১২ মণ। কৃষকরা বলছেন, বিঘাতে পাট চাষে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা এবং খরচ বাদে মুনাফা থাকে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া প্রতিটি পাটখড়ির আঁটি ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি করে বাড়তি আয় করা যায়।
ফলনে খুশি হলেও স্থির পানির জলাশয় সংকটে বাড়তি খরচে সেচের পানিতে পাটের জাগ দিতে হয়েছে। যা বাড়িয়েছে কৃষকের ব্যয়। এ অবস্থায় লোকসান কাটাতে বাজারে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের দাবি তাদের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এখন চলছে পাট কাটার ধুম। বিভিন্ন জলাশয়ে চলছে পাট জাগ, আঁশ ছড়ানো, শুকানো ও পাটকাঠি সংগ্রহের কর্মযজ্ঞ। সবুজ পাট গাছের রূপান্তর ঘটছে সোনালি পাটের আঁশ আর পাটকাঠিতে। গ্রামীণ জনপদে কৃষাণ-কৃষাণীরা মেতে উঠেছেন পাট কাজের ব্যস্ততায়।
স্থানীয় পাটচাষিরা বলেন, ‘উৎপাদন খরচ বেড়েছে। জলাশয় সংকটে পাট জাগ দেওয়ার খরচ বেড়েছে। তবে বাজারে পাটের যে দাম মিলছে তাতে পোষাচ্ছে না। বর্তমানে বাজারে প্রতি মণ পাট ৩ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।’
শেরপুর সদর উপজেলার চরশেরপুর ইউনিয়নের হেরুয়া বাঘেরচর গ্রামের কৃষক মো. কামারুজ্জামান বলেন, ‘সিন্ডিকেট করে যেন কোনও ব্যবসায়ী পাটের দাম কমাতে না পারে সেদিকে সরকারের কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। তা না হলে একদিকে যেমন কৃষকদের পাট চাষে আগ্রহ কমবে। অন্যদিকে পাটের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হবেন পাটচাষিরা।’
শেরপুর সদরের লছমনপুর ইউনিয়নের দড়িপাড়া গ্রামের কৃষক আক্রাম হোসেন বলেন, ‘প্রতি বছরের মতো এবারও তিন বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। ভালো দাম পেলে পাট চাষে আমাদের আগ্রহ আরও বাড়বে।’
শেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘পাট জাগ দেওয়ার সমস্যা সমাধান হলে চাষিরা পাট চাষে লাভবান হবেন। এ বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিতে মাঠে কাজ করছেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা। দেশে পলিথিন নিষিদ্ধ হওয়ায় এবং পরিবেশবান্ধব বলে দেশে পাটের বহুমুখী ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে দেশে ও বিদেশে পাটের চাহিদা বাড়ছে। তাই চলতি বছর পাটের ভালো দাম পাওয়া যাবে।’