জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বাসভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে রংপুরে। বৃহস্পতিবার (২৮ মে) রাতে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ও ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’র (এনসিপি) শতাধিক নেতাকর্মী এ হামলা চালায় বলে জানা গেছে। এতে অন্তত ৪ জন আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় সূত্রে জানা যায়, বিকেলে ঢাকা থেকে রংপুরে আসেন জিএম কাদের। তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তোলেন এবং জাতীয় পার্টিকে পর্যাপ্ত রাজনৈতিক সুযোগ না দেওয়ার অভিযোগ করেন।
এর প্রতিবাদে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান ও বিক্ষোভ শুরু করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। তারা জিএম কাদেরকে গ্রেফতার এবং জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি জানায়।
রাত ৮টার দিকে বিক্ষোভকারীরা মিছিল সহকারে সেনপাড়া এলাকায় জিএম কাদেরের পৈতৃক বাসভবনের দিকে অগ্রসর হয়। একপর্যায়ে তারা বাসভবনের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে, এতে জানালার কাচ ভেঙে যায়। তখন জিএম কাদের নিজ বাসায় অবস্থান করছিলেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
বিক্ষুব্ধরা বাসার সামনে থাকা দুটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। মুহূর্তেই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে হামলাকারীরা সেনপাড়া মোড়ে ফিরে গিয়ে স্লোগান দিতে থাকে।
হামলার খবর পেয়ে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা সেন্ট্রাল রোডে পার্টি কার্যালয় থেকে লাঠি হাতে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন এবং এলাকায় নিয়ন্ত্রণ নেন। জাপার মহানগর সভাপতি ও সাবেক সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির নেতাকর্মীদের নিয়ে জিএম কাদেরের বাসার সামনে অবস্থান নেন।
অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা এক কিলোমিটার দূরে টাউন হল চত্বরে জড়ো হয়। সেখানে পাল্টা কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়।
জিএম কাদেরের বাসায় অবস্থানরত যুব সংহতির সভাপতি নাজিম বলেন, ‘হামলার সময় জিএম কাদের বাসায় ছিলেন। তার নিরাপত্তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। এটা সম্পূর্ণ পরিকল্পিত হামলা।’
জাপা নেতা মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ‘প্রশাসন একেবারেই নিষ্ক্রিয় ছিল। এ ধরনের ঘটনায় সরকার ও প্রশাসনের নীরবতা প্রশ্নবিদ্ধ।’
এস এম ইয়াসির বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, এনসিপি ও কিছু উগ্র দলের কর্মীরা পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে। আমরা দলীয়ভাবে কঠোর পদক্ষেপ নেবো।’
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (রাত ১০টা ১৫ মিনিট) জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা জিএম কাদেরের বাসার সামনে অবস্থান নিয়েছেন। পুলিশ কিছুটা দূরে অবস্থান করছে। ঘটনাস্থলে থাকা কোতোয়ালি থানার ওসি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা নাহিদ খন্দকার অভিযোগ করেছেন, ‘জাপার কর্মীরা আমাদের কর্মসূচিতে হামলা করেছে। আমরা সাধারণ ছাত্র-জনতাকে টাউন হলে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
এই ঘটনায় রংপুরের সাধারণ মানুষ নতুন করে সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন। শহরের বিভিন্ন এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে, প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তৎপর রয়েছে।