বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদকে যথাযথ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দিয়ে তার লাশ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে স্থানান্তরের দাবি জানানো হয়েছে। শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের নিয়াজ মুহম্মদ উচ্চ বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে আয়োজিত সমাবেশ থেকে এ দাবি জানানো হয়। কবির প্রতি রাষ্ট্রীয় বৈষম্য নিরসনে ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণে এই সমাবেশের আয়োজন করে আল মাহমুদ গবেষণা কেন্দ্র ও স্মৃতি পরিষদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
কবিকে স্মরণ করে দুপুর ১২টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে একটি র্যালি বের করা হয়। এটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে উত্তর মৌড়াইল এলাকায় কবির করবস্থানে গিয়ে শেষ হয়। র্যালিতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন। পরে আল মাহমুদের কবরে জাতীয় পতাকা দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তারা। শেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের বিএনসিসি শিক্ষার্থীরা কবিকে গার্ড অব অনার দেন।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে আয়োজিত সমাবেশে কবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও আল মাহমুদের মামা হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি, প্রেসক্লাবের সভাপতি জাবেদ রহিম বিজন এবং আল মাহমুদ গবেষণা কেন্দ্র ও স্মৃতি পরিষদের সভাপতি ইব্রাহিম খান সাদাত।
ইব্রাহিম খান সাদাত বলেন, ‘বাংলাদেশের শিক্ষা ও গবেষণায় কবি আল মাহমুদের যে অবদান, তা অস্বীকার করে বিগত সরকার মানুষকে বিভ্রান্ত করেছিল। ভাষাসৈনিক কবি আল মাহমুদ মারা যাওয়ার পর রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেওয়া হয়নি। তাই দেশের মানুষ আজ তার প্রতি সম্মান দেখিয়ে স্মৃতিচারণ করছে। সেটিকে আমরা ধারণ করে সামনে এগিয়ে যেতে চাই। একইসঙ্গে কবির প্রতি রাষ্ট্রীয় বৈষম্য নিরসনের দাবি জানাচ্ছি।’
হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি বলেন, ‘কবি আল মাহমুদ বিগত স্বৈরাচার সরকারের সময়ে অনেক অবহেলিত হয়েছেন। মৃত্যুর পর তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কবর দিতে বাধা দেওয়া হয়েছিল। আমরা কয়েকজন মিলে এখানে কবর দিয়েছিলাম। দেশের মানুষ এখন যেভাবে কবিকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন, আমরা সেই স্মৃতি ধরে রাখতে চাই। সেইসঙ্গে আল মাহমুদকে যথাযথ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দিয়ে তার লাশ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে স্থানান্তরের দাবি জানাই।’
জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি জাবেদ রহিম বিজন বলেন, ‘দেশের একজন বরেণ্য কবিকে মৃত্যুর পর যেভাবে গোপনে কবর দেওয়া হয়েছে, সেটি আমাদের কারও কাম্য ছিল না। কবিসমাজকে এভাবে আলাদা করাটাও আমাদের ঠিক হয়নি। এখন আল মাহমুদ গবেষণা কেন্দ্র ও স্মৃতি পরিষদ যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা যেন আমরা সবসময় পালন করতে পারি। কবিকে সম্মান করতে পারি, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।’
প্রসঙ্গত, কবি আল মাহমুদ ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মৌড়াইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। আল মাহমুদের প্রকৃত নাম মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ।