রবিবার থেকে ফরিদপুরে আবারও অবরোধের ঘোষণা, দক্ষিণের পথে ভোগান্তি
বাংলাদেশ

রবিবার থেকে ফরিদপুরে আবারও অবরোধের ঘোষণা, দক্ষিণের পথে ভোগান্তি

সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসে ফরিদপুর-৪ আসনের দুটি ইউনিয়নকে পার্শ্ববর্তী সংসদীয় আসনে সংযুক্ত করার প্রতিবাদে ও পুনর্বহালের দাবিতে অবরোধ-বিক্ষোভে অসহনীয় ভোগান্তিতে পড়েছেন দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার মানুষ। গত চার দিনে সকাল-সন্ধ্যা লাগাতার অবরোধে সেই চিত্র ফুটে উঠেছে। তবে আগামীকাল শুক্রবার ও শনিবার দুই দিন স্থগিতের কথা জানিয়ে আগামী রবিবার থেকে পুনরায় লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা দেন ফরিদপুর-৪ আসনের অন্তর্ভুক্ত ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সিদ্দিক মিয়া। এর আগে চতুর্থ দিন ও টানা তৃতীয় দিনেও আজ সকাল ৭টা থেকেই ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক, এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করা হয়। এ ছাড়া ঢাকা-খুলনা-বেনাপোল রেলপথ অবরোধ করা হয়। এসব সড়কে গাছের গুঁড়ি, বিদ্যুতের খুঁটি ফেলে, তাঁবু টানিয়ে ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন স্থানীয়রা। ফলে অসহনীয় ভোগান্তিতে পড়েন এসব সড়ক ও রেলপথের যাত্রীরা।

গত ৪ আগস্ট নির্বাচন কমিশন ৪৬টি সংসদীয় আসনে পরিবর্তন এনে গেজেট প্রকাশ করে। গেজেট অনুযায়ী ফরিদপুর-৪-এর অন্তর্গত ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়ন পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর-২ সংসদীয় আসনের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এর প্রতিবাদে পরের দিন শুক্রবার আকস্মিকভাবে অবরোধ করা হয়, দিনভর প্রশাসন চেষ্টা করলে অনড় থাকে বিক্ষুব্ধরা। পরে ওই দিন স্থানীয় প্রশাসনের আশ্বাসে সোমবার পর্যন্ত আলটিমেটাম দেওয়া হয়। এরপরেই মঙ্গলবার থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল-সন্ধ্যা অবরোধ করা হয়।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, এদিন মহাসড়কগুলোর দুই পাশে প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানবাহন আটকে থাকে। আটকে দেওয়া হয় জরুরি ওষুধের পরিবহনসহ খাদ্যপণ্য ও কুরিয়ার সার্ভিসের গাড়ি। এমনকি ঢাকা থেকে ফিরে আসা অ্যাম্বুলেন্সে রোগী না থাকায়ও আটকে দেয় বিক্ষুব্ধরা, অনেকে চড়াও হোন অ্যাম্বুলেন্সের চালকদের ওপর। এছাড়া জরুরি কাজে ঢাকায় যাওয়া যাত্রী ও ঢাকা থেকে দক্ষিণবঙ্গে গন্তব্যের মানুষগুলোর ভোগান্তির যেন শেষ নেই। মাইলের পর মাইল পায়ে হাঁটতে হচ্ছে তাদের, অতিরিক্ত ভাড়াও গুনতে হয় এসব যাত্রীদের।

পাবনা থেকে কাজের উদ্দেশে বরিশালে যাচ্ছিলেন মোল্যা রহিম নামে এক ব্যক্তি। অবরোধকৃত ১০ কিলোমিটার পথ পায়ে হাঁটতে হয়েছে তাকে। তিনি বলেন, ‘দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে ভেঙে ভেঙে গাড়িতে যাওয়া লাগতেছে। ৮০০ টাকা নিয়ে বের হয়েছিলাম, ৫০০ টাকা শেষ।’

জরুরি কাজে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে গিয়েছিলেন ফরিদপুর সদরের কমলাপুর উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক নিখিল চন্দ্র বিশ্বাস। ফেরার পথে ভোগান্তিতে পড়েন তিনিও। সোনালী বেগম নামে অপর এক যাত্রী আক্ষেপ করে বলেন, ‘ভাড়াও নিয়েছে বেশি, হাঁটতে হচ্ছে মাইলের পর মাইল।’

এদিকে, সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত আটকে থাকে অসংখ্য ট্রাক, লরি, কার্গো, পিকআপভ্যান। আটকে পড়া বেশিরভাগ গাড়ির চালক অবরোধের বিষয়ে জানেন না। পটুয়াখালী থেকে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের গাড়ি নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলেন জুয়েল খান। তিনি বলেন, ‘গাড়ির লোড বেশি হওয়ায় অন্য জায়গা দিয়ে যেতেও পারি নাই, বাধ্য হয়ে বসে আছি। ওনারা আন্দোলন করতেছে, আমরা ভুগতেছি। গাড়ি আটকায় রাইখ্যা এগুলো কী।’

এই সমস্যার আশু সমাধানের দাবি করে আক্ষেপ জানান পরিবহন মালিক নেতারাও। ফরিদপুর বাস মালিক সমিতির সভাপতি কামরুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, ‘অবরোধ থাকায় ফরিদপুর থেকে কোনও বাস পদ্মা সেতু হয়ে যাচ্ছে না। কয়েকদিন যাবৎ ঠিকমতো সড়কে বাস নামাতে পারি নাই। যাত্রীদের ভোগান্তির পাশাপাশি আমরাও ভোগান্তিতে আছি। দ্রুতই সমস্যার সমাধান প্রয়োজন।’

তাঁবু টানিয়ে বিক্ষোভ

জানতে চাইলে ফরিদপুর ট্রাক মালিক সমিতির নেতা ও মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি শাহিন চৌধুরী বলেন, ভাঙ্গা আমাদের মূল পয়েন্ট। এই পয়েন্ট ছাড়া বিকল্প নেই। অবরোধের কারণে আমাদের সকল গাড়িসহ তেলবাহী লরিও ঠিকমতো চলছে না। আমরা প্রধান উপদেষ্টা ও নির্বাচন কমিশনারের কাছে এ সমস্যা নিরসনে আশু হস্তক্ষেপ কামনা করি।’

রেলপথ অবরোধে ভোগান্তি বেড়ে দ্বিগুণ

এদিকে সড়কের পাশাপাশি রেলপথ অবরোধে বেড়ে যায় ভোগান্তি। আজ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভাঙ্গা কৈডুবি সদরদি এলাকার ঢাকা-খুলনা-বেনাপোলের ৮১ নম্বর রেলক্রসিংয়ে গাছের গুঁড়ি ফেলে ও আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করা হয়। এতে ঢাকাগামী ট্রেন আটকে যাওয়ায় দিনভর ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।

স্কুল বন্ধ রেখে সড়কে শিশুরা

এদিকে বিভিন্ন সড়কে লাঠি হাতে দেখা যায় শিশুদেরও। যাদের বয়স ৬ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে। সকাল ১০টায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাধবপুর এলাকায় কথা হয় এমন কয়েকজন শিশুর সঙ্গে। তাদের মধ্যে কেউ হামিরদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, কেউ আবার হামিরদি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তারা জানায়- আন্দোলন হচ্ছে তাই স্কুলে যাইনি, ক্লাসও হয় না।

অপরদিকে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধের ঘোষণা দিলেও আগামীকাল শুক্রবার ও শনিবার স্থগিত করা হয়েছে। আলগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সিদ্দিকুর রহমান ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের অংশ হিসেবে এবং পবিত্র জুমার দিনে মানুষের ভোগান্তি কমাতে শুক্র-শনি বন্ধ থাকবে। এই দুই দিন আমরা সরকার ও নির্বাচন কমিশনের দিকে চেয়ে থাকবো। আমাদের দাবি আদায় না হলে রবিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সড়ক ও রেলপথ অবরোধ চলবে।’

Source link

Related posts

কবরে শোয়াতে গিয়েই কেঁদে উঠলো নবজাতক!

News Desk

‘লন্ডনে বসে ইংলিশ স্যুপ খেয়ে বাংলাদেশের মানুষকে হত্যার কৌশল শেখাচ্ছেন তারেক জিয়া’

News Desk

শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুটে যাত্রীর চাপ বেড়েছে

News Desk

Leave a Comment