শেরপুরে চাহিদার তুলনায় কোরবানির পশু বেশি
বাংলাদেশ

শেরপুরে চাহিদার তুলনায় কোরবানির পশু বেশি

পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে সারাদেশে চলছে কোরবানির পশু বিক্রির প্রস্তুতি। বর্তমানে কোরবানির পশুর পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন শেরপুরের ছোট-বড় ১৩ হাজার ৭৫২ জন খামারি।

জেলায় এবার চাহিদার চেয়ে ২৪ হাজার ৫২৩টি কোরবানির পশু বেশি রয়েছে। এতে জেলার ৫ উপজেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা মিটিয়েও উদ্বৃত্ত থাকবে চব্বিশ হাজারের বেশি।

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্র জানায়, শেরপুর জেলার ৫ উপজেলায় কোরবানির জন্য ৮৫ হাজার ৭৬৩টি গবাদি পশু রয়েছে, যা গতবছর ছিল ৮৩ হাজার ২৮৩টি। এ বছর বেড়েছে ২ হাজার ৪৮০টি।

এর মধ্যে স্থানীয় চাহিদা ৬১ হাজার ২৪০টির। গতবছর ছিল ৫৫ হাজার ২৩০টি। ফলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত ২৪ হাজার ৫২৩টি কোরবানির পশু উদ্বৃত্ত থাকবে।

কোরবানির জন্য মোট গরু রয়েছে ৫৩ হাজার ৯২৫টি। এর মধ্যে ষাঁড় ৪০ হাজার ৮৯৯টি, বলদ ১ হাজার ৫৬৩টি, গাভী ১১ হাজার ৪৬৩টি, মহিষ ১ হাজার ৩২০টি, ছাগল ২৫ হাজার ৯৫১টি এবং ভেড়া ৪ হাজার ৫৬৭টি।

জেলার ৫টি উপজেলার মধ্যে শেরপুর সদর উপজেলায় ১৮ হাজার ২৮৫টি পশু, নালিতাবাড়ী উপজেলায় ১৭ হাজার ৯০৭টি, শ্রীবরদী উপজেলায় ১৯ হাজার ৯১০টি, নকলা উপজেলায় ১৭ হাজার ৮২৮টি এবং ঝিনাইগাতী উপজেলায় ১১ হাজার ৮৩৩টি কোরবানির পশু রয়েছে। জেলার প্রতিটি উপজেলার চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত কোরবানির পশু রয়েছে।

শেরপুর সদরের লছমন এলাকার জিহান ডেইরি ফার্মের ব্যবস্থাপক জামিল আহসান মুকুল বলেন, প্রতিবছরই আমাদের খামার থেকে দেশের দূর-দূরান্তের পাইকার-সাধারণ ক্রেতারা এসে কোরবানির গরু কিনে নিয়ে যায়। ফ্রিজিয়ান, শাহীওয়াল ও দেশিসহ ৪৫০টি গরু রয়েছে আমাদের খামারে। তার মধ্যে কোরবানির জন্য এবার শতাধিক গরু লালন-পালন করা হচ্ছে। নেপিয়ার ঘাস, খড়, ভূষি, খৈল, পালিশ কুড়া, ভুট্টা ঘাস ইত্যাদি প্রাকৃতিক খাবার গরুগুলোকে দেওয়া হয়। গরু মোটাতাজাকরণের জন্য কোনও রকম রাসায়নিকদ্রব্য পুশ করা হয়নি। এজন্য আমাদের ওপর ক্রেতাদের একটা আস্থা রয়েছে। তাই কোরবানির সময় আমরা গরুগুলোকে ন্যায্য দামে বিক্রি করতে পারি।

শেরপুরে চাহিদার তুলনায় কোরবানির পশু বেশি খামারিরা জানান, আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে জেলার খামারগুলোতে কোরবানির পশু প্রস্তুত করা হচ্ছে। তবে গো-খাদ্যের বাড়তি দামের কারণে তারা এসব পশুর প্রত্যাশিত মূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত। তারা বলছেন, প্রতি বছর গো-খাদ্য ভূষি, ধানের কুড়া, খৈল, খড়, ঘাসসহ গো-খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এ কারণে প্রতি গরুতে প্রস্তুত খরচ ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর ১০০ কেজি ওজনের কোরবানির পশু প্রস্তুত করতে যে খরচ করতে হয়েছিল এবার তার সঙ্গে অন্তত ৩০ শতাংশ যোগ করতে হচ্ছে। ফলে কোরবানির হাট-বাজারে পশুর দাম স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে।

তারা আরও জানান, দেশে উৎপাদিত গরুই কোরবানির চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট। তাই ভারতীয় গরু যেন চোরাপথে না আসে, সে বিষয়ে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি চান খামারিরা।

জেলায় ২৪টি অনুমোদিত হাটে থাকবে ভেটেরিনারি মেডিক্যাল টিম। হেলথ সার্টিফিকেট যাচাই, দ্রুত সেবা প্রদানে হটলাইন ও কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। অনলাইন হাট ব্যবস্থার বিকল্পও রাখা হয়েছে এবং পশু বিক্রিতে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। প্রতিটি উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে ‘ডিজিটাল তথ্য সহায়তা ডেস্ক’ চালু করা হয়েছে।

জনসচেতনতামূলক প্রচারপত্র, ব্যানার, মাইকিং ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার চালানো হচ্ছে। নিরাপদ কোরবানি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ চলছে।

জেলা কন্ট্রোল রুমের জরুরি হটলাইন নম্বরগুলো হলো – ০২৯৯৭৭৮১০৩৬, ০১৩২৪২৯০১৩৫। প্রতিটি উপজেলার জন্য আলাদা হেল্পডেস্ক নম্বর প্রচার করা হচ্ছে।

শেরপুর সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. পলাশ কান্তি দত্ত বলেন, জেলায় এবারের কোরবানির পশুর কোনও ঘাটতি নেই। বরং জেলার ৫ উপজেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা মিটিয়েও উদ্বৃত্ত থাকবে ৩ হাজার ৯৩৮টি পশু। ফলে কোরবানির পশু নিয়ে জেলার মানুষদের কোনও টেনশন নেই। কোরবানির প্রত্যেকটি হাটে আমাদের ভেটেরিনারি মেডিক্যাল টিম সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থেকে সেবা প্রদান করবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের পরামর্শ মেনে খামারিরা গবাদি পশুগুলো মোটাতাজা করেছেন। এসব প্রাণিকে মোটাতাজা করতে কোনও প্রকার রাসায়নিক বা অপদ্রব্য পুশ করা হয়নি।

“খড়, গম ও ডালের ভূষি, ঘাস, খৈল, কুড়া খাইয়ে এসব পশু পালন করা হয়েছে। ফলে এসব পশুর মাংস মানুষের দেহের জন্য নিরাপদ।”

শেরপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রেজওয়ানুল হক ভূঁইয়া জানান, “কোরবানির পশুকে অসদুপায়ে মোটাতাজা না করতে আমরা বিভিন্ন এলাকায় সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন করেছি। পাশাপাশি, ভেটেরিনারি ফার্মেসিগুলোতে নিম্নমানের ওষুধ সামগ্রী না রাখার বিষয়টি তদারকি করা হচ্ছে। কয়েক দফায় গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ কিছুটা বেড়েছে। তবে আমরা সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি, যাতে জেলার জনগণ স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদভাবে কোরবানি সম্পন্ন করতে পারে।”

Source link

Related posts

ঘুষ ছাড়া সার দেন না শওকত, সরকারি কার্যালয়ে বানিয়েছেন বিশ্রামকক্ষ

News Desk

ওমানের সড়কে প্রাণ গেলো ময়মনসিংহের ২ ভাইয়ের

News Desk

বেনাপোলে চালু হচ্ছে কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল, কমবে যানজট বাড়বে রাজস্ব

News Desk

Leave a Comment